সোহেল রিগ্যান ও তৌহিদুল ইসলাম সরেজমিনে চরঈশ্বর বাংলা বাজার থেকে: নোয়াখালী জেলার সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত একমাত্র বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। আয়তনে এটি একটি জেলা সমতুল্য। জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌযান ছাড়া না থাকায় এই দ্বীপের অধিবাসীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয় কর্তা ব্যক্তি ও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে এই বেহাল দূর অবস্থা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না এই জনপদের অধিবাসীরা। মুক্তি মিলছে না দ্বীপে বসবাস করা প্রায় ৬ লক্ষাধিক অধিবাসীদের।
হাতিয়া দ্বীপ উপজেলায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় আড়াইশ বছরের পূর্ব থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। প্রশাসনিক তথ্য মতে জানা যায়, এই দ্বীপের আয়তন ২১০০ বর্গকিলোমিটারের। ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নোয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলাটি৷ বর্তমানে মেঘনা ও শাহবাজপুর নদীর তীব্র ভাঙনে দ্বীপের আয়তন তলানিতে। সুখচর, নলচিরা নামক দু’টি ইউনিয়ন ভেঙে প্রায় শেষ পর্যায়ে। চরঈশ্বরও ভেঙে গেছে তৃতীয়াংশ। চতুর্দিক থেকে বিলীন হচ্ছে হাতিয়া। তবে মূল ভূখণ্ড ভেঙ্গে জেগে উঠেছে অসংখ্য অস্থায়ী চর। এসব চরে ইতিমধ্যে মানুষ বসবাস করা শুরু করে দিয়েছে ।
স্থানীয় সূত্র মতে জানা যায় যে, হাতিয়া মূল ভূখণ্ড মেঘনা শাহবাজপুর নদীর ভাঙনের ফলে শেষ ভরসা বসতভিটা বিলীন হওয়ায় স্থানীয় হিন্দু জেলে পল্লীর অধিবাসীরা দিশেহারা হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ছুটছে। প্রতিনিয়ত হাতিয়াতে বসবাস করা হিন্দুরা ছাড়ছে বাংলাদেশ।
হাতিয়ার মানুষের প্রধান জীবিকা নির্বাহ কৃষি- পশুপালন নির্ভর হলেও এই অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জড়িত। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের চেয়ে হিন্দুরা মৎস্য আহরণে বেশি জড়িত ছিলো বলে জানা যায়।
সরেজমিনে ৫নং চরঈশ্বর ইউনিয়ন অর্ন্তগত বাংলাবাজারের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ঘুরে দেখা যায়, এই অঞ্চলের হিন্দু পল্লীর গ্রামগুলো শাহবাজপুর নদী তথা বঙ্গোপসাগরের গর্ভে বিলীন। জেলে পল্লীর অধিবাসীদের রেখে যাওয়া বসতভিটার কিছু স্মৃতিচারণ ছাড়া কিছু চোখেই পড়েনি। একসময় বাংলাবাজার জুড়ে ছিলো হিন্দু ও জেলেদের বসবাস। মূলত হাতিয়া ভূখণ্ড ভাঙনের ফলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে জেলে পল্লীর অধিবাসীরা নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে ভিনদেশ ভারতের মাটিতে পাড়ি জমিয়েছে৷ ৫নং চরঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত বাংলাবাজার উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ঘুরে দেখা গেছে সর্বনাশা মেঘনা, শাহবাজপুর ও বঙ্গোপসাগরের গর্জন। সর্বনাশা মেঘনা, শাহবাজপুর বঙ্গোপসাগর একেবারেই মুছে দিবে হাতিয়া দ্বীপে আড়াইশ বছরের অধিক সময় ধরে বসবাস করা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়দের।
৫ নং চরঈশ্বর ইউনিয়ন অন্তর্গত পন্ডিত গ্রামের জেলে জহরলাল দাস ও ইলিশ ধরার জাল তৈরি করার কারিগর মোসলেম উদ্দিন জেলে পল্লীর অধিবাসীরা ভারত চলে যাওয়া সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জহরলাল দাস জানান, বিভিন্ন সময় নদীতে সমসাময়িক মাছ ধরা নিষিদ্ধ করলেও আমাদের রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও জেলেদের কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা সরকারি ভাবে করা হয় না। আমরা খুব অসহায় গরীব জেলে, পরিবার পরিজন নিয়ে খুব মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। এইভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদেরকেও নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে পারি দিতে হবে।