কুকি চিন’রা মায়ানমার ও মিজোরামে জো জাতি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বম সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে নাথান বম। এই কেএনএফ গেরিলা ট্রেনিং করে এবং খ্রিস্টান কমিউনিটি ও ইহুদি নাসারকে ব্যবহার করে মিজোরাম আইজল বা কাচিন লাগোয়া অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ধীরে ধীরে তাদেরকে এনজিও, আইএনজি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ইউএস ইন্ধন যোগায়। কেএনএফ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে অথাৎ গত বছরের প্রথম দিক থেকে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। এরা খসড়া ম্যাপ তৈরি করেছে, মুদ্রা তৈরি করেছে, তাদের রয়েছে সামরিক পোষাক, নারী সশস্ত্র সদস্য। অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারী অস্ত্র পরিচালনার। ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা সংক্ষেপে আইইডি রয়েছে। ঐ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর অপপ্রয়াসে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে ভারতের মিজোরামের আইজল ও কাচিন থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে গেরিলা বাহিনী গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। তারা বান্দরবানের দুর্গম, ক্রেমারি, বড়মদক, জারুলছড়ি, সুংসং পাড়া, বাকলাইপাড়া, রনিংপাড়া সহ এ অঞ্চলের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কমান্ডো বা গেরিলা পরিচালনা করছে।
আইইডি পুঁতে রেখে সাধারণ জনগণ খুমি, ম্রো, তংচংগা, ত্রিপুরা, লুসাই, পাংখোয়া, মারমাকে হত্যা করছে। দুর্গম এলাকার এসকল পাহাড়ি জাতিস্বত্বার প্রধান জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে পাহাড় থেকে কাঠ, বাঁশ সংগ্রহ৷ তারা যখন পাহাড়ে কাঠ, বাঁশ কাটতে যাচ্ছে তখন বোমা বিস্ফোরিত হয়ে মারা যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই সম্প্রদায় গুলোর নিরীহ লোকজনকে সরাসরি কেএনএফ এ যোগদানের জন্য বাধ্য করছে। কেউ রাজি না হলে তাকে জীবন দিতে হচ্ছে।
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন কে চিকিৎসা সেবা দিতে যাওয়ার পথিমধ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। বর্ডার প্রজেক্টে দায়িত্বরত অবঃ সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার এবং এই কাজে সম্পৃক্ত ঠিকাদার ও কর্মরত ব্যক্তিদের অপহরণ করে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষিতে তারা কোণঠাসা হয়ে গেছে। এখন চলছে চরম আর্থিক সঙ্কট। আর্থিক সংকট থেকে বের হতে গেরিলা কায়দায় আইইডি পুঁতে রেখে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নিজেদের স্বগোত্রীয় যারা খাবার-দাবার, পানি ও রসদ সরবরাহ করতেছে না তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করতেছে।
রাষ্ট্র বাহিনীকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এবং আলাদা কুকিল্যান্ড গঠনে বড় বাধা মনে হওয়াতে একই কায়দায় গত ১৬ মে সেনাবাহিনীর দুইজন সৈনিকে হত্যা করেছে। শহীদ সৈনিকরা হলেন, মো. আলতাফ আহম্মদ ও মো. তৌহিদ।
কেএনএফ এর অপরাধ, ষড়যন্ত্র ও অব্যাহত চাঁদাবাজিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে; পর্যটন শিল্প ধ্বস নেমেছে; মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে এবং অর্থনৈতিক চরম সংকটের কারণে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে; প্রশাসনের লোকজন অন্যান্য উপজেলায় যাতায়াত করতে পারছে না; এদের মদদপুষ্ট যারাই হোক না কেন এদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড় দিবে না; কেএনএফ এর মত বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নির্মূলে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এদেশের এক ইঞ্চি পরিমাণ মাটিও ছাড় দিবেনা৷
ভৌগোলিকগত ভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক মুক্ত দেশ এবং সম্প্রীতির বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা উগ্র বম এর কোনই স্থান হবে না।
KTC (কুকিচিন ট্রেনিং সেন্টার) বা দুর্গম এলাকায় যেখানে তারা অবস্থান করছে সেখানে তারা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে যেখানে তাদের থাকার তথ্য পাচ্ছে সেখানে যাচ্ছে৷ তাদেরকে ধরার জন্য অপারেশন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ কিন্তু এই দেশদ্রোহী নাথান বম এবং কেএনএফ কে সমূলে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করা হোক এই হচ্ছে জনগণের আশা-প্রত্যাশা। জনগণের অকুণ্ঠ ঘৃণা, অসমর্থন, এবং রোষানলে পড়ে তারা এখন দিশেহারা। দিককে দিক ছুটাছুটি করছে।
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এখন চাঁদাবাজি করতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণের খাদ্য লুটপাট করার চেষ্টা করছে। সংগঠনে উপজাতি তরুণদের যুক্ত হতে বলছে। পাহাড়ের পটভূমি তারা ভালো জানে এবং ভালো বুঝে, তাজিংডং এর মত পাহাড়ের পাদদেশে তারা বিচরণ করতো এখন আস্তে আস্তে তারা এখন সেখান থেকেও সরে যাচ্ছে।
ত্রিদেশীয় সীমান্ত লাগোয়া সরে গেছে৷ স্বগোত্রীয় সম্প্রদায় আস্তে আস্তে বয়কট করেছে।
কেএনএফ ও তাদের মদদদাতাদের নিকট বার্তা হচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিহার করুন না হয় পরিণাম খুব খারাপ হবে। ভবিষ্যতে আপনারা এদেশ থেকে বিতাড়িত হবেন৷ বাঙ্গালী জাতিস্বত্বার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড় দিবনা। যদি বাঁচতে চান এখনি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।
কেএনএফ যে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি জনমনে ছড়িয়ে দিচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদীত। তারা বলছে সেনাবাহিনী সাধারণ পাহাড়িদের ব্যবহার করছে প্রকতৃ সত্য হচ্ছে সেনাবাহিনী কোনপ্রকার সাধারণ পাহাড়িকে ব্যবহার করেনি। সেনাবাহিনী অভিযানে সহযোগী হিসেবে পুলিশ, আনসার, বিজিবি’র সহযোগিতা নিচ্ছে। বহনে সহযোগিতার জন্য ভিডিপিকে ব্যবহার করছে। এদেশে এতো বাহিনী থাকতে সাধারণ মানুষকে অভিযানে ব্যবহার প্রশ্নেই আসেনা। জনমনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করার জন্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে তা এখন সবার কাছে খোলাসা৷