উপজাতিরা বা কিছু তথাকথিত বাম বুদ্ধিজীবীরা কথায় কথায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে সেটেলার বলে অবহিত করে।
এবার বুঝতে হবে সেটেলারের সংজ্ঞা!
সেটেলার বলতে বুঝায় যারা বাহিরের দেশ থেকে বিভিন্ন কারণে আশ্রয় গ্রহণ করেন, যেমন- রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সেটেলার।
এবার আসুন পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীরা বাংলাদেশেরই অধিবাসী আর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই এক-দশমাংশ। তার মানে আমরা যাঁরা বাঙ্গালীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করি আমরা এদেশেরই ভূমিপুত্র।
আমরা কিন্তু অন্যকোন জাতি গোষ্ঠীকে সেটেলার বলে ছোট করতে চাই না কিন্তু ইতিহাস কি বলে?
ইতিহাস পড়ে জানা যায় যে- পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতি গোষ্ঠী যেমন- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গা, ম্রো, লুসাই, কুকি সহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীরা বাংলাদেশের বাহির থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মতোই আশ্রয় নিয়েছিলো,তারা আগমন করেছিলেন – লাউস,কম্বোডিয়া, অরুণাচল, মিজোরাম, ত্রিপুরা, আসাম,মিয়ানমার , চীন,ভারত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে।
তারপরও আমরা কাউকেই ছোট করে ভিন্ন ল্যাংগুয়েজ ব্যাবহার করে সম্প্রীতি নষ্ট করছিনা, কিন্তু পক্ষান্তরে তারাই এই সকল ভাষা ব্যাবহার করছে, শুধু তাই নয় তারা আজ তাদের নিজেদের স্বার্থেই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খুন,গুম,চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে।
জে এস এস, ইউপিডিএফ, কুকিচীন সহ আজ তারা প্রায় ৬টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপে কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।
এই সমস্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো কতৃক প্রায়ই চল্লিশ হাজারের মতো বাঙ্গালীকে তারা হত্যা করেছে তাদের এই হত্যাকান্ড থেকে তাদের স্ব-জাতিরাও রেহাই পায়নি।
তারা আমাদের গর্বীত সেনাবাহিনী সহ পুলিশ,আনসার,বিডিআর বর্তমান বিজিবি, বিডিপি সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও নির্মম ভাবে খুন,গুম,অপহরণ করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি করেছিলেন।
আজ চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্য থেকে ৪৮ টি ধারাই সরকার বাস্তবায়ন করেছেন বাকী গুলোও বাস্তবায়ন করবেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বার-বারই বলা হচ্ছে।
চুক্তির আজ পঁচিশ বছর পার হতে চলেছে যে শান্তির আশায় সরকার মহোদয় তৎকালীন সময়ে চুক্তি করেছিলেন তা কি সফল হয়েছে? কারা সেই চুক্তির মূল শর্তই ভঙ্গ করলো?
সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ২ টি শর্ত ছিলো খুনি সন্তু লারমা বাস্তবায়ন করবেন,তার একটি হলো তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে অস্ত্র জমা দিবে এবং অপরটি হলো খুন,গুম,অপহরণ, চাঁদাবাজির পথ পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবেন।
আজ পঁচিশ বছরেও তারা তাদের ২ টি শর্ত পুরোন করতে ব্যার্থ হয়েছে,বরং তারা আজ প্রায়ই ৬ টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনে বিভক্ত হয়ে বছরে প্রায়ই ১ হাজার/ ১২ শত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে।
বিগত কয়েক মাসেই এই সমস্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন তথা কেএনএফ কতৃক আমাদের গর্বীত ৫ জন সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট যে – সরকার চিরুনী অভিযানের মাধ্যমে তামিল টাইগারদের মতো এই সমস্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোকে নির্মূল করতে হবে এবং আমাদেরকে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসতেই হবে, অন্যথায় এর চরম মূল্য দিতে হবে একদিন বাংলাদেশকে।
শিক্ষা, চাকুরী, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই হবে।
তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি, সম্প্রীতি,উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি।
লেখক: মো. আলমগীর কবির
মহাসচিব
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ
কেন্দ্রীয় কার্যানির্বাহী কমিটি।