বোমাং সার্কেল চীপ উ চ প্রু বোমাংগ্রী বান্দরবান শহরের জাদিপাড়ায় নিজস্ব বাসভবনে বসবাস করেন। বাঙ্গালীদের শিক্ষা-দীক্ষা, সরকারি চাকরি-বাকরি ও জায়গা জমি ক্রয়-বিক্রয় থেকে বঞ্চিত করতে বোমাং সার্কেল চীপ তথা ঢাল-তলোয়ার বিহীন রাজা একের পর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে৷ তার কথিত রাজা সনদের নামে বাঙ্গালীদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তাগিদ দেখিয়ে হয়রানি করে আসছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হওয়া ছাড়া আর কোথাও সার্কেল সনদের প্রয়োজনীতার কথা বলা নেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্তে। বাসিন্দা সনদ কিংবা রাজা সনদ বাঙ্গালীদের জন্য বাধ্যগত এমন কোন এখতিয়ার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উল্লেখ নেই৷ বর্তমানে বাঙ্গালীদের হয়রানি করার জন্য সরকারি চাকরি, শিক্ষা, জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয় ও বিভিন্ন কাজে সার্কেল চীপ সনদ বা কথিত রাজা সনদের বাধ্যগতা দেখিয়ে বান্দরবানের বাঙ্গালীদের হয়রানি করাসহ মৌলিক অধিকার হরণ করছে বোমাং সার্কেল চীপ উ চ প্রু বোমাংগ্রী। বাঙ্গালীদের মধ্যে রটিয়ে দেওয়া হয়েছে তথাকথিত রাজার সনদ ছাড়া শিক্ষা, চাকরি ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যাবেনা এই সনদ বাধ্যগত! তাই বাঙ্গালীরা এই সনদ সংগ্রহ করতে দৌড়ের উপরে আছেন। আরো শোনা যাচ্ছে ডিসি’র স্থানীয় বাসিন্দা সনদ নিতে সার্কেল চীপ সনদ এবং হেডম্যান রিপোর্ট বাধ্যগত করেছে। বিষয়টি সম্পুর্ন অসাংবিধানিক। পূর্বে বাঙ্গালীরা ডিসি সনদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পূর্ণ করতেন। এখন তথাকথিত রাজার সনদ বাধ্যকরার কারণে বাঙ্গালীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে সার্কেল চীপ সনদ বা তথাকথিত রাজা সনদ পাওয়া মানেই সোনার হরিণ পাওয়ার মত। শুধুমাত্র মোটা অংকের টাকা দিলে মেলে এই সনদ। এই সনদ বাঙ্গালীদের সংগ্রহ করতে যেতে হয় কঠিন অনেক শর্তের মধ্য দিয়েই। এমন সব শর্ত ও কাগজপত্র চাওয়া হয় যা একজন ভূমিহীন বাঙ্গালী বা সাধারণ বাঙ্গালীর পক্ষে কোনভাবেই যোগাড় করা সম্ভব হয়না। নিজ নামে বা পিতার নামে সম্পত্তি না থাকলে এই সনদ পা-ও-য়া যায়না। সম্পত্তি দাদার নামে এখনো পিতার নামে বন্টন বা নামজারি হয়নি এক্ষেত্রে নাতি এই সনদ থেকে বঞ্চিত। পাহাড়িরা প্রথাগত অধিকারে শর্তহীন ভাবে ডিসি সনদ ও তথাকথিত রাজার সনদ পেলেও এক্ষেত্রে কঠিন শর্তের কারণে বাঙ্গালীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
উক্ত সনদের জন্য যে শর্ত গুলো বোমাং সার্কেল চীপ প্রযোজ্য করেছে
সংযুক্ত হিসেবে তা তুলে ধরা হলো-
(১) আবেদনকারীর সম্প্রতি তোলা এক কপি পি,পি সাইজের ছবি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত।
(২) মৌজা হেডম্যান কর্তৃক প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দা সনদের ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
৩। সংশ্লিষ্ট পৌরসভা মেয়র/ ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয়তা সনদের ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
(৪) আবেদনকারীর জন্য নিবন্ধনের ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
(৫)আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
(৬) হালসনের জমাবন্দীর ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃর্ক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
(৭) হালসনের খাজনার দাখিলা ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত।
(৮) পিতা-মাতার নামীয় জমি ক্ষেত্রে তাঁহার স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র ফটোকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
(৯) পিতা ৩ মাতার আই,ডি কার্ড, পিতা-মাতা মৃত হলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত উত্তরাধিকার সনদ এর ফটোকপি ১২ শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত (তবে সংশ্লিষ্ট আই.ডি ফার্ড বান্দরবান পার্বত্য বোলার নিবন্ধন হওয়া আবশ্যক)।
(১০) শিক্ষাগত সনদ নাম শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে (থাকিলে)।
(১১) R হোল্ডিং এর ক্ষেত্রে যন্দোবস্তী মামলার সবলকপি ১ম শ্রেণী অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত।
(১২) বিঃ দ্রঃ- আবেদন জমা ও সনদপত্র সংগ্রহের সময় আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকিতে হইবে।
একটা অসাংবিধানিক সনদের জন্য একজন মানুষের এতগুলো কাগজ জোগাড় করতে পায়ের জুতা ক্ষয় করে ফেলতে হয়! কোন আইনের ভিত্তি বোমাং চীপ উক্ত কাগজপত্র সত্যায়িত চাচ্ছেন তার ব্যাখা জানান জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি! তার বিরুদ্ধে এর আগে আদিবাসী শব্দ যুক্ত করে সনদ প্রদানের কথিত অভিযোগ রয়েছে। যদিও পূর্বের বোমাং চীপ মংসেপ্রু চৌধুরী নিজেদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন এবং তাদের পূর্বের আদিনিবাস বার্মা বলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান ১৭ তম সার্কেল চীপ উগ্র ও সাম্প্রদায়িক এবং বাঙ্গালী বিদ্বেষী বলে শোনা যাচ্ছে।
পার্বত্য ব্যতীত বাংলাদেশের ৬১ জেলা কিংবা পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এমন শর্ত বা নিয়ম আছে! পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙ্গালীরা যাতে কোনভাবেই অগ্রসর হতে না পারে সেজন্যে তথাকথিত সনদের দোহাই দিয়ে বাঙ্গালীদের ভূমি-ক্রয় বিক্রয় এবং শিক্ষা ও চাকরিসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনে কোথাও বলা নেই রাজা শব্দ। বলা আছে সার্কেল চীপ । অথচ তারা নিজেদের রাজা পরিচয় বহন করছে!
হিল ব্লগার ফোরাম বলছে, বান্দরবান বোমাং সার্কেল অবস্থিত। ১১৫ টি মৌজা নিয়ে বোমাং সার্কেল গঠিত। তিনটি সার্কেল এর মধ্যে এটি একটি সার্কেল। সম্পূর্ণ বান্দরবান জেলা এই সার্কেলের আওতাভুক্ত। বোমাং তথাকথিত রাজপরিবারের সদস্যরা মারমা সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তারা রাগ্রাইসা নামে পরিচিত। বোমাং সার্কেলের অধিকাংশ বাসিন্দারা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে দক্ষিণে বসতি স্থাপন করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বা তথাকথিত হিল ম্যানুয়েল অনুযায়ী সার্কেল চীপ জেলার প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করেন এবং কাউন্সিলের সুপারিশ অনুসারে তিনি ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন (বিধ নং-৩৯)। তিনি মৌজা হেডম্যান নিয়োগ ও অপসারণে ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যদিও ডেপুটি কমিশনার তাঁর পরামর্শ মেনে নিতে বাধ্য নন। তবে তাঁর পরামর্শ সর্বোচ্চ বিবেচনার দাবি রাখে (বিধি নং ৪৮)। এই থেকে স্পষ্ট যে, সার্কেল চীপ ব্রিটিশ প্রথাগত নিয়মে জেলা প্রশাসকের একজন পরামর্শক এবং কর্মচারীর মত। এর বাহিরে কিছু নয়। সার্কেল চীপ প্রথার সাংবিধানিক কোনো বৈধতা নেই। বাংলাদেশ সংবিধানে এর কোন ঠাঁই নেই। বাসিন্দা সনদ বা রাজার সদন বা প্রত্যায়ন দেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীপের নেই৷ হেডম্যান প্রতিবেদন বা রিপোর্টও অসাংবিধানিক। তারপরও তারা অসাংবিধানিক ভাবে স্থানীয় বাসিন্দা সদন বা তথাকথিত রাজার সনদ মোটা অংকে টাকা ও কঠিন শর্ত দিয়ে প্রদান করে থাকে।
এদিকে অসাংবিধানিক হেডম্যান রিপোর্ট বা সার্কেল চীপ সনদ ছাড়া ডিসিরা বাঙ্গালীদের স্থানীয় বাসিন্দা সনদ দিতে চায়না। আর হেডম্যান রিপোর্ট ও স্থানীয় বাসিন্দা সনদ ছাড়া ভূমি বেচা-কেনা করা যায়না। দেশের প্রচলিত ভূমি আইন বা বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী তা লঙ্ঘন। এসুযোগ কে কাজে লাগিয়ে উপজাতি হেডম্যান ও সার্কেল চীপরা বাঙ্গালীদের হয়রানি করার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই বাঙ্গালীদের দাবি অসাংবিধানিক হেডম্যান রিপোর্ট ও সার্কেল চীপ সদন বাতিল করার।