পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী নির্মূলে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

0
6

হান্নান সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম।

আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম। আধিপত্যের লড়াইয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে হরহামেশাই ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও খুনাখুনির মত ঘটনা। তবে নতুন গর্জে ওঠা কেএনএফ এর তৎপরতা শুধু এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেই প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এরা বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসন বা পৃথক করে কুকিল্যাণ্ড নামক রাষ্ট্র গঠনের গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। তাদের সশস্ত্র তৎপরতা পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৯৭ সনের চুক্তির আগের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন পার্বত্য এলাকা ছিল এক ভয়ের জনপদ। এটিই বড় চিন্তার বিষয়। কাজেই এ ধরনের সংগঠনগুলো কঠোরভাবে দমন করতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সেজন্য পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী নির্মূলে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেজ্ঞরা মনে করেন।

স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও একাধিক তথ্য সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান তথা পার্বত্য এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মূলত ছয়টি সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন। এরা হলো- জেএসএস সন্তু, জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ প্রসিত, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, এমএলপি ও কেএনএফ। এই সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক শাখার পাশাপাশি রয়েছে সশস্ত্র শাখা। সদস্য সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ হাজারের অধিক। রয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা একটি রাষ্ট্রের যে, খসড়া সংবিধান, ম্যাপ, মুদ্রা ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো থাকে, তার সবকিছু প্রণয়ন করেছে। যা দুঃখজনক ও বিস্ময়কর।

এই সংগঠনগুলোই চাঁদাবাজিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক কিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের চাঁদাবাজি ও অপহরণ বাণিজ্যে এখানকার জনসাধারণ অতিষ্ঠ৷ বলা যায় তাদের রাজত্ব কায়েম চলে। এখানে তাদের কথার বাহিরে কিছু হয়না।

অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে আবারো সেনা মোতায়েন জরুরি বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে তারা এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পূর্বেকার মত বিদ্যমান আছে। এত এতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও রাষ্ট্রে বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা কতটাই যুক্তিযুক্ত? একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে থাকা কতটা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল?? এই প্রশ্নের উত্তর আশা করি আমাদের সুশীল, প্রগতিশীল ও বিশিষ্টজনরা এড়িয়ে যাবেন না। অধিকার বা আত্মরক্ষা নামে রাষ্ট্র, বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনভাবেই অস্ত্র হাতে নিতে পারে না। রাষ্ট্র উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এবং উদার নীতি গ্রহণ করেছে। যার প্রমাণ ৯৭’ সনের চুক্তি৷ রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীকে উপেক্ষা করে পার্বত্য চুক্তিতে একতরফাভাবে উপজাতীয়দের প্রাধান্য ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও তথাকথিত অধিকার দাবি করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা একটি বিশ্বাসঘাতকতা ও বৈরী আচরণের শামিল।

তাই বাস্তবতার নিরিখে বলতে হয়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর অন্যতম প্রাসঙ্গিক কারণ, সেনাবাহিনী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার পাশাপাশি শান্তি-সস্প্রীতি, উন্নয়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনহিতকর কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখছে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে। সেনাবাহিনীর এই আত্মত্যাগ ও বিসর্জন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ সারাজীবন শ্রদ্বার সাথে স্মরণ করবে। hbf এর এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে ৮জন নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে। এখানে বাঙ্গালীরা অধিকার বঞ্চিত আর পাহাড়ীরা স্বজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনের চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিপীড়ন, জুলুম ও অত্যাচারের শিকার। এখানে সন্ত্রাসীরা এতটাই শক্তিসাধন করেছে যা এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাধীনতা ও অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলছে৷ এর থেকে একমাত্র পরিক্রাণের পথ হলো সেনাবাহিনী দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে ফেলা অথাৎ নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রাখা৷ পার্বত্য চুক্তি ছিলো রাজনৈতিক উপায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ নিরসনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত শান্তি স্থাপন করা। এজন্য সরকার সব প্রচেষ্ঠা করেছে। তাদের সমস্ত দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছে। বলাবাহুল্য, রাজনৈতিক উপায়ে যেহেতু সমস্যা চিরতরে সমাধান হয়নি সেহেতু সামরিক উপায়ে হাঁটা হবে একমাত্র চিরস্থায়ী সমাধান। প্রশ্ন আসতে পারে পাহাড়ে সেনাবাহিনী এতদিন ধরে কী করেছে? কিন্তু তাদের এটা জেনে রাখা উচিত পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি কতটুকু? সেনাবাহিনী পাহাড়ে পূর্বের সে ক্ষমতাবলে নেই৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রশাসন সেনাবাহিনীর আওতাধীন নয়। সেনাবাহিনীর নেই গ্রেফতারি বা বিচারিক ক্ষমতা। সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে প্রতিয়মান হয়। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিস্থিতি সমাধানে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই।

আগের পোস্টজেএসএস সন্ত্রাসী কর্তৃক ভোটারদের চাপ দেওয়ায় বরকলে নির্বাচন বর্জন করেন সন্তোষ কুমার।
পরের পোস্টকেএনএফ অসহায় নিরীহ লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে এতদিন তাদের সাথে ওঠাবসা করেছিল।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন