খায়রুল বশর, খাগড়াছড়ি:
পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কত বাঙ্গালীর রক্ত ঝরলে টনক নড়বে? পাহাড় থেকে বাঙ্গালীদের সরিয়ে নিতে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বাঙ্গালীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও জুলুম অত্যাচার করে আসছে।
বাঙ্গালীদের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন ও অত্যাচারের প্রমাণ মিলেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ড মুসলিম পাড়ায়।
স্থানীয়রা জানান, বাঙ্গালীরা ১৯৭৯/৮০/৮১ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকার মত নিয়মিত তাইন্দং ইউনিয়নে দুর্গম গ্রামগুলোতে বসবাস করে আসছে। সরকার বন্দোবস্ত দেওয়া রেকর্ডীয় ভূমিগুলোতে যখন বাঙ্গালীরা চাষাবাদ কিংবা বসতি স্থাপন করতে যায় ঠিক তখনই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করে স্বায়ত্তশাসন দাবিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা ইউপিডিএফ হামলে পড়ে। প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে সন্ত্রাসবাদ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ইউপিডিএফ নৃশংস ও মধ্যযুগীয় কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা শুরু করে। ইউপিডিএফ বিগতকয়েক বছর ধরে বাঙ্গালীদের মুসলিম পাড়া ও সরকার বন্দোবস্ত দেওয়া ভূমি থেকে সমতলে সরে যেতে হুমকি প্রদানসহ হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই কয়েক বছরে ইউপিডিএফ এর হামলায় অন্তত দুই শতাধিক বাঙ্গালী আহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার বাঙ্গালী এবং সমতলে ভয়ে পালিয়ে গেছে অনেক বাঙ্গালী পরিবার৷
স্থানীয় অধিবাসী বরাত জানা যায়, অদ্য মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে কয়েকজন বাঙ্গালী কৃষক মুসলিম পাড়ায় কাজের লোক নিয়ে রেকর্ডীয় ক্ষেত খামারে চাষাবাদ করতে গেলে তাদের উপর ইউপিডিএফ অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে নৃশংসভাবে এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা করে। এই হামলায় বাঙ্গালী কৃষক এবং কাজে নিয়োজিত লোকসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউপিডিএফ এর হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণের সময় বাঙ্গালী কৃষকদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়। ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের উদ্ধারে। দুই ঘন্টাব্যাপী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালীদের উপর দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করেন। বেধড়ক মারধর করার সময় ইউপিডিএফ হুমকি দিয়ে বলেন, “তোরা বাঙ্গালী এই জায়গা ছেড়ে দ্রুত সমতলে চলে যাবি, তোরা যদি এই জায়গাতে আর আসিস গুলি করে লাশ গুম করে ফেলবো।”
ইউপিডিএফ এর হামলার পর আহত বাঙ্গালীরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতাল ভর্তি হন। হাসপাতালের ফ্লোরে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে বাঙ্গালীদের। আহত বাঙ্গালীদের শরীরে হামলার আঘাতের অনেক দাগ রয়েছে। পুরো শরীরে যেনো নির্যাতনের চিত্র। নিরপরাধ বাঙ্গালীদের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলার ঘটনা সর্বত্র নিন্দার ঝড় বইছে। ইউপিডিএফ প্রসিত সন্ত্রাসী গ্রুপ এই নৃশংস ও অমানবিক হামলার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, পাহাড়ে তারা বাঙ্গালীর উপস্থিতি মেনে নিবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালী শূন্য করতে তারা পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন স্থানে জোরপূর্বক বাঙ্গালী ভূমি বেদখল করে আসছে। অনেক বাঙ্গালীকে বিতাড়িত করছে এবং বাঙ্গালীকে পাহাড় থেকে সরিয়ে নিতে হামলা, অপহরণ ও খুন-গুম করে আসছে।