গত দুই দিন খাগড়াছড়ি কী ঘটেছিল। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মং চাক ত্রিপুরা বিস্তারিত জনসাধারণের অবগতির জন্য তুলে ধরেছেন৷ তা পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো-
মং চাক ত্রিপুরা: দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ির ঘটনাটাকে নিয়ে সবাই জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে কিন্তু সত্যিটা কেউ বলছে না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কারোরই কাম্য নয়, কিন্তু সত্যিটা জানার অধিকার সবারই আছে। সত্যিকারের ঘটনাটা হল।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ ভোর সাড়ে ৪ টায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় একটি মটরসাইকেল চুরির বিষয়কে কেন্দ্র করে মোঃ মামুন (৩০) নামক এক বাঙ্গালী কে কিছু উপজাতি নির্যাতন করে। পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারণ তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিয়ে বাঙ্গালীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং গতকালই খাগড়াছড়ি, বাঘাইহাট, মহালছড়ি, এবং দীঘিনালা সহ কিছু স্থানে বাঙ্গালী সম্প্রদায় মিছিল করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়কে বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসার জন্য এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেষণা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকেল সাড়ে ৩ টায় বাঙ্গালি সম্প্রদায় বোয়ালখালি বাজার, দীঘিনালাতে একটি মিছিল বের করলে সেখানে উপজাতিদের আক্রমনে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে বিক্ষিপ্তভাবে পাহাড়ি ও বাঙালিরা বোয়ালখালি বাজারের প্রায় ৫০ টি দোকানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তৎক্ষনাৎ সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে গমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে প্রায় ১৫-২০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। অগ্নিনির্বাপনের জন্য দীঘিনালা এবং খাগড়াছড়ি সদরের ফায়ার সার্ভিস সেখানে গমন করার চেষ্টা করলেও উপজাতীয়দের বাধার কারণে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। সেনাবাহিনীর নিজস্ব চেষ্টায় এবং পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
এরই মধ্যে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে, নালকাটা এলাকার উপজাতীয়রা অফিসারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি গুরুতর রোগী বহনকারী দলকে ঘেরাও করে গতিরোধ করে। তাদের উদ্ধার করার জন্য খাগড়াছড়ি জোন উপ-অধিনায়ক এর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাবাহিনীর টহল দল উক্ত স্থানে গমন করতে গেলে স্বনির্ভর বাজার এলাকায় তাদেরকেও উপজাতীয় জনতা ঘেরাও করে ফেলে। এরই মধ্যে ইউপিডিএফ এর কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জনতার মধ্যে ঢুকে গিয়ে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া আরম্ভ করে। সেনাদলটিকে উদ্ধার করার জন্য খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে আরো একটি সেনাদল উক্ত স্থানে গমন করার উদ্দেশ্যে বের হলে তাদেরকেও উপজাতীয়রা ঘেরাও করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্বেও উপজাতীয়রা ঘেরাও অব্যাহত রাখে ও তারা শত শত টর্চ লাইট প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সেনা টহল দলের সদস্যদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।একই সাথে ইউপিডিএফ এর দুর্বৃত্তরা সেনা টহল দলকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী প্রথমে মেগা ফোনের মাধ্যমে বারংবার তাদেরকে সতর্ক করে ও পরবর্তীতে আকাশের দিকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে সতর্ক করার চেষ্টা করে। এতে উত্তেজিত জনতা নিবৃত্ত না হয়ে সেনা দলের উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আরো দুইটি বি জি বি টহল দল উক্ত স্থানে গমন করে। অন্য আর কোন উপায় না দেখে, সরকারি জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পায়ের দিকে লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রিত গুলি বর্ষণ করে। এতে করে সাতজন সন্ত্রাসী হাতে-পায়ে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদেরকে নিরাপত্তাবাহিনী উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে একজন সন্ত্রাসী মারা যায়। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী সাত জন দুষ্কৃতিকারীকে আটক সহ একটি অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। উল্লেখ্য ম্যাগাজিন টি ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা খালি ম্যাগাজিন।পরবর্তীতে আটককৃত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনার পর অদ্যবধি খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে স্বার্থান্বেষী গ্রুপ প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।