গত ১৮ সেপ্টেম্বর বন্ধুদের সাথে ঢাকা হয়ে ভ্রমনে গেলাম সাজেক ভ্যালিতে।
অপরুপ সুন্দর্য্যের লীলাভূমি এক পাহাড়ী উপত্যকা। সবার সাথে সেখানে গিয়ে নীলিমায় হারিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই শুনি পাহাড়ীরা নাকি বাঙ্গালীদের মারতে শুরু করেছে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল, আর এলো না। ফেরার রাস্তা নাকি উপজাতীয়রা বন্ধ করে দিয়েছে। কালকে ফেরত যাওয়া হবে না। মূহুর্তেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে সাজেকের পর্যটকদের মাঝে। নিরাপত্তাহীনতা এক করুণ দৃশ্য সবাইকে বিভীষিকাময় করে তুলে। সবার বাড়িতে ফোন করে কাঁদতে দেখে নিজেকে অসহায় মনে হলো। সকালে আত্মীয় স্বজনরা ফোন করা শুরু করেছে। পরদিন সকাল থেকে পানি নাই। খাওয়ার জন্য মাম বোতল কিনতে হলে কয়েক গুণ বেশি দামে।এ দিকে হোটেলের ভাড়া দুদিন ডাবল হচ্ছে ভেবে আরো হতাশা বাড়ছে। দুপুরে হোটেলে তাও যা একটু খেতে পারলাম রাত থেকে শুধু ডাল ভাত। পরদিন সকাল গড়িয়ে দুপুর কিছুই খাওয়া হয়নি। খালি পেটে হোটেলের দিকে গিয়ে দেখি সব বন্ধ। আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করলাম ভাই কী অবস্থা। মুখ কালো করে বলল ভাই সব বন্ধ। কি করবো একজন দেখি কিছু মুড়ি চানাচুর বের করে দিয়ে বলল নেন এগুলো খেয়ে দিন কাটান। মাঝে কিছু সময়ের জন্য জেনারেটর চালু হয়েছিল। বাড়ি থেকে ফোন রিচার্জ করে দিয়ে বলে ফোন খোলা রেখো। অনেক কষ্টে এটি চালু রাখার চেষ্টা করছি আর আশেপাশের খবর রাখছি। হঠাৎ একজন উপজাতি দেখলাম হোটেলের পিছন দিয়ে এসে কিছু জিনিস বিক্রি করছে। আমরা তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা। সে বলল, আজ তিনদিন তাদের বাড়িতেও কোন বাজার নেই খাবার নেই। সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও বাজারে যেতে দিচ্ছে না। জীবনের মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে এসে এগুলো বিক্রি করে বাজার নিলে ছেলে মেয়ে নিয়ে খাব। খুব অবাক হলাম তারা নিজেদের জাতির লোক কেউ ছাড় দিচ্ছে না। স্থানীয় সেনা ক্যাম্পl থেকে আমাদের জানালো বিকেলের মধ্যে তারা আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু উপজাতিদের বাঁধার মুখে তা আর সম্ভব হলো না। যাহোক অবশেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরদিন সকালে তিনদিন পর ফিরে আসলাম মায়ের কোলে।
আমার বাড়ি টাঙ্গাইল। সাজেকে ঘুরতে যাওয়া ছিল স্বপ্নে আঁকা ছবির মতো। কিন্তু এতো অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে গিয়ে সেখানে এমন অভিজ্ঞতা স্বীকার হব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এই বিভীষিকাময় সময় আর না আসুক সেটাই সৃষ্টি কর্তার কাছে দোয়া করছি। আজ থেকে সাজেক নামটি মনের ডায়েরি থেকে মুছে দিলাম।