শান্ত পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির মূলে ইউপিডিএফ।

0

পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ইন্ধন দিয়েছিল। এই সহিংসতার প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘু উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ইউপিডিএফ, যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে আসছে, স্থানীয় জাতিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে সহিংসতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তারা। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে তারা কোনঠাসা হয়েছিলো। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে তারা সহজেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেতে পারেনি। গত ৫-ই আগষ্টের পর যখন রাষ্ট্রে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান কিছুটা শীতলতা হয়। তখনেই ফুঁসে ওঠে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ বুঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ। অভ্যুত্থানের পর সারা দেশের ন্যায় যখন পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই পরিবেশ সৃষ্টি হয় এ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠে সন্ত্রাসী দলগুলো। গত ১৯/২০ সেপ্টেম্বর আধিপত্য বিস্তার করতে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়িতে হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে। একই দিনে জেএসএস তাদের আধিপত্য জানান দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে এবং অঞ্চলটির সামাজিক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইউপিডিএফ এর বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। খাগড়াছড়িতে দীর্ঘদিন বাজার ব্যবস্থা বন্ধ থাকে। না খেয়ে অসহায় অবস্থায় উপজাতি পাহাড়ি জনগণ দিন যাপন করে। এক পর্যায় ইউপিডিএফ এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেরাই বাজার চালু করে। এবং তাদের প্রতিহতের জন্য সাধারণ উপজাতি জনগণ দাঁড়িয়ে যায়।

জুলাই অভ্যুত্থানে কোন আঞ্চলিক সংগঠনকে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। ইউপিডিএফ এর ছাত্র সংগঠনকে এ বিরোধিতা করতে দেখা যায়। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর তারা তাদের চেহারা পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সাধারণ ছাত্র-জনতা তখন তাদের প্রতিহত ও প্রত্যাখান করে। ইউপিডিএফ এর নারী সংগঠন এরাও ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে। হঠাৎ তারা অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সুবিধা নিতে সাধারণ ছাত্র-জনতার সাথে মিশে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের ধিক্কার জানায় এবং প্রতিহত করে। সাধারণ জনগণের আস্থা ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। যার ফলে সাধারণ ছাত্র-জনতা কোনভাবেই ইউপিডিএফ এর বিভিন্ন প্রলোভনে পা দেন নি।
সর্বক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে এবং প্রতিহত করতে সাধারণ উপজাতি ছাত্র-জনতা এবং সকল পেশার মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে।

৫ আগষ্টের সময় কোন কিছুতেই ইউপিডিএফকে দেখা যায়নি। কিন্তু তারা বিভিন্ন কৌশলে তাদের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ সাধারণ জনগণের মাঝে হাজির করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সাধারণ জনগণ এ বিষয়ে অবগত। ইউপিডিএফ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিভিন্ন চাঁদা আদায় ও সহায়তা কামনা করে উপজাতিদের থেকে। সারা দেশে চাকরিরত বিভিন্ন উপজাতিদের থেকে গত একমাসে বিভিন্ন ভূয়া আন্দোলনের কথা বলে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে নেয় সংগঠনটি। তাদের বিভিন্ন প্রতিনিধি সবার বাসায় গিয়ে এ চাঁদা আদায় করে নেয়।
চট্টগ্রাম একজন উপজাতি বোন তার কষ্টের উপার্জিত টাকা বাসা ভাড়া না দিতে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে, জানায় চাঁদা না দিলে বাড়িতে গিয়ে শুকর ও হাঁস-মুরগী নিয়ে যাবে। এবং বৃদ্ধ মা বাবাকে মারধর করবে।

ইউপিডিএফ ও জেএসএস তাদের এ অত্যাচারের ফলে কয়েকটি বিষয়ে আমরা সতর্ক হতে পারি :

আইনি ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা অভিযান: সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ও সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এবং সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সাধারণ জনগণকে নিরাপদে থাকতে ও নিরাপত্তা দিতে সহায়তা প্রদান করবে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা: ইউপিডিএফের সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করলে সাথে তাদের আটক করে ব্যবস্থা নিতে হবে। গুপ্তভাবে তারা যেন কোন কাজ করতে না পারে সকল রাজনৈতিক দলকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে প্রভাব: পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে প্রভাব পড়েছে এবং স্থানীয় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের চাঁদা বাজি বিরুদ্ধে সকলের সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। এবং উন্নয়ন মূলক কাজে বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে।

সামাজিক মেরুকরণ: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা জাতিগত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিভাজন বাড়িয়ে তুলেছে তারা, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক মেরুকরণ এবং বিরোধ বৃদ্ধি করতে পারে। এর বিপরীতে তাদের সর্বস্থানে প্রতিহত করে সম্প্রীতি উন্নয়ন করে সকল সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় তাপ প্রয়োগ: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই পি ডি এফ জে এস এস কে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করা এবং আইনের আওতায় আনা তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারিক আদালত গঠন করে বিচার কার্য পরিচালনা করা।

স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব: অস্থিরতার কারণে বাণিজ্য, পর্যটন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সাধারণ জনগণ তাদের ভালো চিন্তা করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

এসব প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের সাধারণ জনগণকে সর্বসময চোখ-কান খোলা রেখে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ জবাব সহ প্রতিহত করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

লেখক: অপূর্বসাচিং, বান্দরবান ২৪/১০/২০২৪

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করতে ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে বড় বাধা সেনাবাহিনী।
পরের পোস্টখুমি সম্প্রদায়ের প্রথম নারী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তংসই।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন