অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ পাহাড়ের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) ও বাংলাদেশ সরকার মধ্যকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বায়ত্তশাসন দাবিতে ইউপিডিএফ গঠন করে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের সহযোগী অঙ্গসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর তৎকালীন সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা।
এই সংগঠন যাত্রা শুরু করে চুক্তির বিরোধিতার পাশাপাশি পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন এবং চাঁদাবাজির জাঁতাকলে পিষ্ট করার মাধ্যমে।
চুক্তির সময় প্রসিত বিকাশ খীসা জেএসএস সন্তু থেকে দলছুট ও উগ্রবাদী পাহাড়ি যুবকদের মিথ্যে স্বাধীন জুম্মল্যাণ্ডের স্বপ্ন দেখিয়ে সশস্ত্র ইউপিডিএফ গঠন করতে উৎসাহিত করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইউপিডিএফ গঠিত হয়। প্রসিত বিকাশ খীসা উগ্র পাহাড়ি যুবকদের ইউপিডিএফে সম্পৃক্ত করে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের জীবন অন্ধকারে ধাবিত করেছে। ২০২৪ সালের দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যখন ইউপিডিএফ গণবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত হয় তখন ইউপিডিএফের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। চারদিকে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
পাহাড়িরা বলছেন, উগ্র যুবকরা প্রসিতের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করে পড়াশোনা, চাকরি, পারিবারিক জীবন ত্যাগ করে কথিত জাতির অধিকার প্রশ্নে অস্ত্র ধরে। প্রসিত সবাইকে বলেছিল অস্ত্র ধরার মাধ্যমে একদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন জুম্মল্যাণ্ডে পরিণত হবে। তখন তারা সবাই জাতির কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং জুম্মল্যাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তারজন্য তাদের সশস্ত্র গেরিলা জীবন বেছে নিতে হবে এবং ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন। সে অর্থ যোগাতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের উপর গণচাঁদা জারি করে ইউপিডিএফ। যা আজ অদ্যাবধি পর্যন্ত জারি। গণচাঁদার নামে পাহাড়িদের বছরের পর শোষণ করে আসছে অঘোষিতভাবে। গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ইউপিডিএফ পাহাড়ি ও বাঙালি জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে চাঁদাবাজির মাধ্যমে।
পর্যাবেক্ষক মহল ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ইউপিডিএফ ২৬ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। চাঁদাবাজির এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রসিত বিকাশ খীসা আত্মসাৎ করেছে। এই থেকে কিছু অর্থ দিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামেমাত্র বেতন-ভাতা ও অস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ, সাংগঠনিক তৎপরতার খরচ মিটিংয়েছে। কিন্তু দুই যুগের বেশি সময় ধরে পাহাড়ি ও বাঙালি জনগণ থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ চাঁদার অর্থ প্রসিত বিকাশ খীসা একা মেরে দিয়ে দেশ-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যাংকে টাকার পাহাড় করেছে।
খাগড়াছড়ি পানছড়ি পুজগাং বাসিন্দা শরৎ চাকমা জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত তার কয়েকজন অন্ধ অনুসারী দিয়ে পুরো পাহাড়বাসীকে অঘোষিত শাসনভার নিয়েছে। সঞ্চয় চাকমা, রবিশংকর ও দীপ্তি শংকরা প্রসিতের অন্ধভক্ত। তারা অন্ধ বিশ্বাস করে প্রসিতকে। প্রসিত তাদের বোকা বানিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা তারা একটিবারও ভাবেননি। তাদের অজ্ঞতার কারণেই পাহাড়ি সমাজের যুবকরা অন্ধকার জীবনে পা বাড়িয়েছে। যেখানে তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। জীবন যৌবন ডুবে যাওয়ার পথে কিন্তু দেখা নেই তাদের বিজয়ের। কোথায় স্বায়ত্তশাসন? কোথায় তাদের জুম্মল্যাণ্ড? দিনশেষে এটাই প্রতীয়মান যে, মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে পাহাড়ি যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। একই সাথে তাদের বিপদগামী করে পাহাড়ি সমাজকে আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে।
খাগড়াছড়ি মাটিরাঙার বাসিন্দা রবিন ত্রিপুরা বলেন, সঞ্চয় চাকমা, রবিশংকর ও দীপ্তি শংকরা একটিবারও নিজের বিবেকবুদ্ধি ব্যবহার করেনি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রসিত কেন মাঠে আসে না? প্রসিত তাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? এত নেতাকর্মী প্রতিপক্ষ দলের হাতে নিহত ও আহত হচ্ছে। নেতাকর্মীদের খোঁজখবর ও তাদের পরিবারের খোঁজখবরও পর্যন্ত নেয়নি। শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রসিত হাজারো পাহাড়ি যুবকদের বিপদগামী করার মাধ্যমে পাহাড়ি জাতিসত্তার ভবিষ্য অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। যারা জীবন যৌবন ত্যাগ করে জাতির মুক্তির আশায় অন্ধকার পথ বেছে নিতে জঙ্গলে থাকছে তারা আজ প্রসিতে প্রতারিত হয়ে বিপদগামী৷ সরকারি বাহিনীর ভয় তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। দেখছে না স্ত্রী সন্তানের মুখ। আছেন অজানা আতঙ্কে। তাদের নেই জীবনে মুক্তি। প্রসিত অন্ধভক্তরা যেভাবে নির্দেশ দেয় সেভাবেই চাঁদার জন্য অপহরণ ও হত্যা করছে৷ তাই তারা বিপদগামী।
রাঙামাটি বাঘাইছড়ির বাসিন্দা, অনিল চাকমা বলেন, দুই যুগ অতিবাহিত হয়েছে, এখন পর্যন্ত ইউপিডিএফ সরকার থেকে কোন দাবিদাওয়া আদায় করে নিতে পারেনি। ইউপিডিএফ পাহাড়ে হাজার হাজার মা-বোনেরা ইজ্জত নষ্ট করেছে। অনেক মাকে সন্তান হারা করেছে৷ পাহাড়ের বুকে দাবানল সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ি জনগণ বুঝে গেছে ইউপিডিএফ প্রসিতের সব ভাঁওতাবাজি। তাই জনগণের মুখাপেক্ষী হওয়ার ভয়ে ২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে তোড়জোড়। অথচ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রসতিকে একটিবারও মাঠে দেখা যায়নি। সুবিধা আদায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে জাতিগত সংঘাত উস্কে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় পাহাড়কে অশান্ত করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তা দৃষ্টি গোচর করে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায়ে সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে এটাই স্পষ্ট যে, বৈষম্যমূলক কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ইউপিডিএফ পাশে থাকেনি তারা ৫ পারসেন্ট কোটা বহাল দাবিতে মাঠে সোচ্চার ছিল৷ সে ইউপিডিএফ কীভাবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিচ্ছে?
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অনুরোধ করবো সঞ্চয় চাকমা, রবিশংকর ও দীপ্তি শংকরা যেন প্রসিতের ফাঁদে পড়ে পাহাড়িদের অন্ধকার পথে আর পরিচালনা না করে।