এম.এন লারমার হত্যা নিয়ে সন্তু লারমা দায় এড়াতে পারে না।

0

এম.এন লারমার হত্যাকাণ্ডের পেছনে সন্তু লারমার দায় এড়িয়ে যাওয়ার রহস্য অনেকে এখনো উদঘাটন করতে পারেনি।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, সংক্ষেপে এম.এন লারমা, ছিলেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা। তার আদর্শ ও কর্মকে কেন্দ্র করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা ও সংঘাতের সূচনা হয়, যা বাংলাদেশের আঞ্চলিক সংহতির জন্য একটি জটিল সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এম.এন লারমার নেতৃত্বে জেএসএস পার্বত্য এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল, যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন আতঙ্কে দিন কাটিয়েছে।

১৯৭০ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এম.এন লারমা ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য এলাকার তথাকথিত অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও তার দাবি ছিল পার্বত্য এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের, বাস্তবে এ সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে এম.এন লারমা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তীতে তিনি সংসদ ত্যাগ করে একটি সশস্ত্র সংগঠন গঠন করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

এম.এন লারমার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই সন্তু লারমা জেএসএসের নেতৃত্বে আসেন। সন্তু লারমা পার্বত্য এলাকায় বাঙালিদের সাথে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলেন। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি সত্ত্বেও তার নেতৃত্বে জেএসএস পার্বত্য এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সন্তু লারমাকে এ অঞ্চলের সমস্যা আরও জটিল করে তোলার জন্য দায়ী মনে করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকটের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শত্রুতা বৃদ্ধি অন্যতম। সন্তু লারমা এবং তার সংগঠনের প্রতি অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন, বিশেষত এম.এন লারমার হত্যার ব্যাপারে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায়। অনেকের দাবি, এম.এন লারমার হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হওয়া উচিত এবং এর পেছনে কারা দায়ী তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

জেএসএসের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং পাহাড়ি সমাজের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এম.এন লারমা স্বার্থ আদায়ে পাহাড়িদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সন্তু লারমার নেতৃত্বে এই ঐক্যের পরিবর্তে সংঘাত ও বিভেদ বেড়েছে। তাই, পাহাড়ি সমাজের অনেকেই মনে করেন, এম.এন লারমার হত্যার যথাযথ বিচার এবং এর পেছনের রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে এই সংঘাত নিরসন সম্ভব হতে পারে।

অপূর্ব সাচিং, পার্বত্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক।

আগের পোস্টএমএন লারমা পাহাড়ে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম!
পরের পোস্টখাগড়াছড়ি পানছড়িতে জেএসএস ইউপিডিএফ ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত ১

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন