নির্ধারিত সময়ে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে কাপ্তাইে হ্রদে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী

0
32


হিল নিউজ বিডি- নির্ধারিত সময়ে ২৮ লাখ টাকা চাঁদা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়াতে কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

বিপুল পরিমাণ চাঁদার দাবি রেখে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসী ৪টি সশস্ত্র সংগঠন এমন অভিযোগ করেছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মৎস ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। ৪টি সংগঠনের দাবিকৃত ২৮ লাখ টাকা চাঁদা নির্ধারিত ২৫ আগস্ট সময়ের মধ্যে পৌছে না দেওয়ায় আজ ২৭ আগস্ট হতে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলো। গতকাল ২৬ আগস্ট সকালে সন্ত্রাসী একটি সংগঠন থেকে নির্ধারিত সময়ে চাঁদা পরিশোধ না করার কারণে এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বলে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রাণের ভয়ে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর হৃদ কাপ্তাই। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভরপুর পার্বত্য রাঙামাটি জেলার এই কাপ্তাই জলরাশি মৎস্য আহরণের জন্য শুধু বিখ্যাত না পর্যাটকদের কাছেও কাপ্তাই হ্রদ বিখ্যাত। ১৯৫৭ সালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ নির্মাণ করা হয় পানি ধরে রাখার জন্য। এতে রাঙামাটির বিশাল এলাকায় জলরাশি সৃষ্টি হয়। ২০ হাজার পরিবারের বসবাসের জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করার ফলে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হয়। রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের উপর। স্থানীয় ও পর্যাটকদের কাছে কাপ্তাই হ্রদ অনেক গুনে বিখ্যাত। অথচ এই লেকের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ। প্রতিটি বছর সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য জেলেদের উপর গুলিবর্ষণ সহ মাছ ধরার নৌকা জাল কেড়ে নেয়। কাপ্তাই হ্রদটি বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার এই হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায়। অথচ সরকারের প্রশাসন এই লেকের নিরাপত্তা দিতে বর্থ।

চাঁদা চেয়ে পূর্ব থেকে হুমকিদাতা সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন গুলো হলো, ১। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পক্ষ, অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না এসে পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করা জেএসএস সন্তু গ্রুপ। ২। পার্বত্য চুক্তির বিরুদ্ধে গর্জে উঠা সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ, ৩। চুনোপুঁটি জেএসএস সংস্কার এম. এন গ্রুপ। ৪। গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ নাম দিয়ে আত্মপ্রকাশ হওয়া চুনোপুঁটি ইউপিডিএফ বর্মা গ্রুপ।

নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, এখানকার প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনিহা। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা সন্ত্রাসীরা লাগামহীন ভাবে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করছে পার্বত্য জুড়ে। ২৮ লাখ টাকা ৪টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দেওয়া ছাড়া কাপ্তাই লেখে মাছ ধরা কোনভাবেই সম্ভব না। আর প্রশাসনও জেলেদের নিরাপত্তা দিবেনা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভাবে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয় তাহলে এখানকার জনজীবন নিঃসন্দেহে বিপন্ন হবে। পাহাড়ের প্রতিটি ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে হয় সন্ত্রাসীদের। সরকারি চাকরিজীবিও বেতনের কিছু অংশ চাঁদা দিতে হয়। প্রতিনিয়ত, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। এমন কোন কিছু নেই যে যার থেকে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করেনা। রক্তের হোলিখেলা চলে পাহাড়ের মাটিতে। গুলির শব্দ বারুদের গন্ধ বাতাসে শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়। পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নেই বললে চলে। কে কখন সন্ত্রাসীদের বুলেট নিঃশেষ হয় তারও নিশ্চয়তা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন নামেই মাত্র রয়েছে। প্রশাসনের কিছু কতিপয় কর্মকর্তার বক্তব্য নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ। সন্ত্রাসী দমনে বরাবরই ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে প্রশাসনের। সন্ত্রাসীদের হামলা শুধু এখানকার সাধারণ উপজাতি-বাঙ্গালীদের উপর সীমাবদ্ধ না। প্রশাসনের লোকজনও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর হাতে। অথচ তার পরেও রহস্যজনক ভাবে প্রশাসন নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ! সন্ত্রাসীরা যে নাম্বার গুলো থেকে ফোন করেছে চাঁদার জন্য প্রশাসন চাইলে সেসব নাম্বার গুলো ট্যাকিং করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু প্রাশাসন তাও করছেনা। উপার্জনের কথা চিন্তা করে সর্বশেষ সকল ব্যবসায়ীও জেলেরা উদ্যোগ নিয়ে চাঁদা পরিশোধ করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই আর। যেমনটা পূর্বের ঘটনা গুলো প্রমান করে।

ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের দমনে প্রশাসনিক সঠিক পদক্ষেপ না থাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া না থাকায় সন্ত্রাসীরা অবাধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলো হতে ভারী অস্ত্র এনে গভীর ষড়যন্ত্র করছে দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর আর দক্ষিণ সুদান হতে বেশি দেরি নয়। সময় বলে দিবে পার্বত্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কতটা শক্তিশালী পোক্ত। কতিপয় বাঙ্গালী আর প্রশাসনের উদাসীনতা সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে পাহাড়ের আনাচে কানাচে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here