বৃটিশ প্রণীত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক?

0
107

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে কথিত বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা আরও নিরীক্ষা করে দেখবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সভাপতি ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অদ্য বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ২০২২ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রামের কথিত মর্যাদা সংক্রান্ত ২টি আলাদা রিভিউ আবেদনের ভার্চুয়াল শুনানির সময় এ কথা বলেন।

সর্বোচ্চ আদালত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’- কে সাংবিধানিকভাবে বৈধ ও কার্যকর হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিভিউ পিটিশনের পুনরায় শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতের কাছে সময় চাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট মুলতবি আদেশ দেন।

রিভিউ আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

কথিত আছে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকরা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিদেশি অভিবাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ জারি করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে কথিত বিশেষ মর্যাদা দিয়ে ১৯০০ সালের ১ মে থেকে এই শাসনবিধি কার্যকর হয়। যদিও ব্রিটিশদের এই বিতর্কিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি’ বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিলুপ্ত৷ সভ্যতার যুগে এধরণের অস্পষ্ট প্রথাগত সামাজিক নিয়মকানুন ও কুসংস্কার বর্তমান যুগের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের দাবি ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ কে সংবিধানে বৈধতা দিলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙ্গালী টিকে থাকা দায়ী হয়ে যাবে এবং এ অঞ্চল থেকে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করার জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তাছাড়া এ অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো চাবিকাঠি পেয়ে যাবে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতার স্বার্থে উক্ত শাসনবিধির সাংবিধানিক বৈধতার বিরোধিতা করেন পার্বত্য বাঙ্গালীরা।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়। এরপর থেকেই সন্তু লারমা নামে পরিচিত জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার নেতৃত্বে বৃটিশ প্রণীত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ নিয়ে কাজ করছে।

রাঙ্গামাটি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ওয়াগ্গাছড়া এস্টেট লিমিটেড নামের ২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়েক বছর আগে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’- কে ‘মৃত আইন’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিলের পর, আপিল বিভাগ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’- কে সাংবিধানিকভাবে বৈধ এবং কার্যকর ঘোষণা করে। তৎকালীন যে বিচারপতি এই পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি কে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন তার বিরুদ্ধে ছিল অসংখ্য অভিযোগ৷ বিচারপতি এসকে সিনহা ছিলেন একজন উগ্রবাদী ও হিন্দুবাদী এবং বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী। সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে উক্ত রায় দেন। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও কুসংস্কার ভরা, অস্পষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি কে সাংবিধানিক বৈধতা ঘোষণা দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here