
শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের মত ভাগ্য বরণ করতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কে।
লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) ছিল একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় হিন্দু তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমির জন্য লড়াই করছিল। এলটিটিই ১৯৭৫ সালে মে মাসের দিকে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি মে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ক্ষুদ্রাকৃতির দেশটি দীর্ঘ ২৬ বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় ১ লক্ষ নিরীহ শ্রীলঙ্কান নাগরিক। বাসস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল তামিল অধ্যুষিত এলাকার অগণিত সাধারন শান্তিকামী মানুষ। ইতিহাসের একমাত্র গৃহযুদ্ধ যার প্রভাবে প্রাণ হারায় দুটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ পদ ধারী সরকার প্রধান।
এই তামিম টাইগারদের ছিল হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ও ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ, এবং সমর্থক বিদ্রোহী জনগণ। এমনকি তাদের ছিলো যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও সামরিক রণকৌশল। এমন শক্তিশালী সশস্ত্র অবস্থান থাকার স্বত্ত্বেও শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি।
আরো বিস্ময়কর তথ্য হলো-তাদের ছিল নিজস্ব সরকার, ব্যাংক, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মত করেই তামিল টাইগার্সদের সেনাদের রেঙ্ক নির্ধারিত ছিল। একটি গেরিলা আক্রমণকে সফল করার জন্য প্রায় সবকিছুই ছিল তামিল টাইগার্সদের। রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় শাখার নেতৃত্বে ছিল প্রভাকরণ। তামিলদের অর্থায়নের বড় উৎস ছিল প্রবাসী তামিলরা। তারা বিভিন্ন ভাবে টাইগার্সদের সার্বিক সহায়তা করত। সবচেয়ে বড় সমর্থন দিত, ভারতের তামিলনান্ডু রাজ্যের সরকার ও সাধারণ জনগণ। তাছাড়া শ্রীলংকার সাথে বিবাদমান দেশগুলো গোপনে তামিল টাইগার্সদের সাহায্য করত। প্রাথমিকভাবে, ভারত সরকার তাদের সামরিক ট্রেনিং ও সহায়তা করত। ধীরে ধীরে তামিল টাইগার্স অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে। তারা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।
১৯৭৫ সাল থেকে তামিল টাইগারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল শ্রীলঙ্কা সরকার ও সাধারন জনগণ। ১৯৮৩ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর হামলা ও রাজনৈতিক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সেনাবাহিনীর উপর হামলা তীব্র করেছিল তারা৷
তামিল টাইগার কর্তৃক রাজনৈতিক যেসব হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়-
পদবীধারী সংখ্যা
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ১
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ১
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ১
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক দলের নেতা ১০
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী ৭
সংসদ সদস্য ৩৭
স্থানীয় সরকারের সদস্য ৬
প্রদেশিক সভার সদস্য ২২
রাজনৈতিক দলের সংগঠক ১৭
মেয়র ৪
এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে তামিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
সরকার সিদ্ধান্ত নিল, তামিল টাইগার ব্যাপক ভাবে তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান চলতে থাকে। ২০০৯ সালের মে মাসে সেনাবাহিনী পুরোপুরি ভাবে তামিল টাইগার্সদের ঘিরে ফেলে। সব কিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৮ মে, প্রভাকরণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্ত বন্যার ইতিহাস।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সরকার, জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীন দেশ গঠন করার দাবি রেখে যুদ্ধে নেমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে আলোচনায় আসা কুকি চিন ন্যাশানাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সাধারণ বাঙ্গালীর উপর হামলা, অপহরণ ও সেনাবাহিনী হত্যার মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিসামর্থ্য জানান দিচ্ছে। তারা সীমান্ত সড়ক কাজে নিয়োজিত থাকা শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করেছে এবং অপহরণ করেছে। গত ১২ মার্চ সেনা মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন হত্যা করেছিল এরপর গত ১৬ মে আবার সৈনিক মো. আলতাফ আহম্মদ ও মো. তৌহিদকে হত্যা করে এবং সেনা মেজর মনোয়ার ও ক্যাপ্টেন ইশতিয়াককে রক্তাক্ত করে। গত ২৩ মে বর্ডার সড়ক প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিক মো. রাশেদকে আইইডি মাইন বিস্ফোটিত করার মাধ্যমে হত্যা করে এবং এক শ্রমিকের দেহ ক্ষতবিক্ষত করে। এই হামলার ঘটনা রাষ্ট্রের সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল। তাদের দুঃসাহস অতি বেড়ে গেছে৷ তারা হয়তো জানে না আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সম্পর্কে। একটি স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনী কতটা শক্তিশালী হয় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনে কতটা সক্ষম তা বুঝতে অক্ষম বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ। নাথান বম এর কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বলতে চাই শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের মত ভাগ্য বরণ করতে হবে। এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি তোমাদের ভোগ করতে হবে যে পরিণতি তোমরা কল্পনা করতে অক্ষম। দেশভাগের ষড়যন্ত্র যদি তোমরা করেই থাকো এদেশের ১৮ কোটি জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে। এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বসে থাকবে না।