কুকিদের আগ্রাসনের ঐতিহাসিক কারন।

0
84

১৮২৪ সালের ইঙ্গ- বার্মিজ যুদ্ধের মাধ্যমে কার্পাস মহলের প্রতিবেশী রাজ্য আারাকান ব্রিটিশ দখলাধীনে চলে আসে।

উক্ত যুদ্ধের পর ১৮২৬ সালে সম্পাদিত ইয়ানদাবো চুক্তির শর্তানুসারে বর্মী রাজা তাঁর প্রভাবাধীন করদরাজ্য আসাম, কাছাড় ও মনিপুর ব্রিটিশদের নিকট ছেড়ে দিলে সমগ্র উওর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক, বানিজ্যিক ও সামরিক হিসাব নিকাশ নতুন মোড় নেয়। এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশদের পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম বন্দর কে রপ্তানি বন্দর হিসাবে গড়ে তোলা। এই বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হবে কাছাড়, সুরমা উপত্যকা ও মনিপুরে উৎপন্ন দ্রব্য।

বার্মা থেকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত অন্চলে অবাধ বিচরণশীল স্বাধীন চেতা অদম্য উপজাতি রা ( সেন্দু, বনযোগী, মুরং,খুমী, খিয়াং) ব্রটিশদের এ অন্চলে অনুপ্রবেশ তাদের অবাধ স্বাধীনতার প্রতি হুমকি মনে করে। ফলে কোম্পানি সরকার ও উপজাতি দের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অদম্য উপজাতিরা তাদের লুটতরাজ, খুন,জ্বালাও পোড়াও অপহরণ প্রভৃতি অপরাধ মূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘পূর্বান্চলের মারাঠা’ হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৮৩০ এর দশক নাগাদ কোম্পানি বসতি ও সীমান্ত চৌকীর উপর আক্রমণ দিয়ে শুরু হয় এ সংঘাত। শুধু তাই নয় যুদ্ধ বাজ উপজাতিরা এিপুরা রাজা, চাকমা রাজা এবং বোমাং রাজাদের ভাড়াটে সেনা হিসাবেও সম্পদ বানাতে থাকে।

চাকমা রানী কালিন্দীর শাসনাধীন কার্পাস মহলেও ( পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ব নাম) তার অধীনস্থ দেওয়ানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়।
তাঁর দুই প্রভাবশালী দেওয়ান গিরিশ চন্দ্র দেওয়ান ও এিলোক চন্দ্র দেওয়ানের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ আরম্ভ হয়।

তারা উভয়ে কুকিদের ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনে। এক পর্যায়ে এিলোক চন্দ্র দেওয়ান বিপক্ষ দলের ভাড়াটে কুকিদের হাতে প্রান হারালে তার পুএ নিল চন্দ্র দেওয়ান মর্মাহত হয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত  মীমাংসার জন্য তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সেজন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য ও আশ্রয় লাভের আশায় চট্টগ্রামের ম্যাজিস্ট্রেটের সংগে দেখা করেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট বিরোধ মীমাংসা এবং নিষ্ঠুর ও দূর্ধর্ষ কুকিদের বশে আনার জন্য  যে প্রভূত অর্থ ও শক্তির ব্যয় প্রয়োজন সে তুলনায় ঐ রাজ্য দখল করে আর্থিকভাবে সরকারের লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান।

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘অ্যান অ্যাক্ট ফর দ্য বেটার গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া ‘ শীর্ষক একটি আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পাস করে। ১৮৬০ সালে  চট্টগ্রামে র পার্বত্য অন্চল নিয়ে একটি প্রশাসনিক জেলা গঠন ছিল একদিকে উপজাতি গুলোর অন্তর্কোন্দল ও আন্তঃ উপজাতি আক্রমণ পাল্টা আক্রমণজনিত ঝঞ্ঝাটপূর্ণ অশান্ত পরিস্থিতি তৃতীয় শক্তি হিসাবে ব্রিটিশদের পূর্বমুখী সম্প্রসারনের কৌশলগত প্রয়াস।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে তিপেরা ( বর্তমান কুমিল্লা)  জেলার ব্রিটিশ প্রজাদের উপর লুন্ঠন প্রিয় কুকি উপজাতিরা ভয়াবহ আক্রমণ চালায় ম্যাকেন্জি যাকে ‘ গ্রেট কুকি ইনভেশান ‘ বলে আখ্যা দেন। ৪০০-৫০০ কুকি দল ১৫ টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়,১৮৫ জন ব্রিটিশ প্রজাকে বন্দি করে নিয়ে যায়।
লেখক: মেজর নাসিম (অব:)
০১-০৩ -২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here