অপ্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রাম- সোহেল রিগ্যান।

পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালি নির্যাতিত  হওয়ার মূল কারণ বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তি ও বাঙালি একটি পক্ষ মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াই

0
49
ছবি: মোঃ সোহেল রিগ্যান

পাহাড়ে মূল সমস্যা সংকট নিরসন, শান্তিবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, সেনাবাহিনীর জীবন যুদ্ধ, সরকারের নীরব ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ হাসিল এবং স্থানীয় বাঙালীরা মীরজাফর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ। এই নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।

বাংলাদেশের সরকার গঠন যেসব রাজনৈতিক দলগুলো করেন তারা কোনভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তরিকতায় ছিলেন না।  এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটুকু সমাধান না করে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল এবং বিদেশিদের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে খুশি রাখতে এ অঞ্চলের সমস্যাদি বরাবরই এড়িয়ে গেছেন।  পার্বত্য  উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী দেশদ্রোহী দমন করা উচিত নয় হিতে বিপরীত হবে বরং রাজনৈতিক ভাবে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে। এ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ অপারগত ছিল। এর মূল কারণ ছিলো আওমীলীগ  ও বিএনপি নিজেদের ভিতরে রাজনৈতিকভাবে কোন্দলে জর্জরিত এবং ক্ষমতা যাওয়ার জন্য উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজেদের কব্জায় রেখে ক্ষমতার আসনে বসার সু-পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি মনে করছে উপজাতিদের খেদানো বাড়তি একটা ঝামেলা সেই একই পন্থা আওয়ামী লীগ ও অনুসরণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিকদল মনে করছে। পক্ষান্তরে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল।  রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ব্যবহার করে ছেড়েছে।

পাহাড়ে সমস্যা সৃষ্টি কারা করেছে বিষয়টি তুলে ধরা উচিত, না হয় বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার সচ্ছল ধারণা অপ্রকাশিত থাকবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী ছিনিয়ে এনে স্বাধীন একটি গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করে। যদিও বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাধীনতা লাভ করে। এ বিষয়টি সকলেরই জানা। ভারত সহযোগিতা না করলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে পেরে উঠতো কীনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। যাক ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে কাঙ্ক্ষিত জয় লাভ করে। সেটি আমরা অস্বীকার করছি না। আসি মূল কথায়-
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তখন ভারতের রাষ্ট্র পরিচালকদের ভিতরে একটি ধারণা জন্মে ছিল। সেটি ছিল অবশ্যই পূর্বপরিকল্পিত এবং সুদূর প্রসারিত বলা যায় অনায়েসে। ভারতের সরকার প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারকগণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে চক এঁকেছে ভারতের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য এ দেশের ভূখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি জনগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য।  ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের আঁকা সেই চকই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্তি সৃষ্টি ও অশান্তির আগুনে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটির একদশমাংশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে যা বর্তমান চরম সংকটে উত্তীর্ণ হয়েছে।  যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।  ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংবিধান পূর্ণগঠন এবং দেশের জনগণের জীবন আচার সংবিধানের সম্পৃক্ততা করে।  যদিও তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়ে বসবাস করা জাতিসত্বাকে বাঙ্গালী জাতিস্বত্বা হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য ঘোষণা করে৷ ভারত কৌশল পূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাকে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব শ্রেণীকে ভুলভাল বুঝিয়ে ভেটো দেয়। আর এমনিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পূর্ব থেকে ভারত প্রেমী। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় কিন্তু উপজাতিরা ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল। বাঙ্গালী ও চাকমা অনেক লেখকদের লেখাতে ফুটে উঠে এ বিষয়ে। ৭২’ এ ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ পাহাড়ে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করবে এবং হত্যাযজ্ঞ চালাবে। এরূপ কথা শুনে পাহাড়ে বসবাস করা উপজাতীয় নেতাদের ভিতর ভয়ভীতি ও আতঙ্ক কাজ করে। ভারত এই সকল বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বের একটি পক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। পাহাড়িদের কথা বলার জন্য পূর্ব থেকে এ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) নামক একটি সংগঠন ছিল, এককথায় ছোটখাটো রাজনৈতিক সংগঠন বলা যায়। এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে ৭২’ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতা  মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম. এন লারমা)-এর নেতৃত্বে সশস্ত্র শান্তিবাহিনী শাখা খোলে। দাবি তোলেন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এবং আসামে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় এবং বাঙালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রতিহিংসামূলক, বিদ্বেষমূলক ঘৃণা শিক্ষা দেয়। ১৯৭৫ সালে শান্তিবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০০ হাজার। ১৯৭৫ ও ৭৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলা হামলা চালিয়ে শান্তিবাহিনী তাদের শক্তি প্রদর্শন পূর্বক আত্মপরিচয় জানান দেয়।  এছাড়াও পার্বত্যাঞ্চলে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে হামলা করে শান্তিবাহিনী।

এর পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান সমতল থেকে বাঙ্গালীদের পাহাড়ে পুর্নবাসন প্রস্তুতি প্রক্রিয়া গ্রহণের চেষ্টা করে কয়েকটি দেশের সাথে পরামর্শ করে। যুক্তি পরামর্শ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি আরব। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্নবাসিত বাঙ্গালীদের খাদ্যের জন্য এবং ভবিষ্যত চিন্তা ভাবনা করে একটি অনুদান দেয় এ অনুদান কে হয়তো অনেকেই বর্তমানে সরকারি রেশন হিসেবে চিনেন বা জানেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম বাঙালী পুর্নবাসন করা হয় ১৯৭৯ সালে। বর্তমানে দেশের তথাকথিত সুশীল, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানপাপী ও বেশ্যাবৃত্তি করা মহল এবং সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন জায়গায় গাল বাজি করে আসছে পাহাড়ে মূল সমস্যা সমতল থেকে ১৯৭৯ সালে বাঙালি নিয়ে পূর্নবাসিত করার কারণে। অথচ উপরোক্ত বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা পূর্ণ বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, সমতল থেকে বাঙালি পুনর্বাসন করার আগে থেকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নাশকতামূলক এবং দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে আসিতেছে ভারতের ইন্ধন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়।  এক্ষেত্রে আমি আরো একটি বিষয় সামনে নিয়ে আসতে চাই। সেটি হল বাংলাদেশের কিছু বিতর্কিত লেখক ও পাহাড়ের উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দাবি করে আসছে পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বাঙালির বসবাস ছিল না।  আমরা দেশের বেশিরভাগই নাগরিক মনে করি পার্বত্য চট্টগ্রাম বলতে চট্টগ্রাম কে বুঝানো হয়। ১৮৬০ সালের প্রক্কালে সমতল চট্টগ্রাম জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করা হয়।  পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বর্তমানে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান নিয়ে এ ৩টি জেলা নিয়ে Chittagong হিলটেক্স গঠিত।  বাংলাদেশের প্রবীণ লেখকগণসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লেখকদের লেখার সূত্র ধরে জানা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুকাল থেকে বাঙালী বসবাস করে আসিতেছে। রাঙ্গামাটির পূর্ব নাম (কার্পাসমহল) সহ কাপ্তাই এলাকায় বিপুল পরিমাণ বাঙালীর বসবাস ছিল। যে কাপ্তাই বর্তমানে জলরাশিতে বিস্তৃত এসব এলাকায় বাঙ্গালীদের বসবাস ছিল অহরহ, অবশ্যই তা উপজাতীয়দের তুলনায় নগণ্য।  এখন একশ্রেণীর কথিত পণ্ডিতমশাই গণ বলে আসছেন পাহাড়ে বাঙালি বসবাস ছিল না।  আর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বেকার বাসিন্দা নয়। কারা চীনের তিব্বত, মঙ্গোলীয়, ভারতের ত্রিপুরা ও বার্মার আরাকান রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় গ্রহণের জন্য এসেছিল।  ১৭০০ সাল থেকে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি এসকল  উপজাতি বাংলাদেশে আগমন করে। পরবর্তীতে উপজাতিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুমোদন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যাদেরকে আমরা ব্রিটিশ হিসেবে চিনি। হিলটেক্স Regulation যে আইন গুলো করা হয়েছে যাকে আমরা ১৯০০ সালের Circle আইন হিসেবে জানি। এ সকল তথাকথিত আইন ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত।

উপজাতিদের আগমনের ইতিহাস বিচার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠী আদিবাসী নয় এবং এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা নয় এমনকি নয় ভূমিপুত্র।  আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘ কিছু বিধিমালা বা সংজ্ঞা প্রণোদিত রয়েছে। বিধিমালা সংজ্ঞা মতে আদিবাসী বলে বুঝানো হয় কোন একটি জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় নির্দিষ্ট স্থানে কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসিতেছে অথবা দুই থেকে আড়াই হাজার বৎসর উক্ত স্থানে বসবাসরত এইরূপ জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাস করা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ইতিহাস বিবেচনা করলে বুঝা যায় এদের বাংলাদেশে আগমন কেবলমাত্র ২৫০ থেকে ৩০০বছর। ৩০০ বছর বসবাস করে নিজেদের আদিবাসী দাবি করা যেমনি হাস্যকর তেমনি বোকামি বটে। এসব দাবিদাওয়ার পেছনে কিছু বিদেশী দাতাসংস্থা ও ভারতীয়দের ইন্ধন রয়েছে।

এবার আসি ১৯৭৯ সালে পাহাড়ে  বাঙালি আগমন সরকারের ভূমিকা ও উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ সেনাবাহিনী জীবন যুদ্ধ সম্পর্কে-
১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্র নায়ক মেজর জিয়াউর রহমান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম আজকের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান দেশের সমতল ভূমি থেকে  বাঙালী নেয়া হবে। বাঙালী গেলে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে চাষাবাদ করার জন্য গরু মহিষ দেয়া হবে এবং প্রত্যেক বাঙালি পরিবারকে নিরাপত্তাসহ ঘর বেঁধে দেওয়া সহ সমতল থেকে আসা বাঙালি পরিবারগুলোকে যথেষ্টভাবে যতদিন পর্যন্ত কর্মসংস্থান থাকবেনা সরকার দায়-দায়িত্ব বহন করে আসবেন। সংবাদপত্রে সরকার কর্তৃক এমন চমৎকার ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দাসহ কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর  পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, গাজিপুর,  মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নরসিংদী, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, শেরপুর, পঞ্চগড়, চাঁদপুর, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, ভোলা, ফেনী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকা থেকে বাঙালিরা পাহাড়ে আসার জন্য সাড়া দেয়।  সাড়া দেওয়া বাঙ্গালীদের  সরকার বিভিন্ন ধাপে ধাপে পার্বত্য চট্টগ্রামে এনে সরকারি খাস জমিতে পূর্নবাসিত করে। বাংলাদেশের আয়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম একদশমাংশ।  আয়তনের তুলনায় এ অঞ্চলের জনসংখ্যা একদম অতুলনীয়।  আর এই অঞ্চলের বেশিরভাগই ভূমি খাস যার মালিক আইনগত ভাবে সরকার। সমতল ভূমি থেকে আনা বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সরকার তার ভূমিতে পূর্নবাসিত করেছে কোন উপজাতি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন  ভূমিতে পূর্নবাসিত করেনি। বর্তমানে দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অভিযোগ করে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীরা উপজাতিদের  ভূমি বা জায়গা-জমিতে বসবাস স্থাপন করে পাহাড়ে শান্তি বিনষ্ট করছে। এই অভিযোগটি একদম মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মনগড়া এবং খামখেয়ালীপনা বটে।  সরকার  পার্বত্য অঞ্চলে যে, সকল বাঙালিদের পূর্নবাসিত করেছে সে সকল বাঙালিদের সরকার  কবিলত বন্দোবস্ত দিয়েছে।  সকল বাঙালীর  ভূমির ডকুমেন্ট পত্র রয়েছে। অপরদিকে এ অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতিদের কোন ডকুমেন্ট পত্র নেই। উপজাতিরা কোন ডকুমেন্ট ছাড়াই বসবাস করে আসছে। এবং উপজাতিদের দখলে থাকা কোন ভূমি সরকার বাঙালি জনগণকে দেয়নি।  বর্তমানে যে অভিযোগগুলো উঠে আসছে পাহাড়ে বাঙালিরা উপজাতিদের ভূমি দখল করছে ও উপজাতি নারী ধর্ষণ করছে এবং পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করছে তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এই অভিযোগের কোন বাস্তবিক প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র বাঙালীকে এই অঞ্চল থেকে সরাতে তারা একের পর এক মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।
বাঙালী পুনর্বাসিত হওয়ার পরে ভারতের  ইন্ধনে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা বাঙালীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাঙালি মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, কোলের ছোট বাচ্চা শিশুদের হত্যা করেছে, আবাল বৃদ্ধ  কেউ বাদ যায়নি এই নিষ্ঠুর নির্মম নির্যাতন থেকে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির অদ্যবধি পর্যন্ত ১৮ বছর ৩৫ হাজারের অধিক নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীকে শান্তিবাহিনীর নামক সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে।  তবে এই সময়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী ও সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করে। সেনাবাহিনী কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব হয়নি এই যুদ্ধে সেনাবাহিনী পুলিশ-আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত শতকের মত সদস্যের প্রাণহানি হয়েছে অপরদিকে শান্তিবাহিনীর ক্ষতি হয়েছে সামান্য।  এখানে একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো শান্তিবাহিনীর জন্ম পাহাড়ের মাটিতে তাই তারা পাহাড়ের প্রতিটি আনাচে কানাচে অভয়ে চিনেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনী পাহাড়ের পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অচেনা ও কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। সে দিক দিয়ে প্রশাসনকে বেগ পেতে হয়েছে আর নিরস্ত্র বাঙালী হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বেপরোয়া ভাবে। সরকার বাঙালিদের পাহাড়ে আনার ক্ষেত্রে যে, সকল সুযোগ-সুবিধা দিবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে সে সকল সুযোগ সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শান্তিবাহিনীর আক্রমণে যেমন সরকার ব্যর্থ হয়েছে তেমনি বাঙালী হয়েছে বিধ্বস্ত। একদিকে শান্তিবাহিনীর আক্রমণ অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার আক্রমণ যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বাঙালি জনপদ বিধ্বস্ত ছিল দীর্ঘ ১৮ বছর। এ দীর্ঘ ১৮ বছর এর ভয়াবহতা আমার এই সামন্য জ্ঞানের লেখায় কোনভাবেই তুলে ধরা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে ৭১ সালে হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল সে একাত্তরের ফের অবতীর্ণ হয়েছে ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৭সাল অধ্যবধি। শান্তিবাহিনী নামক এ সন্ত্রাসী বাহিনী খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলার আনাচে-কানাচে এমন কোন জায়গা স্থান ছিলনা যে, তারা গণহত্যা, নির্যাতন-নিপিড়ন ও অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করেনি। এরা এতটাই বেপরোয়া ছিল এদের নির্যাতনের কয়েক হাজার বাঙালী ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল এর দিকে পাহাড় ছেড়ে পালিয়েছেন সমতলে।  পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত কয়েকটি গণহত্যা রয়েছে এ কয়েকটি গণহত্যা শান্তিবাহিনী ঘটিয়েছে। দিনে দুপুরে বা রাতের আঁধারে হঠাৎ এসে বাঙালী জনপদের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, গুলি করে বাঙালীদের হত্যা করেছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের কে গাছের সাথে মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। আবাল বৃদ্ধ কাউকে ছাড় দেয়নি এই সন্ত্রাসী বাহিনী। হয়তো তৎকালীন বাংলাদেশের মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বের কারণে পাহাড়ের হত্যাযজ্ঞ কাহিনী বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হয়নি স্থান পায়নি ইতিহাসের পাতায়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- দেশের অনেক মানুষ জানে না পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী গণহত্যার ইতিহাস। তা আজো রয়ে গেছে সবার দৃষ্টির অগোচরে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী গণহত্যার কয়েকটি  স্থানের নাম, লংগদু গণহত্যা, পাকুয়াখালী গণহত্যা, বরকল ভূষণছড়া গণহত্যা, কাউখালী কলমপতি গণহত্যা, পানছড়ি লৌহাং গণহত্যা, গোলক প্রতিমাছড়া গণহত্যা। মিডিয়ার নীরবতাসহ দেশের সুশীল সমাজ এই হত্যাযজ্ঞ এড়িয়ে গিয়েছেন। বাঙালির রক্তে লাল হয়েছে খাগড়াছড়ি চেঙ্গী, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, বান্দরবানের সাঙ্গু,  মাতামুহুরী,  ইছামতিসহ অসংখ্য পাহাড়ি ঝিরি।  পাহাড়ের হত্যাযজ্ঞ বর্ণনা দেওয়া আমার মত অদক্ষ অভাগার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব না।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি এমন একটি সময় হয়েছে যে সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের জয়ের নিশান উঠাবেন ঠিক ঐ সময় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হয়। তৎকালীন শান্তিবাহিনী অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে সেনাবাহিনীর  অফিসার ও সদস্যরা অনেক কেঁদে ছিলেন সেনাবাহিনীর চোখের জল হৃদয় ভাঙ্গা আর্থনাত আজও সাক্ষী পাহাড়ের আকাশ বাতাস ও অসংখ্য বাঙালি।  পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকে অনেকে বসবাস করেন কিন্তু তারা ভুলে গেছেন সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের কথা, বীর লড়াকু পার্বত্য বাঙ্গালীদের রক্তের কথা। এমনও সময় গিয়েছে সেনাবাহিনী অনেক সদস্য জীবন বাঁচানোর তাগিদে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন বেশ করে তৎকালীন সেনাবাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকরি করতে বললে ভয়ে চাকরি ছেড়ে পালাতো। সেনাবাহিনী যখন ক্যাম্প থেকে টহল দিতে বাহির হতো তখন প্রত্যেকটি সেনাবাহিনী বসে বসে চোখে জল ছাড়তেন আর দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করতেন আবার পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত আসবে কীনা? পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বাঙালী যুবকদের আনসার ভিডিপি তে নিয়োগ দেয়া হয়। আনসার বাহিনীর অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে পাহাড়ের জন্য, আনসারের সাহসিক সৈনিকেরা নিজের জীবন বাজি রেখে সেনাবাহিনীকে নিয়ে পাহাড়ে বাঙালী মা-বোনের জন্য নিরাপত্তা দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী পুনর্বাসিত করার পরে ১৯৮১ সালে ২ বছরের মাথায় তার মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালির জন্য বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়।  যদিও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট এরশাদ পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্নবাসিত বাঙ্গালীদের হাল ধরেন। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার দেশদ্রোহী শান্তিবাহিনীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার একাধিকবার চেষ্টা করে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও শান্তিবাহিনীর আন্তরিকতা ছিল না। তবে শান্তিবাহিনী ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে একাদিক বৈঠক হয় এসকল বৈঠকের তেমন একটা ফল হয়নি তবে এর মধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হয় সাফল্য এতটুকু। অধিকিন্তু এই জেলা পরিষদ আজ বৈষম্য, অনিয়ম ও সাম্প্রদায়িকতায় জ্বালা পরিষদের পরিণত হয়েছে।

১৯৯৬ সালে  রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।  আওয়ামীলীগ সরকার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিত (শান্তিবাহিনী) সাথে তড়িঘড়ি আলোচনা পূর্বক আন্তর্জাতিক মহলের সম্পৃক্ততায় উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে এবং তথাকথিত শান্তিবাহিনীকে বিশেষ ৭২টি সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধান বিরোধী একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।  যে চুক্তির বেশিরভাগ ধারাই বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি স্টুডিয়োতে বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সংসদের চীফ হুইফ হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি’র উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) শান্তিবাহিনীর প্রধান সন্তু লারমার মধ্যে অস্ত্র আত্মসমপর্ণ পূর্বক লিখিত ৭২টি চুক্তি নামা সহ চুক্তিপত্র সাক্ষর হয়। চুক্তিতে প্রধান শর্ত অনুরূপ শান্তিবাহিনীর সদস্যরা সন্তু লারমার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র আত্মসমপর্ণ করে। এই সময় ৭৩৪ জন শান্তিবাহিনীর সদস্য সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দেয়৷ যদিও সকলের ধারণা শান্তিবাহিনীর বেশিরভাগই সদস্য অস্ত্র জমা দেয়নি কিছু সংখ্যক ভাঙা অস্ত্র জমা দিয়েই চুক্তি সাক্ষর করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রকাশ শান্তিবাহিনী।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতি শান্তিবাহিনী প্রধান সভাপতি সন্তু লারমার সাথে চুক্তি সাক্ষর করার পূর্বে বিষয়বস্তু নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনপদের সঙ্গে কোনপ্রকার আলোচনা পরামর্শ করেনি, তড়িঘড়ি’র এই চুক্তি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় সারাদেশ সহ পার্বত্যঅঞ্চলে। এই নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীলীগকে কোনঠাসা করার জন্য রাজপথে পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি কে কালো চুক্তি আখ্যায়িত করে লংমার্চের মত রাজধানী ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি অভিমুখে রওনা দেয় এতে যোগ দেয় সমতল ভূমির মানুষের পাশাপাশি পাহাড়ের বাঙালিরা।  শুরু হয় রক্তপাত চুক্তির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করার কারণে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এতে ৪ থেকে ৫ জন বাঙালি নিহত হয় পুলিশের গুলিতে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম  ভিত্তিক বাঙালি একাধিক  আঞ্চলিক সংগঠন গঠিত হয়।  যদিও এটি ছিল বিএনপি ইন্দন আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা। অপরদিকে বাঙালিদেরকে বলেছে এই চুক্তি কালো চুক্তি,  এই চুক্তি সংবিধানবিরোধী, দেশবিরোধী, রাষ্ট্র বিক্রির চুক্তি আমরা ক্ষমতায় গেলে ঠিকই এই কালো চুক্তি বাতিল করব। বিএনপি সেসময়ে বলেছিল পার্বত্য চুক্তির ফলে বাংলাদেশ পাহাড় স্বর্গভূমি হারাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা হবে নিজ দেশে পরবাসী।  আমরা এই কালো চুক্তি মানি না মানবো না, ক্ষমতায় গেলে এই চুক্তি আমরা বাতিল করব।  অন্যদিকে পাহাড়ে একটি পক্ষকে ইন্দন দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে বাঙালি মারার জন্য পাহাড়ে আরো একটি  সন্ত্রাসী বাহিনী ইউপিডিএফ নামক সংগঠন তৈরী করেছে।  ২০০১ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে।  বিরোধী দল থাকাকালীন বিএনপি পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করেছিল এবং ক্ষমতায় গেলে চুক্তি বাতিল করবে বলেও অঙ্গীকার করেছিল কিন্তু ক্ষমতায় এসে বিএনপি পার্বত্য কালো চুক্তির  বেশিরভাগ  ধারা বাস্তবায়িত করেছে।  পার্বত্য চট্টগ্রামকে অরক্ষিত করে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে  সেনাবাহিনীর সকল ছাউনি ও সেনা সদস্যদের সমতল ভূমিতে প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনী ও তাদের ছাউনি  প্রত্যাহার সময়ে বান্দরবান থানচি রুমা আলীকদম সেনাবাহিনীকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় বাঙালিরা কান্নাকাটি করেছিল ছাউনি প্রত্যাহার না করার দাবিতে। তিন থেকে চার দিন সেনাবাহিনীকে বান্দরবানবাসী অবরুদ্ধ করে রাখে।   নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৮ লক্ষ বাঙালি।  সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ফলে পাহাড়ে শুরু হয় নির্মম নির্যাতন এবং উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আধুনিক বিশ্বের ভয়ংকর অস্ত্র প্রদর্শনী চলে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় পার্বত্য বাঙ্গালীদের কান্না, প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত হয়ে দিগদিগন্তে দিশেহারার মতই  পালিয়েছে বাঙালি জনতা। পাহাড়ের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে জনজীবন বিপন্ন  মানবতা যায় পৌঁছেছে শেষ নিঃশ্বাসে।  পাহাড়ের প্রত্যেকটি স্থানে শুধু  বারুদের গন্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, গুলির শব্দ, রক্তে লাল হয়ে যায় কাপ্তাই লেক খাগড়াছড়ি চেঙ্গী বান্দরবানের সাঙ্গু নদী।  পাহাড়ের বাঙ্গালীদের কান্না পৌছায়নি বিএনপি সরকার প্রশাসন সহ বিরোধী দল আওয়ামীলীগের কানে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহ সরকার প্রশাসন রাষ্ট্রীয় কর্তারা পার্বত্য বাঙালির সাথে কানামাছি খেলেছে।

ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র সভাপতি ও তথাকথিত শান্তিবাহিনী প্রধান সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের সাথে আলাপ-আলোচনা সহ নিজ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং  সশস্ত্র শাখার কারো সাথে যুক্তি পরামর্শ করেনি৷ এতে বাজে বিপত্তি।

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা সন্তু লারমা ও সরকারের মধ্যে হওয়া শান্তি চুক্তি মেনে নেয়নি। চুক্তির প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক ১৯৯৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফন্ট (ইউপিডিএফ)  নামে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধী একটি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করে। উক্ত সংগঠন বেশ কয়েকটি দাবি দাওয়া নিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। ইউপিডিএফ সংগঠন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করলেও বাস্তব পক্ষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের চালিয়েছে বাঙালি দমন-পীড়ন খুন অপহরণ চাঁদাবাজি হত্যাযজ্ঞ ও অস্ত্র সংগ্রহের হিড়িকে। অপরদিকে সরকারের সাথে চুক্তি পক্ষের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথাকথিত শান্তিবাহিনী শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে শান্তির পথে ফিরে আসেনি সেই পুরনো রূপে পাহাড়ে অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় চাঁদাবাজি অপহরণ নির্যাতন চালিয়েছে। ২ টি সংগঠন আলাদা আলাদা হলো কিন্ত তাদের নীতি আদর্শ সবকিছুই একই এদের মূলত উদ্দেশ্য বাঙালি দমন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং এ অঞ্চলে বাঙালি নির্যাতন করে এই অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি লাভ-ক্ষতি নিয়ে এখানে কিছু  সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করব।
সরকার ও জেএসএস সন্তু লারমা সর্বমোট ৭২ টি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর এই চুক্তি গুলোর মধ্যে রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন হয় এ ধরনের কয়েকটি চুক্তির ধারা নিয়ে আলোচনা করব। সরকার জনসংহতি সমিতি থেকে কি চেয়েছে এবং কি দিয়েছে  এ সকল বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে জনসংহতির উপর প্রধান শর্ত ছিল সরকারকে জনসংহতি সমিতি অস্ত্র জমা  দিতে হবে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য এবং চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী ৪টি বিগ্রেড কাজ করবে পাহাড়ে।

এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে।
এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধরনের সংঘাত বন্ধ করতে হবে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে যা কিছু থাকুক না কেন সরকারের দেওয়া প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা সহ বিভিন্ন ধরনের দপ্তরসমূহ সরকারের অধীনে চলবে।  সরকার চাইলে যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবেন বা বাতিল করিতে পারবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে প্রথম দাবি হচ্ছে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন হবে উক্ত পরিষদের চেয়ারম্যান হবে উপজাতি এবং পরিষদের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি হতে হবে। বাঙালি কয়েকজন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হতে পারবেন তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারবেন না। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান কে একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিতে হবে।

শান্তিবাহিনীর  সদস্য সহ শান্তিবাহিনীর সবাইকে সরকারি চাকরিসহ স্বাভাবিক জীবনে নিমিত্তে পুর্নবাসন করার লক্ষ্যে রেশন  দিতে হবে।

শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা সেসব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং কোন প্রকার মামলাতে শান্তিবাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার এবং বিচারের সম্মুখীন করা যাবে না।

পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীর সকল নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নিতে হবে এবং সব ধরনের অপারেশন উত্তোলন করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য সংমিশ্রিত বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পার্বত্য তিন জেলার তিনটি জেলা পরিষদে তিনজন চেয়ারম্যান হতে হবে উপজাতি এবং জেলা পরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্য হতে হবে  উপজাতি, বাঙ্গালীরা জেলা পরিষদে সদস্য হতে পারবে কিন্তু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারবে না।

পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ জেলা পরিষদ কে দিতে হবে এবং পুলিশ বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর আওতাধীন থাকবে না পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলো পুলিশ নিয়োগ দিবে এবং পুলিশ  দেখাশুনা করবে।

পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতিদের কোটা দিতে হবে পড়াশোনা সহ সব ধরনের নিয়োগের জন্য ৫% কোটা বরাদ্দ দিতে হবে বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগে  উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

উপজাতিদের নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠ বই চালু করতে হবে।  উপজাতিদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে এবং উপজাতিদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তিন জেলায় তিনটি কালচার একাডেমী করতে হবে।

এবং পার্বত্য অঞ্চলে একটি মন্ত্রণালয় হবে যে মন্ত্রণালয়ের নাম হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে উপজাতীয়রা অগ্রাধিকার পাবে।

এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনবিধি হিলটেক্স ১৯০০ চলবে।

পার্বত্য চটগ্রাম বাসিন্দা শনাক্ত  নাগরিকত্ব প্রমাণ ক্ষেত্রে উপজাতি হেডম্যান থেকে রিপোর্ট নিয়ে চাকমা সার্কেল চীফ থেকে সনদপত্র নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা প্রমাণ করতে হবে।

তিন পার্বত্য জেলায় ৩টি সার্কেল থাকবে।  সার্কেল চীফ বিশেষ ক্ষমতা থাকবে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সরকারকে সার্কেল চীফ  ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

জেলা প্রশাসক ডিসি কে কোন কিছু করতে হলে সার্কেল চীফ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভারতে শরণার্থী হয়ে যাওয়া সে সকল উপজাতিদের ফেরত আনতে হবে এবং তাদের বাসস্থান নিশ্চিত করার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠিত হবে সে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হবে একজন  উপজাতি যাকে মন্ত্রী পদ মর্যাদা দিতে হবে।

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিবীক্ষণ কমিটি হবে সে কমিটিতে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান কে রাখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করতে হবে কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে উপজাতি।

সমতল থেকে কোন প্রকার বাঙালি এসে পার্বত্য চট্টগ্রামের জায়গা ক্রয় করতে পারবে না।

এবং উপজাতিদের জন্য ব্যাংকের সুদের হার কমাতে হবে এবং সর্বনিম্ন সুদের হার২% নিতে হবে।

উপজাতি চাকরিজীবীদের খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান স্থানীয়ভাবে রাখতে হবে।

চুক্তির শর্তগুলো গুলো বিবেচনা করলে পরিষ্কার বুঝা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী বৈষম্যের শিকার হয়েছে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এ চুক্তির ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লাভ হলেও পক্ষান্তরে বাঙালি হয়েছে ভীষণ ক্ষতির শিকার। শিক্ষা চাকরি বাকরি সহ সামাজিক বিভিন্ন দিক দিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ে।

তবে এই অঞ্চলে বাঙালি নির্যাতিত  হওয়ার মূল
কারণ বাঙালি বিভক্তি, বাঙালি একটি পক্ষ মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলে।  পার্বত্য অঞ্চলে দুই ধরনের বাঙালি দেখা যায় এক ধরনের বাঙালি হচ্ছে সহজ সরল দেশ প্রেমিক, আরেক ধরনের বাঙালি হচ্ছে নবাব সিরাজদুল্লাহ যোগের  মীরজাফরের ভূমিকা উত্তীর্ণ হওয়া তাদের বংশধররা।  সরকার সমতল থেকে যে সকল বাঙালিদের কে নিয়ে এসে পুর্নবাসন করেছে এবং পুর্নবাসনের পরে ও শান্তিচুক্তির পরে যে সকল বাঙালি সমতল থেকে এসেছে তারা যে সবাই ভালো তা নয়।  এরমধ্যে রয়েছে সমতলে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক, মানবতাবিরোধী, দেশপ্রেমহীন, নির্লজ্জ বেহায়া, গন্ডারের চামড়া যুক্ত, জাতীর সেরা বেইমান ও মীরজাফর বংশধর।  পার্বত্য পার্বত্য চট্টগ্রামে অপতৎপরতা হিংসা  প্রতি হিংসা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা জাতিগত ভেদাভেদ এরাই তৈরি করছে এরই জন্য মূলত দেশ প্রেমিক বাঙালি দায়ী নয়।  খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান  ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সহ কোন সংকট সংঘটিত হলে এরাই উস্কানি দিয়ে  জাতিগত রূপ দেয়।  শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করে এই রকম  প্রমাণ অহরহ, বাস্তবিক তথ্যচিত্র রয়েছে।  এই মীরজাফর বাঙালি গুলা উপজাতী সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করে সামান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করে সুযোগ সুবিধাগুলো হলো সন্ত্রাসীদের চামচামি করে ছেলে মেয়েদের চাকরি দেওয়া দাদাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয় কিছু স্বার্থ হাসিল করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে সকল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ সকল খুন অপহরণ ধর্ষণ নির্যাতন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এদের সৃষ্টি। এ শ্রেণীর  বাঙালি মীরজাফরদের সাথে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে গলায় গলায় ভাব প্রতিটি বাঙালি খুন এবং অপহরণের পিছনে এরাই জড়িত।  শান্তি চুক্তির পরবর্তী  বর্তমান সময়ে এরা পাহাড়ের সংঘাত  জিইয়ে রেখেছে। এই অঞ্চলে নির্বাচিত বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি উপজাতি সম্প্রদায়ের। কিছু সংখ্যক বাঙালি জনপ্রতিনিধি রয়েছে তারা মীরজাফর দালাল সম্প্রদায়ভুক্ত। এ অঞ্চলের বাঙালি ভিত্তিক সংগঠন গুলোর মূল বাধা এই মীরজাফর দালাল শ্রেণীর বাঙালিরা। পাহাড়ে যখন বাঙালি লাশ পড়ে বাঙালি নারী ধর্ষিত হয় নির্মম নির্যাতিত হয় তখন এ দালাল শ্রেণী নীরব থাকে। অপরদিকে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর যখন উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর অপরাধগুলো যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরে ঠিক তখনই এই বাঙালি দালালগুলো বাধা দিতে আসে।  আমি জানি আমার এই লেখাগুলো বেশিরভাগ পার্বত্য বাঙ্গালীদের কাছে  তেতো লাগবে।  আঞ্চলিক একটি প্রবাদ আছে গরম ভাত দিলে বিড়াল বেজার হয়।

যতদিন পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক দলসহ সরকার নিরপেক্ষ হবে না এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে  সুচিন্তা  দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবেনা ঠিক ততদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান হবে না। এবং কোনভাবেই উপজাতি সন্ত্রাসী নির্মূল হবেনা। প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্মূলের জন্য সাঁড়াশি  অভিযান পরিচালনা করবে না।  যে যত কিছু করুক যত কিছুই বলুক শেষ কথার এক কথা এটায়।

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নাটক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নাটক কোনদিন পরিসমাপ্তি হবে না এবং শান্তি চুক্তির শেষ ভাগে কিছু ধারা বাস্তবায়িত হবে না।  পার্বত্য শান্তি চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। সরকার চাচ্ছে বাকি হাবিজাবি কয়েকটি ধারা  বাস্তবায়িত কোনমতে না হোক। যাতে ভবিষ্যৎ এই ইস্যুকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ভাবে মাঠ সরগম করা যায়। আর তাছাড়া এ ধারা গুলো কখনো বাস্তবায়িত করা সরকারের পক্ষে কোন দিন সম্ভব নয়। এ ধারা গুলো বাস্তবায়িত করতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগই বাঙালি জনগোষ্ঠী বাস্তহারা হবে এবং নিঃসন্দেহে সরকার এই অঞ্চল থেকে  অস্তিত্ব হারাবে। এই বিষয়গুলো দুই পক্ষ জানেন। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সভাপতি তথাকথিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা তিনি নিজে চাচ্ছেন শান্তি চুক্তির ধারা গুলো যাতে পরিপূর্ণ সম্পন্ন বাস্তবায়িত না হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অস্ত্র হাতে নেওয়ার আর কোন সুযোগ থাকবে না এবং খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান সহিংসতা অস্ত্রবাজি চাঁদাবাজি অপহরণ আধিপত্য অস্ত্র সংগ্রহ সহ অস্ত্র হাতে নেওয়ার মতো আর কোনো ধরনের অজুহাত থাকবে না।

শেষ কথার এক কথা পাহাড়ে বাঙালিই বাঙালির শত্রু।  যতটা না উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালির বাধা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here