এম, এ হান্নান রাঙামাটি থেকে ফিরে এসে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কেনাবেচা করতে ডিসির বাসিন্দা সনদ বাধ্যগত! এই কথাটি শুনলে হয়ত অনেকে অবাক হবেন৷ হুমমম সত্যি পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃটিশদের রেখে যাওয়া তথাকথিত হিল রেগুলেশনের মতে এমনটাই নিয়ম। আর এই ক্ষমতাবল পেয়ে হেডম্যানরা রিপোর্ট প্রদান করতে ও ডিসিরা বাসিন্দা সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের জাহির করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কেনাবেচা করতে ডিসির সনদ বাধ্যগত কেন? এমন নীতি যদি পাহাড়ে চলে তাহলে জন্মনিবন্ধন, চেয়রাম্যান সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজনীয়তা কি? হিল রেগুলেশনের দোহাই দিয়ে বর্তমান ডিসিরা স্থানীয় বাঙালিদেরও ডিসির বাসিন্দা সনদ দিচ্ছে না! বৃটিশ কর্তৃক প্রণীত তথাকথিত হিল রেগুলেশনের প্রথাগত আইনের কাছে রাষ্ট্রীয় আইন অকার্যকর হতে পারেনা! হেডম্যান রিপোর্ট ও ডিসির বাসিন্দা সনদ স্থানীয় বাঙালিদের জন্য হয়রানি ও মরণফাঁদ। স্থানীয় বাসিন্দা যাচাই-বাছাই করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র যথেষ্ট। দেশের সব জায়গা জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র হয়না! প্রথাগত আইনের দোহাই দিয়ে ইউএনও ডিসিরা বাঙালিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। যা কোনমতে কাম্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের প্রতি এই চরম বৈষম্য দূর হবে কবে? প্রথাগত আইনে নিয়োগপ্রাপ্ত উপজাতি হেডম্যান চুড়ান্ত করবে বাঙালিরা ভূমির মালিক কিনা বা স্থানীয় বাসিন্দা কিনা! তার পরে ডিসি স্থানীয় বাসিন্দা সনদ প্রদান করবে! এখানে চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রের সার্টিফিকেট পত্রকে খর্ব করা হয়েছে! জমি কেনাবেচা, চাকরি, পড়াশোনা সহ যাবতীয় কাজে পাহাড়ের বাঙালিদের জন্য বাধ্যগত ডিসির সনদ!
উপজাতীয় বাসিন্দারা সারাদেশে বিচরণ করতে পারে। জায়গা জমি ক্রয় করে বাড়ি করতে পারে শুধু মাত্র বাঙালির জন্য কেন বাধা পাহাড়ের জায়গা কেনা?
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়রা বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চলে গিয়ে জায়গা-জমি কিনতে পারে অথচ বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে কেন জায়গা-জমি কিনতে পারবে না? কেমন নিয়ম নীতি! এটা বাংগালীদের প্রতি বৈষম্য নয় কি???এক দেশে দুই আইনের কারনে আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিনিয়ত চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। কথিত প্রথাগত নিয়মের মাধ্যমে সংবিধানকে চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গা-জমি কেনার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া বাহিরের কেউ পাহাড়ে জায়গা-জমি জমা কিনতে পারবে না। অথচ উপজাতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে জায়গা -জমি কিনে স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে পারে, জায়গার মালিক হতে পারে! পাহাড়ে জায়গায়-জমি কিনতে হলে তথাকথিত রাজা দেবাশীষ রায়ের সনদ নিতে হয়। এবং হেডম্যান রিপোর্ট নিয়ে জেলা প্রশাসক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সনদ গ্রহণ করতে হয়, তার পরে জমি জমা কিনতে হয়! তো ভোটার আইডি কার্ড
জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্যকারীতা থাকলো কোথায় আর? কেন লাগবে হেডম্যান রিপোর্ট কেন লাগবে ডিসির সার্টিফিকেট ? তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জায়গা-জমি পূর্বে না থাকলে হেডম্যান রিপোর্ট ও স্থানীয় বাসিন্দা সনদ পত্র পাওয়ারও সুযোগ নেই! গোপনে মোটা অংকের টাকা হেডম্যানকে দিলে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়! এই ক্ষেত্রেই পাহাড়ের অনেক বাঙালিও জামেলায় পড়ে পিতার নামে সম্পত্তি পুত্রকে বাসিন্দা সনদ নিতে বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় দেখা যায় পিতা পাহাড়ের জায়গা বিক্রি করে দিয়েছে এক্ষেত্রে পুত্র আর পাহাড়ে জায়গা ক্রয় করতে পারেনা! জন্ম নিবন্ধন ফরম, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয় পত্র থাকার পরেও ডিসির সার্টিফিকেট পাওয়া যায় না! এই সুুুযোগে ইউএনও, ডিসিরা খবরদারি দেখাই! কিন্তু পাহাড়ের মানুষ এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে রাতারাতি স্থানীয় বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে। পাহাড়ে জন্মগ্রহণ করেও পাহাড়ে জায়গা কিনতে পারে না! আশ্চর্য জনক! এটা কেমন দেশ? যেখানে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরেও একই দেশে দুই আইন বিদ্যমান। যা রাষ্ট্রের বহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাঁওতাবাজি এবং বৈষম্যমূলক আচরণের শামিল! সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল, তথাকথিত রাজা দেবাশীষ রায় হচ্ছে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের কুখ্যাত পুত্র! যার নামে থাকা বেশিরভাগ স্থাপনা, নামফলক মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন হতে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তা সরিয়ে ফেলা হয়নি! স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও এখনো রাজাকারের নামে স্থাপনা- নামফলক রয়ে গেছে পবিত্র মাটিতে! জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে?
দেশের প্রচলিত নিয়মে বলা রয়েছে রাষ্ট্রের নাগরিক দেশের সর্বত্র অবাধে বিচরণ করতে পারবে তাতে বাধা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের মানুষ পাহাড়ে জমি জমা কিনবে থাক দূরের কথা তারা কোন প্রয়োজনে পাহাড়ে আসলে খুন-গুমের আতঙ্কে থাকে। কিন্তু কেন এমন হবে?
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও উপজাতিদের একটি বিশেষ মহলের বাঁধার মুখে পাহাড়ে উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। যারা পাহাড়ের উন্নয়নে বাঁধা দিচ্ছে তারাই আবার সমতলে গিয়ে স্বাধীন ভাবে ব্যাবসা বানিজ্য, চাকরি কিংবা বসবাস করছে। কিন্তু সমতলের একজন মানুষ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হয়েও পাহাড়ে জায়গা-জমি কিনে বসবাস করতে চাইলেও তা কখনো পারেনা। সমতলের মানুষ পাহাড়ে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইলে অগ্রাহ করা হয়! এটা কোন আইনে করা হয়? সংবিধানের নিয়মে সারাদেশে অবাধ বিচরণ করার কথা বলা হয়েছে, রাজাকার পুত্রের আইনের কাছে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন নতিস্বীকার করবে কেন?
শুধু তাই নয় উপজাতীয়রা সমতলে গিয়ে যেভাবে বসবাস করে যেভাবে বিভিন্ন কল কারখানায় চাকরি করে সেই সব কলকারখানা যদি পাহাড়ে গড়ে ওঠে তাহলে পাহাড়ের মানুষের যেরকম উন্নয়ন হবে তেমনি পার্বত্যবাসীরও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু উপজাতিদের মধ্যে বিশেষ একটি গোষ্ঠী চায়না যে পাহাড়ে কলকারখানা গড়ে উঠুক। তারা চায় সমতল থেকে কেউ যেনো পাহাড়ে না আসুক!
ভাবতেও অবাক লাগে উপজাতিরা সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরেও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, পাহাড়ে শুধু তাদের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। যেভাবেই হোক পার্বত্য চট্টগ্রামে সমতল থেকে কাউকে আসতে দেয়া হবেনা। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম একমাত্র শুধু তাদেরই বাপ দাদার সম্পত্তি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ হয়েও বাংলাদেশেরই না।উপজাতিরা যদি নিজেদেরকে তাই মনে করে তাহলে তারা কেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে অবাদে চলা ফেরা করে, জমি জমা কিনে বসবাস করে??অন্যদিকে আমরা কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে অবাধে চলা ফেরা করতে পারবো না?? আমরা কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে জায়গা-জমি কিনতে পারবো না??
এতে বুজা যায় যে বাংগালীরা চরমভাবে বৈষম্যর স্বীকার হচ্ছে। আরো প্রতিয়মান হয় যে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে নীল নকশা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা করছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে পাহাড়ে গিয়ে কেন স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারবো না! এটাকি বাংগালীদের প্রতি বৈষম্য না, সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন নয়?
রাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এই বৈষম্যের কবে হবে অবসান?
বর্তমান রাজনৈতিক দল গুলো শুধু নিজ নিজ দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাজনীতি করে ।