সূত্র News Vanguard
গত ৭ ডিসেম্বর গঙ্গাছড়া হতে ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও সড়ক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত থাকা ৩ নির্মাণকর্মীকে NLFT অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি৷ NLFT উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন।
সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, ভারতের উদয়পুর, শেকেরকোট ও মালদায়পাড়া হতে ১. সুভাষ ভৌমিক (৫০), ২. শুভল দেবেন্দ্রনাথ (৪৫), ৩. গণ মোহন ত্রিপুরা (৪০) কে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী NLFT বেরী অপহরণ করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। অপহরণের পেছনের কারণ হিসেবে বর্ণিত কাজের ঠিকাদার অপু দে বলেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও সড়ক নির্মাণ হলে অবাধে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আশ্রয় প্রসয় সহ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে যাবে যারজন্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে NLFT অপহরণ করে ৩ নির্মাণকর্মীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বেরী ডেরাই রাখে।
গত ৭ ডিসেম্বরে অপহরণের পর গত ১০ ডিসেম্বর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ কুমার দে কল্যাণপুর এক সমাবেশে বলেন, উগ্রবাদীদের বিজিপি সরকার ছাড় দিবে না। আমরা যেভাবে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে হামলা করেছি ঠিক সেভাবে বাংলাদেশের বেরী ডেরাই হামলা করবো৷ বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে NLFT বেরী ডেরা রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক শক্তি নিয়ে হলেও বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করবো আমরা৷ সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, ৩ নির্মাণকর্মীকে উদ্ধার করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চাপ প্রয়োগ করে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ কুমার দে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সাথে অপহৃতদের উদ্ধারের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ কুমার দে কথা বলেন। রাজ্যের সবার সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ভারতীয় নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য জোর চেষ্টা চালান দিলীপ কুমার দে৷ আগরতলার পুলিশ প্রধান জিএস জাদব বাংলাদেশের পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়েও কথা বলেন বলে জানা যায়।
তথ্য মতে আরো জানা যায়, ভারত প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশেকে। ভারতের উগ্রবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী বেরী আশ্রয় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে৷ ভারতের দাবি এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত এলাকা সহ অন্তত এদেশের ১০/২০ কিলোমিটার এলাকায় প্রবেশ করে ভারতের সন্ত্রাসীরা। তবে ভারতের এই দাবির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি৷
ভারতের দাবি ৩ নির্মাণকর্মীকে বাংলাদেশে থাকা NLFT শীলছড়ি ক্যাম্প হতে ২২ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় ভারতের গঙ্গাছড়া ডিবি দিয়ে ছেড়ে দেয় NLFT বেরীরা।
অপহরণ হতে মুক্তি প্রাপ্ত ৩ নির্মাণকর্মী News Vanguard কে জানায় তাদের ৭ ডিসেম্বর NLFT ৭ জন অস্ত্রধারী সদস্য অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে বাংলাদেশের ভেতরে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের ভেতরে একটি চাকমা জুম ঘরে ৩ জন সশস্ত্র অস্ত্রধারী পুর্ব হতে তাদের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল৷ চাকমা জুম করে তারা পানিও পান করে। মোট ১০ জন্য NLFT অপহরণের সাথে জড়িত বলে তারা জানায়৷ তারা আরো জানায়, তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেও ভারতীয় সিম কোম্পানির সিম ব্যবহার করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এবং অপহরণকারীরা ঠিকাদার অপু দে এর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের জন্য ১ কোটি টাকা দাবি করে৷ তাদের দাবি অপহরণকারী NLFT বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ছিল। যেখানে ভারতীয় সিম কোম্পানি গুলোর নেটওয়ার্ক ছিল।
News Vanguard জানায়, বাংলাদেশে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করলে NLFT অপহৃত ৩ নির্মাণকর্মীকে ২২ ডিসেম্বর মুক্তি প্রদান করে কোন মুক্তিপণ ছাড়া। বাংলাদেশের পক্ষ হতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ডাকে বাংলাদেশ সরকার সাড়া দেয় এবং অপহৃতদের উদ্ধার করতে সহযোগিতা করে। তবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে # সার্থকতা রেখেছে বলে ৩ নির্মাণকর্মী পণ ছাড়া মুক্তি পেয়েছে!
একটি সূত্র বলছে ভারতের অভিযোগ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের বহু বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আশ্রয় গ্রহণ করে৷ বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার জেএসএস- ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের সাথে তাদের গোপন সম্পর্ক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতীয় বিএসএফের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিজিবির তরফ থেকে বলা হয় ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা রয়েছে। এ কারণে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিবি।
বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ভারতের গুয়াহাটি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের যৌথ প্রেস বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজিবির অনুরোধের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওই সব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২২ ডিসেম্বর এই সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে আজ শনিবার ২৬ শে ডিসেম্বর। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। ওই সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
ধারণা করা হয় ভারতীয় NLFT কর্তৃক অপহরণ তাদের ৩ নাগরিকের বিষয়ে এবং বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে NLFT বেরীর আশ্রয়ের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে বৈঠক হয়।
এই নিয়ে বাংলাদেশের তরফ হতে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতের কলকাতার এক সাংবাদিক Subhra Gupta জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেএসএস মূলধারার দলের কমান্ডার অর্জন ত্রিপুরার নিকট অপহৃত ৩ ভারতীয় নাগরিক ছিল। NLFT সাথে জেএসএসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ ওই সাংবাদিক আরো জানায়, সন্তু লারমার জেএসএসের সাথে ঢাকার সমস্যা রয়েছে কিন্তু ভারতের সমস্যা নেই। তাই জেএসএসের উচিত ছিল ভারতীয় নাগরিকদের NLFT অনুরোধে না রাখা। ভারতীয় সাংবাদিকের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেএসএস।