পৃথিবীতে যদি কোন হারামখোর জাতি থাকে সেটা হচ্ছে এদেশের কিছু উশৃংখল উগ্রবাদী উপজাতি!

0

||হান্নান সরকার||

লাকিং‌মে চাকমার দাফন করণ, ম‌র্গ থে‌কে মৃত‌দেহ পিতাকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া এবং কথিত অপহরণ, বাঙ্গালীর সাথে বিবাহ সহ স্বামীর থাপ্পড়ে মৃত্যু নিয়ে যারা বারবার বাঙ্গালী মুসলিম ধর্মের রীতিনীতি নিয়ে সমালোচনা করছেন, ‘তারা কি একটিবারও পার্বত্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্তৃক হত্যার ভয়াবহ চিত্র গুলো নিয়ে কোনদিন কথা বলছিলেন?’ নিঃসন্দেহে বলা যায় তারা কোনদিন পার্বত্য ঘটনা নিয়ে কথা বলেননি। আজকে যে বিষয় নিয়ে উপজাতিদের মধ্যে একটি অংশ ও এদেশের কিছু হিন্দুরা সাধারণ উপজাতীয়দের মধ্যে বাঙ্গালী মুসলিম বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করছে তারা কোন ধরনের মানুষ তাও আমাদের জানা রয়েছে।
লাকিংমে চাকমা কোন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা নয়। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফে এবং তার স্বামীর বাড়িও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ। কেউ পার্বত্যবাসী নয়।
লাকিংমে চাকমার ঘটনাটি নিয়ে আমরা পার্বত্য বাঙ্গালী সহ দেশের অধিকাংশ মানুষ মর্মাহত। এ ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটন চাই। স্বামী যদি প্রকৃত অপরাধী হয়ে থাকে তার বিচারও চাই। এই নিয়ে কোন ছাড় নয়। কিন্তু লাকিংমে বাঙ্গালী মুসলিম ছেলেকে বিবাহ করার কারণেই হত্যার শিকার হয়েছে এধরণের বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদীত প্রচার-প্রচারণা করে সমগ্র বাঙালি জাতির সমালোচনা করা এবং পার্বত্য বাঙ্গালী সহ মুসলিমদের ধর্মীও নীতিকে ভুল ভাবে ব্যাখা দিয়ে টেনে আনা আমি মনে করি অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি কাজ।
ঘৃণা ও মুসলিম বিরোধী মনোভাব থেকে কিছু হিন্দু, নামধারী কতিপয় মুসলিম ও ‘উপজাতি উশৃংখল, অবৈধ অস্ত্রধারী, মদখোর, নেশাগ্রস্ত, মাতাল যুবকেরা এই নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য।’ মুসলিম রীতিনীতিকে চরমভাবে অপব্যাখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে তারই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে।

গত ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি অথাৎ ১ বছর পূর্বে লাকিংমেকে টেকনাফের স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহ ভালোবেসে বিবাহ করে। ভালোবেসে বিবাহ করার পর লাকিংমের পিতা আদালতে তার বাঙ্গালী মুসলিম স্বামী আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত দেওয়া হয় পিবিআইকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একজন উপজাতীয় সম্প্রদায় হতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা ছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই আদালতে প্রেরিত আর্জিতে লিখেন লাকিংমে চাকমা অপহরণ হয়নি। সে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ পূর্বক বাঙালি যুবক আতাউল্লাহকে বিবাহ করে। এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের হতে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে উপজাতীয় মারমা তদন্ত কর্মকর্তা সেসময় আদালতে আর্জি প্রেরণ করেন। পরে অপহরণ মামলা হতে মুক্তি পায় লাকিংমের স্বামী।

গতবছরের ৯-১২-২০২০ ইং লাকিংমের সাথে তার স্বামীর পারিবারিক বিষয়ে বনিবনা হয়নি তার জের ধরে স্বামী আতাউল্লাহ লাকিংমে’কে থাপ্পড় মারেন বলে খোদ আতাউল্লাহ নিজেই স্বীকার করেন। স্বামীর থাপ্পড় খেয়ে রাগান্বিত হয়ে লাকিংমে বিষপানে আত্মহত্যা করেও দাবি স্বামীর!

লাকিংমে চাকমার মৃতুর খবর পেয়ে তার পিতা টেকনাফ হতে ছুটে আসে হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু লাশ নিতে গেলে বাঁধা বাঁধে। কারণ লাকিংমের স্বামী আতাউল্লাহও মুসলিম রীতি অনুসারে দাফনের জন্য স্ত্রীর লাশ নিতে আদালতে শরণাপন্ন হয়েছেন। এদিকে লাকিংমে চাকমার পিতাও কম যায়নি। সেও নাছোড়বান্দা, মেয়ের লাশ চেয়ে আদালতে আবেদন দিলে আদালত লাশ কোন ধর্মীও রীতিতে দাফন করবে এবং লাশ স্বামী পাবে নাকি পিতা পাবে তা নির্ধারণের জন্য RAB কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়৷ RAB লাকিংমে চাকমাকে অপ্রাপ্তবয়স হিসেবে উল্লেখ করে ১৫ বছর নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়। আদালত যার ফলে লাকিংমে চাকমাকে পিতার প্রতিনিধি স্বজন চাচাতো ভাইকে বৌদ্ধ ধর্মীও রীতি অনুসরণ করে লাশ দাফনের জন্য দেয়। জানা যায়, লাকিংমে চাকমার লাশ নিয়ে তদন্ত প্রাপ্ত RAB কর্মকর্তা একজন হিন্দু, সে বিভিন্ন উপজাতীয় সংগঠন, মানবতার ফেরি করা কিছু কতিপয় মানবাধিকার সংগঠনের চাপে এবং কথিত আদিবাসী সংগঠনের চাপের মুখে লাশ পাবার কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করেছে তার পিতার প্রতিনিধিকে! আরো জানা যায় লাকিংমে মৃত্যুর ১০/১৫ দিন পূর্বে একটা সন্তানও জন্ম দেন সে। তাহলে সন্তান জন্ম দেওয়া একজন মেয়ে কিভাবে অপ্রাপ্তবয়স হয়? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? RAB এর রিপোর্ট ১৫ বছর লাকিংমে চাকমার! এর কারণে বিবাহ ও মুসলিম ধর্ম গ্রহণ নাকি অবৈধ এ প্রেক্ষিতে লাশ পেয়েছে পিতার স্বজন!

লাকিংমে চাকমার লাশ পিতার স্বজন পাবার পর এদেশে বসবাস করা বিশ্বাসঘাতকদের অবস্থান সম্পর্কে এবং এ যাত্রায় সামিল হওয়া ব্যক্তিরা কারা তা দেখুন:

“লাকিংমে চাকমা পরিকল্পিত হত্যার শিকার: মানববন্ধনে বক্তারা!

কক্সবাজারে লাকিংমে চাকমা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আজ সোমবার(৪ জানুয়ারী ২০২১) এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। দুপুরে কক্সবাজার শহরের পৌরসভা ভবন চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে বেসরকারি আটটি মানবাধিকার ও উন্নয়ন

সংগঠন।উক্ত মানববন্ধনে এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লাকিংমে চাকমা’কে বাড়ি থেকে কথিত অপহরণ, ভুয়া সনদে জোর করে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসিও দাবি করেন!

উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কথিত আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার অঞ্চলের সহসভাপতি ক্য জ অং,নারী প্রগতি সংঘের পারভীন আকতার, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি দীপক দাশ, শ্রমিক জোট নেতা এ কে ফরিদ আহম্মদ, আদিবাসী ফোরামের কর্মকর্তা মা টিনটিন ও আলো চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক অংথেন মারমা, তঞ্চইগ্যা-চাকমা ছাত্র পরিষদের সভাপতি লাতু চাকমা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মিঠুন দাশ প্রমুখ।উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি থৈন অং বুবু।”

এখন তো আর কারোরই বুঝতে বাকি নেই একটা ঘটনাকে রং দিতে কারা মাঠে নেমেছে?

লাকিংমের লাশ পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজন চুপচাপ ভাবে লাশ দাফন করার প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ করলেও একটি মহল ও উপজাতীয় উগ্রবাদীরা ‘মুসলিম বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন৷’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাকিংমে চাকমার মৃত্যুর জন্য সমগ্র মুসলিম জাতিকে ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা আরো অভিযোগ করছেন লাকিংমে লাশ নাকি টেকনাফ দাফন করতে গেলে লাশ কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে! তার জন্যই লাশ টেকনাফ না নিয়ে রামু উপজেলায় আগুনে পুড়ানো ছাড়া মাটি দেওয়া হবে! যারা এসব নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে মুসলিম বাঙ্গালীদের বাজে ভাবে দোষারোপ করছে তারা কতটুকু বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তা উপরোক্ত বিষয়াদি হতে কিংবা আলোচনায় ইতিমধ্যে অনুমান করেছেন।

একটি কথা না বললে নয়, ১৮ কোটি মুসলিম দেশে ১৫/২০ লাখ উপজাতি কতটা স্বাধীন ভাবে বসবাস করছে এবং নাগরিক ও মৌলিক অধিকার অতিরঞ্জিত সুযোগ-সুবিধা কিভাবে ভোগ করে যাচ্ছে তাও কারোরই অজানা নয়। এত অতিরঞ্জিত সুযোগ-সুবিধা! যেটা রাষ্ট্রের মূল জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীও পাচ্ছে না।
দুঃখজনক যে, উগ্রবাদী, অসুস্থ ও বিবেকহীন মানুষ কর্তৃক লাকিংমে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি না করে সমগ্র মুসলিমকে দোষারোপ করে দায়ী করা কতটুকু যৌক্তিক দাবি?

পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কোন একটি ঘটনা ঘটলে যেভাবে বাঙ্গালীর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয় ঠিক সেভাবে দেখতেছি সমতল কক্সবাজারের টেকনাফের লাকিংমে চাকমার বিষয়টিতে করা হচ্ছে৷ অসাম্প্রদায়িক দেশে এসমস্ত দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক মতবাদ লালনকারী এরা করা? যারা বারবার পাহাড়ে ও সমতলে সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে তৎপর! প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি অতিদ্রুত এদেরকে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়ার। না হয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ভর করবে।

সর্বশেষ বলতে চাই লাকিংমে মৃত্যুর ঘটনা যদি হত্যাকান্ড হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে উদঘাটন করে তার স্বামীর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More