চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে হামলার চেষ্টা করা হয়।

0

হান্নান সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম

চিম্বুক পাহাড়ে সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের কাজকে বানচাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তথাকথিত গণমাধ্যমও তা প্রকাশ করছে! অনেকেই আবার মূল বিষয়বস্তু না জেনে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন৷ বিষয়টি নিয়ে ঘোলা পানিতে যেমন মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে, তেমনিই অপপ্রচারও চলছে সমান তালে। প্রকৃত ঘটনাটি তুলে ধরার জন্য এবং বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য মূলত আমার দীর্ঘ লেখা:

গত ৫ জানুয়ারী বুধবার আসলে কি ঘটেছিল বান্দরবান চিম্বুক পাহাড়ে? এক মিনিট তেরো সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক গুলো মানুষের সঙ্গে উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট এলাকায় শ্রমিক ও সেনাসদস্যের বাকবিতন্ডা চলার মূহুর্ত।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমি গোপনে প্রকাশ্যে কথা বলি অনেকের সাথে। নিরাপত্তা জনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন উপজাতীয় কার্বারীর সাথে আমার কথা হয়।
কার্বারী জানান, সরকার সিকদার গ্রুপের মাধ্যমে পাহাড়ে পর্যাটন শিল্প বিকাশে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ, পার্ক নির্মাণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সরকার হতে নির্দেশ পেয়ে প্রজেক্ট এর অন্যতম অংশীদার সিকদার গ্রুপ ২০ একর খাস ভূমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। অনাবাদি তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত, খাস ভূমি লিজ প্রদানকারী পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদও ব্রিফিং করে পরিষ্কার করে চুক্তির কথা। কিন্তু তবুও কেন জানিনা সন্ত্রাসীরা ও এদেশের কিছু বুদ্ধি ফেরি করা কতিপয় ব্যক্তি অহেতুক ভাবে পর্যাটন শিল্পের বিরোধিতা করছে কিজানি!

সেনাবাহিনীর এখানে কোন ভূমিকা নেই, তারা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সহযোগী হিসেবেই সম্প্রীতি, উন্নয়ন আর আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য এখানে নিয়োজিত। সেনাবাহিনীর দেশ-বিদেশ সুনাম ও অর্জন রয়েছে৷ সচ্ছল এবং পরিপাটি একটি বাহিনী তাই সরকার তাদের মাধ্যমে পর্যাটন শিল্প বিকাশ সহ নানান কাজ সম্পাদনের জন্য দায়িত্ব দেন। পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কারণেই সন্ত্রাসীদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে সমস্যা, তাই তারা এখানে সবকিছুর বিরোধিতা করে। এমনই দাবি করেন উপজাতীয় কার্বারী।

সিকদার গ্রুপ লিজকৃত ভূমিতে উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে। গত বছরের ২০২০-এ ডিসেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ইন্ধনে স্থানীয় ম্রো উপজাতি কালচার শোডাউনের মাধ্যমে বর্ণিত প্রজেক্টের চলমান কাজ বানচাল করতে প্রচেষ্ঠা করে৷ কিন্তু সরকারের দৃঢ় অবস্থানে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। প্রজেক্টের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ প্রজেক্টের কাজ বানচাল করতে পুনরায় সন্ত্রাসীরা আবারো পরিকল্পনা করে!
এরজন্যেই গত ০৬ জানুয়ারী বুধবার স্থানীয় ম্রো উপজাতি সম্প্রদায়ের কিছু উগ্রবাদী কতিপয় যুবক এবং সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট লোকজনের সমন্বয়ে একটি গ্রুপ সরকার কর্তৃক নির্দেশিত প্রজেক্টে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কাজটি বন্ধ করার তৎপর ছিল৷ জোর প্রচেষ্টাও করে কাজ বন্ধ করতে। ফুলের ঝাড়ু কাটার বাহানা করে উক্ত প্রজেক্টে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর হামলার প্রচেষ্টা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। ফুলের ঝাড়ু কাটতে এত মানুষের প্রয়োজন নেই৷ অথচ চিম্বুক পাহাড়ে বিভিন্ন স্থান হতে হাজার মানুষ জড়ো করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং প্রকল্পের কাজে বাধাগ্রস্ত করতে মানুষ জড়ো করে একটি বড় ধরনের জামেলা পাকানোর চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা উগ্রবাদী উশৃংখল যুবকদের ও তাদের মদদপুষ্ট লোকজনদের উস্কানি দিয়ে চেষ্টা করেছিল বড় ধরনের জামেলা পাকানোর জন্য। কিন্তু সেনাসদস্যরা ধৈর্যসহকারে সন্ত্রাসীদের পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। সেনাসদস্যের ধৈর্য পরীক্ষা ও সহনশীলতার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি কাল।

উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিরসন করতে সেনাসদস্যরা বারবার উত্তেজিত উশৃংখল যুবকদের বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং এ ভূমি যে তাদের তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে বলেন, কিন্তু উপস্থিতি উশৃংখল যুবকেরা সেনাসদস্যের কথা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে খামখেয়ালি ভাবে ভূমি তাদের দাবি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। উক্ত ভূমি যে ম্রোদের তার কোন বৈধ কাগজপত্রও তারা দেখাতে পারেনি! প্রথাগত নিয়মের দোহাই দিয়ে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ভূমি তাদের দাবি করা যেমন হাস্যকর তেমনি মগের মুল্লুক। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’টি সন্ত্রাসীরা পরিকল্পনা ভাবে সেনাবাহিনীর নামে কুৎসা রটানোর জন্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সহ সবধরনের উপস্থিতি বন্ধ করতে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ভিডিও৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ব হতে প্রস্তুতি নিয়ে প্রজেক্টের কাজ করা শ্রমিকদের উপর হামলা করে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।

স্থানীয় ম্রো উপজাতিরা খুবই শান্ত স্বভাবের, তারা এতটা উগ্রবাদী নয়। এখানে যারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেছে সবাই উগ্রবাদী, এবং সন্ত্রাসী মদদপুষ্ট লোক।

বাংলাদেশ কোথায় মানুষ সেনাবাহিনীর উপর এভাবে তেড়ে আসার সাহস পায়না৷ অথচ উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী মদদপুষ্ট লোকেরাই সেনাবাহিনীর উপর তেড়ে আসে হামলা করতে। সেনাবাহিনীর ধৈর্য ও সহনশীল আচরণে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More