পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাঙ্গালীর গণজাগরণও আমি প্রত্যক্ষ করি।

0

পারভেজ মারুফ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী গণজাগরণের রুপকারও ছিল আমার পরিবার। আমি সে জাগরণের নবীন সদস্য হিসেবে ২০০১ সালে যোগ দিয়েছিলাম পার্বত্য জাগরণে। আমি যে বছর বাঙ্গালী জাগরণে যোগ দিয়েছিল সেবছর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার মামলার আসামী হয়ে এবং গ্রেফতার এড়াতে হাজার হাজার বাঙ্গালী গৃহছাড়া হয়! সেদিনের দুঃস্বপ্ন এবং অপ্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমার বাপ-চাচারা জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়েছে। অথচ আজ এ-যুগের লুটেরা তা অস্বীকার করে!!

২০০৬-এর পর হতে আমি পার্বত্য বাঙ্গালী জাগরণে ২০১২ সাল পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ছিলাম। ২০১২ সালের পর এক দমকা হাওয়াই আমি পার্বত্য বাঙ্গালী জাগরণ হতে ছিঁটকে যায় স্বজাতি/বাঙ্গালী দালালদের কারণে। ২০১২ পর পতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি মামলা-হামলার কারণে নির্বাসনে চলে যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে৷ আমি যাওয়ার পর সুসংগঠিত একটা জাগরণ ভেস্তে যায়। ২০১৫ সালের পর আবার চেষ্টা করে কিছুটা সফল হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, স্বজাতি বাঙ্গালী দালাল আর উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। তাই আমাকে থামতে হয়েছে।

আমার পার্বত্য যাত্রায় আমি যতোটাই বাঙ্গালী কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলাম, ততটা কিন্তু উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হইনি। দুঃখটা আমার এখানে। যাদের জন্য চুরি করলাম তারা চোর উপাধি দিল। আমি বাঙ্গালী জাগরণে অংশ নিতে গিয়ে বারবার ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। একটা সময় আমার পরিবার ও আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়তে হবে! বিষয়টি রাষ্ট্রের উচ্চ মহল জানার পরে আমাকে পার্বত্য রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যদিও এরমধ্যেই আমি জীবন হতে অনেক কিছু হারিয়েছি। আমার অর্থ-সম্পদ সবকিছু বিলিয়ে দিতে হয়েছে। আমাকে মাথা নত করে থাকতে হয়েছে। আমাকে চালকের আসন থেকে ভিখারির আসনও গ্রহণ করতে হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে রাষ্ট্র, সেনা ও বাঙ্গালীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে আমি বাঙ্গালী জাতি হতে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে ট্যাগ/উপাধি পেলাম। আমাকে নাগরিক ও মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করার সময় অহেতুক খোঁড়া যুক্তি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে! সরকারী সুযোগ-সুবিধা আমার নামে বরাদ্দ হলে তা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আটকে যায়! পার্বত্য নিয়ে সাধারণ বাঙ্গালীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে সব হারিয়েছি। আমার ভালো একটি ইটের বাড়িও নেই৷ জাতির অধিকারে কাজ করতে গিয়ে মামলা-হামলার বাধা আমাকে অর্থনৈতিক দূর্বলের দিকে ধাবিত করে

রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমাকে দিয়ে অনেক কঠিন কাজও আদায় করা হয়েছে। কিন্তু সময়ে আমার যে মূল্য থাকে অসময়ে আমার সে মূল্য থাকে না!!

পার্বত্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বেশিরভাগ সময় নিজের পকেটের টাকা ও পরিবারের অর্থ নষ্ট করেছি৷ বিনিময়ে বিভিন্ন মহলের কিছু কতিপয় অকৃতজ্ঞ লোকদের চোখ রাঙানি খেয়েছি। সেসব কথা না বলাই শ্রেয়ই৷ কত লোকের চাকরি বাঁচিয়েছি আমার পার্বত্য জীবনে।

পার্বত্য নিয়ে কাজ করে আমার যে অর্জন সে অর্জন অন্য কারোরই থেকে কোন অংশেই কম নই। আমি উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করে বাঙ্গালীর ন্যায অধিকার দাবি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রের ভিত শক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমার একাজে হাতে গোনা ২/৪ জন অখুশী হতে পারে কিন্তু ৯৫ % মানুষ আমাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে। সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রবাজ, রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমি কাজ করি। আমার একাজ ভালোবেসে তিন পার্বত্য জেলার ২৬ টি উপজেলার উপজাতীয় নারী-পুরুষ আমাকে গোপনে-প্রকাশ্যে তথ্য আদান প্রদান করে যায়৷ আমার কাছে যে তথ্য আসে তা অন্য কারোরই কাছে যথাসময়ে আসার কথা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সম্পর্কে যে কোন তথ্য সর্ব প্রথম আমার কাছে আসতে হবেই। এটা আমি আমার জীবনের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে অর্জন করেছি৷ নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সোর্স লালন পালন করেছি। আমি এখন সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিলে এখনো হাজারো মানুষ ছুটে আসে। কারণ আমি জানি আমি কি জিনিস, আমার প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More