১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরে অনেকেই আশার বুক বেধে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও সেতুবন্ধন মজবুত হবে। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ ও সারি সারি লাশে পাহাড়ের পরিবেশ ভারী ছিল৷ এমন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চুক্তি পার্বত্যবাসী সহ দেশবাসীর জন্য তৎকালীন সুখময় খবর ছিল। কিন্তু এ নিয়ে সংশয়ও ছিল, কারণ পার্বত্য চুক্তির পরেও উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধ অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে কিনা এবং সরকার জেএসএসকে যেভাবে অসাংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পার্বত্য বাঙ্গালীদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে সে হিসেবে এ চুক্তিকে অনেকেই আবার দেশবিক্রির কালো চুক্তি বলেও আখ্যায়িত করেছিল৷
সরকার পার্বত্য বাঙ্গালী ও দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর কথা না শুনে একতরফা ভাবে জেএসএস সন্তু গংদের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তিতে প্রধান মৌলিক শর্ত ছিল জেএসএস সম্পনভাবে অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক যে, পার্বত্য চুক্তির ২৩টি বছর অতিবাহিত হলেও জেএসএস সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দেয়নি! জেএসএসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকার স্বত্বেও সরকারের তরফ হতে জেএসএসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগও করা হয়নি৷ বরং জেএসএস সরকারকে সম্পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণেই অভিযুক্ত করেছে! সরকারের দাবি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়িত, ১২ টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত, বাকি ধারা গুলো প্রতিক্রিয়াধীন।
-
অবৈধ অস্ত্র নিয়ে দাবা খাচ্ছে পাহাড়ের উপজাতীয় সন্ত্রাসী।
চুক্তির সময়ে সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দেওয়া এবং না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে খোদ সন্তু লারমা নিজেই বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর সাংবাদিক শামীম বিনতে কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমরা চুক্তি সময়ে সম্পন্ন অস্ত্র জমা দিইনি। আমাদের এখনো কয়েকশো সশস্ত্র জনবল রয়েছে! সন্তু লারমার এমন স্বীকারোক্তিও সরকারের পক্ষ হতে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়নি! এই নিয়ে অধিকার বঞ্চিত পার্বত্য বাঙ্গালীরা সহ দেশের বিভিন্ন মহল বারবার বলছে পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে সন্তু লারমার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রয়োজন এবং পার্বত্য চুক্তির অসাংবিধানিক ধারা গুলো সংশোধন করা হোক৷ যদিও সরকার এ বিষয়টি কর্ণপাত করেননি। সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় সরকার যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। জেএসএস যেটা এখন করছে সেটা বারাবাড়ি ছাড়া কিছু নয়।
পার্বত্য চুক্তির সময়কালীন সময় ছিল শুধু জেএসএস সন্তু। চুক্তির পরে চুক্তির বিরোধিতা করে গঠিত হয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ১৯৯৮ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে চুক্তির বিরোধিতা করে যাত্রা শুরু হয়।
-
অবৈধ অস্ত্র সহ নিক্সন চাকমা
সন্তু লারমার নেতৃত্বধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খিসা পার্বত্য চুক্তিকে অস্বীকার করে এ ইউপিডিএফ গঠন করে। ইউপিডিএফ গঠন করার পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র জোরদার, অপহরণ, খুন-গুম, চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা সহ দেশ হতে “পার্বত্য” বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷
২০০৬ সালে সন্তু লারমা হতে সুধা সিন্ধু খিসার নেতৃত্বে একটি অংশ সন্তু লারমাকে বর্জন করে জেএসএস সংস্কার এম.এন গঠন করে৷ তাঁরাও আদর্শ গতভাবে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ, চাঁদাবাজি ও অপহরণ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি করে।
২০১৭ সালে ইউপিডিএফ প্রসিত হতে তপন জ্যোতি বর্মা ও জলেখা চাকমা তরুর নেতৃত্বে একটি অংশ ইউপিডিএফ প্রসিতের বিরুদ্ধে অনেক গুলো মারাত্মক অভিযোগ এনে তারা ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে আত্মো প্রকাশ করে।
২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত, রক্তাক্ত ও উপজাতি গ্রুপ গুলো একে অপরের প্রতি গোলাগুলি করবে না এবং একে অপরের এলাকায় অনুপ্রবেশ করবে না শর্ত মোতাবেক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আলোকে বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আজ পর্যন্তু জেএসএস সন্তু ও ইউপিডিএফ প্রসিত কোন প্রকার সংঘর্ষ জড়ায়নি। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি একদম ঘটেনি চুক্তি ফলে। কিন্তু ২০২০ সালের আগস্টে এসে চুক্তির কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিমত সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যেই। খাগড়াছড়ি পানছড়ি জেএসএস সন্তু আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে ইউপিডিএফ প্রসিত বাধা দেয়৷ এই নিয়ে দু’টি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। দুটি সশস্ত্র গ্রুপের সাইবার গ্রুপ একে অপরের প্রতি বিষোদগার প্রকাশ করে। এটা নিরসনের লক্ষ্যে তারা আবারও গোপন চুক্তি চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে। ইউপিডিএফ-এর পক্ষ হতে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ও জেএসএস সন্তুর পক্ষ হতে সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার ঐকমত চূড়ান্ত করেছে৷ এ চুক্তির মধ্যে জেএসএস সংস্কার এম.এন কে নিয়ে আসারও তাগিদ রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ বিভাজন সৃষ্টি না করার জন্য ঐক্যের পথে হাঁটছে। খাগড়াছড়ি দীঘিনালা, পানছড়ি, নানিয়ারচর সহ বেশকিছু এলাকায় গোলাগুলি বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা যায়।
সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোনঠাসা করতে এবং নিরাপত্তা বাহিনী সহ এ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের উৎখাত করতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলো ঐক্যের দিকে যাচ্ছে৷ কিন্তু এ ঐক্য শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয় বরং সাধারণ উপজাতিদেরও বিরুদ্ধে। ঐক্যের ফলে পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুন-গুম ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা কিন্তু থামবে না৷ সাধারণ উপজাতি বাঙ্গালী উভয় জনগোষ্ঠীর রক্ত চুষে খাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
সূত্রের তথ্য মতে আরো জানা যায়, অবৈধ অস্ত্রধারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাঁদাবাজির একটি আখড়া বানিয়েছে। অবৈধ অস্ত্র বৃদ্ধি করছে এবং প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র বিরোধী গোপন প্রকাশ্য তৎপরতা বৃদ্ধি করছে৷ এসব থেকে দেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু ক্যাম্পে পুনরায় জনবল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী জোরদার করা হয় তাহলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর চাঁদাবাজি, অপহরণ সহ অপতৎপরতা চালাতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। তারজন্যেই মূলত সন্ত্রাসীরা বর্তমানে ঐক্যের পথে হাঁটছে বলে জানা যায়৷
তাদের এ ঐক্য যে, চাঁদাবাজির পথ সুগম করার জন্য আর লোক দেখানো সেটা পরিষ্কার করার জন্য, তাদের কিছু কুকীর্তি তুলে ধরছি…
জেএসএস চুক্তির সময় বলেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে তারাই উপজাতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তারা ব্যতীত কেউ নেই। এখন আবার ইউপিডিএফ কোথা থেকে আসলো? ইউপিডিএফ কেন চুক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করছে? এরা কারা? জেএসএস ইউপিডিএফের গুলিতে এতোদিন যেসকল উপজাতি বাঙ্গালী নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ কে নিবে? তাদের ক্ষমতা লড়াইয়ের মাঝখানে কেন নিরীহ মানুষ প্রাণ দিবে? আমরা যদি এ বিষয় গুলো নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করি তাহলে ফলাফল দাঁড়াবে যে, ‘জেএসএস ইউপিডিএফের শীর্ষ পর্যায় শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিও মানুষের রক্ত চুষে খেতে চাই, তার জন্য তারা চাঁদাবাজি করে এবং আধিপত্য ও চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি করতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।’ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জেএসএস ইউপিডিএফের ভাঁওতাবাজির বলি কেন বারবার সাধারণ পার্বত্যবাসীকে হতে হবে? তারা জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে বরং স্বজাতি থেকে চাঁদাবাজি করে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাঁদাবাজির মঞ্চ করে ফেলছে তারা। জাতির স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধতা চায়না, তারা ঐক্যবদ্ধতা চায় শুধু চাঁদাবাজি করার জন্য। এক্ষেত্রে তাদের বাধা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের এ ভন্ডামি পার্বত্যবাসীর কাছে উন্মোচিত।