পার্বত্য বাংগালীরা নিজের অস্বস্তি ও আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে বিবেক জাগ্রত করতে অক্ষম!
-
ছবি : নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংগৃহীত
সালটা সম্ভবত ২০১৩ হবে, ৭ বছর পূর্বের কথা। ঢাকা থেকে একদল গবেষক ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিরা সঙ্গে রয়েছে জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করে এমন কিছু ব্যক্তি, ছাত্র, লেখক সহ একদল সমতলের নাগরিক পাহাড়ে আগমণ করেন। তাদের পাহাড়ের আগমণের মূল উদ্দেশ্য ছিলো পাহাড়ের সমস্যা সংকট, ভূমি বিরোধ ও সংঘর্ষ গুলোর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান বিষয়ে স্থানীয় উপজাতি- বাংগালী নেতা হতে শুরু করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রকাশ্যে গোপনে কথা বলা। এখানকার বিরাজমান পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা সহ সন্ত্রাসীরা কি ধরণের হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন করে এসমস্ত দিকগুলোর বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য দীর্ঘ ৩ মাস পার্বত্য সফরে আসেন। এরমধ্যে ২-৩ মেধাবী তরুণ ছাত্রও রয়েছে তারা Oxford University পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার সাবজেক্ট নৃ-গোষ্ঠী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয় এবং একটি অঞ্চলের জনপদের বিরাজমান পরিস্থিতি সমাধান সম্পর্কে গবেষণা করা। আগত বিভিন্ন পেশাজীবির দলটি রাংগামাটি জেলায় আগমণ করার পূর্বে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় তাদের গবেষণার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও এখানকার পরিস্থিতি জানতে কাজ করেন। রাঙ্গামাটি এসে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট-এর উষা ইনস্টিটিউটে থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেন তারা। তাদের কাজ ছিলো নিজেরা সবাই মিলে রান্নাবান্না করে খেয়ে সকাল ৯টার মধ্যে গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যে যার যার মত লোকালয়ে প্রবেশ করে এখানকার বাস্তবতা সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা নেওয়া। প্রয়োজনে ছদ্মবেশে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের হাইড রেখে তারা তাদের এ গবেষণা মিশন যাত্রার উদ্দেশ্য সফল করবেন। তাদের যে ভাবনা সেই কাজ। তারা রাংগামাটি কলেজগেট, ভেদভেদি, বনরুপা, সুখিনীলগঞ্জ, আসামবস্তি, রাঙ্গাপানি, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজার, বন্দুকভাংগা, কদুকছড়ি সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে গিয়েও কাজ করেছেন। যাত্রা সফল করার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের সাথে তারা একপ্রকার কথা শেষ করে ফেলছেন।
রাংগামাটি জেলায় গবেষণা দলটি প্রশাসন ও কিছু নেতৃত্ব শ্রেণী ব্যক্তি সহ সংগঠন গুলোর সাথে কথা বলা প্রথম থেকে বাদ রেখেছে কৌশলগত কারণে। এর কারণ তারা এখানকার উদ্দেশ্য যাত্রা যাতে প্রথম যোগাযোগের ফলে বেঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রেখে মূলত প্রথম থেকে কথা বলা থেকে বিরত ছিলো। যতসম্ভব বিদায় নেওয়ার আগ মূহুর্ত করে এখানকার সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে কথা বলে রাংগামাটি ত্যাগ করবেন এমনই ছক তারা ঢাকা থেকে যাত্রা করার পূর্বে কষে ছিলেন ।
তাদের সব কাজ শেষ করে তারা আমার বাসায় এসে কড়া নাড়ল। যে কোন এক পরিচিত ব্যক্তির পরিচয়ে তারা আমার কাছে এসেছিলেন। গবেষক দলের সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিলনা। তাদের সম্পর্কে আমি কিছু জানতাম না। ঢাকা হতে তারা আগমণের কারণ উদ্দেশ্য জানালো কেবল আমার বাসায় আসার পর। পাহাড়ে গবেষণার কাজে এসে মিশন যাত্রার শেষ প্রান্তে এসেছে বলে জানান। এখন এসেছে আমার সাথে কথা বলবে এবং আমার সহযোগীতায় সর্বশেষ একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন যিনি বর্তমান পেশায় শিক্ষক হলেও একসময় সন্ত্রাসী গ্রুপে কাজ করেছেন। সন্ত্রাসী গ্রুপে কাজ করা শিক্ষক থেকে তৎকালীন সময় এবং বর্তমান সময়ের ফারাক জানবেন।
সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে তাদের কথায় সায় দিয়ে তাদের আমার সঙ্গে রেখে থাকা খাওয়া ও ঘুরাঘুরি করিয়ে নিলাম। এদের সমাদর করার কারণ এক সম্মানিত লোকের নির্দেশে তারা আমার কাছে এসেছে। মূলত যার কারণে কোনকিছুতেই কমতি রাখিনি।
আমি প্রথম দিন তাদের গতিমত অনুভব করতে না পারলেও ঠিকই দ্বিতীয় দিন হতে তাদের গতিমত মনের হালচালটা অনুভব করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের দলের মধ্যে ৩-৪ জন নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও বাকী সবার মনে বাংগালী ও সেনাবাহিনীর প্রতি চরম ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা আমি অনুভব করেছি প্রত্যক্ষভাবে। এরপর তাদের সবাইকে আমার সামর্থ্য মত সম্মান দেওয়া এবং খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ সময়ই দিয়েছি। অথাৎ আমি তাদের এমনভাবে সম্বোধন করেছি, এবং কথা বলেছি তারা যেন কোনভাবেই বুঝতে না পারে আমি নিরেপক্ষ নয়। আমার তাদের কথাবার্তা আচরণ দেখে সন্দেহের তীর ঘনীভূত হল। তাই আমিও তাদের অন্তরালের ব্যক্তিসত্তাটি বাহির করতে নানান রুপ ধারণ করেছি। ৩-৪ দিন যাওয়ার পর আমার অবস্থান এবং হালচাল তারা পজিটিভ ভাবে অনুভব করে আবেকবশত হয়ে তারা ৩ মাস তাদের কাজের নোট প্রকাশ করলেন আমার নিকট।
তাদের প্রধান বক্তব্য এখানকার পার্বত্য বাংগালীরা মানুষের মধ্যে পড়ে না! এমন কথার শুনে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। এরা প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও যুক্তিঝাড়ু দিয়ে কারণ হিসেবে জানাল, পার্বত্য বাংগালীরা সংঘবদ্ধ নয়। এমনকি কেউ কাউকে পরোয়া বা আত্মসম্মানবোধ দেখিয়েও চলে না। একজনের পেছনে অন্য জন লেগে থাকে আটা ময়দার মত। নেতৃত্বহীন ও বিবেকবানহীন এক জাতিতে পতিত হয়েছে পার্বত্য বাংগালীরা। বাংগালীদের কথাবার্তার ধরণ ও মনমানসিকতা একদম নগন্য। আর বাংগালীরা যা করে তা অনভিপ্রেত! একথা শুনে আমি কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ইতস্তত বোধ করি।
গবেষণার কাজে আগতদের ভাষায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ উপজাতিরা “আদিবাসী”! তাদের অভিযোগ এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কতিপয় আদিবাসীদের ভূমি দখল বাংগালীরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় করে থাকেন! আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ সেনাবাহিনী-বাংগালী মিলে করেন। নারী ধর্ষণ, ভূমি দখল ও আদিবাসীদের উপর হামলা-মামলার মূল কারণ রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিলুপ্ত করার চক্রান্ত। তাদের এ বক্তব্যর সেইদিন আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। প্রতিবাদ জানিয়ে বললাম আপনাদের এ উস্কানিমূলক একপাক্ষিক কথা ও পক্ষপাত অনুবাদনের পেছন মূল কারণ আপনারা শুধু একটি সম্প্রদায়ের বক্তব্য আমলে নিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে এসেছেন যোগসাজশের মাধ্যমে। উপজাতি-বাংগালী উভয় সম্প্রদায়ের সমানতালে বক্তব্য বা গোপনে প্রকাশ্যে মতামত নেননি। পক্ষান্তরে একটি কাল্পনিক, অস্তিত্বহীন ও বানোয়াট নোট গ্রহণ করে মনে বাংগালী- সেনা বিদ্বেষ মনোভাব অনুবাদন করেছেন। তাদের এই দলে রয়েছেন একজন প্রবীণ, যার বয়স ৬০ এর কাছাকাছি হওয়ার কথা। তিনি বলেন, “আমরা প্রথম থেকে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এ মিশন যাত্রায় আমরা উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, এবং যাঁরাই এই অঞ্চল নিয়ে অবগত আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলা প্রায়ই শেষ করেছি। গোপনে প্রকাশ্যে সবার মতামত নিয়েছি। কার্যক্রম সমাপ্ত করে এখন পার্বত্যাঞ্চল ত্যাগ করার পালা।” তাদের এই নিন্দনীয় বক্তব্যর জেরে আমি জিজ্ঞেস করলাম উভয় সম্প্রদায় নিয়ে আপনাদের তথ্য এবং মনের অন্তরাল এত তফাৎ কেন? প্রবীণ ব্যক্তি দলের সবাই মিলে জানালেন, “উপজাতি সম্প্রদায় তাদের যথেষ্ট আন্তরিকতার সহিতে আদিবাসীদের সমস্যা ও মানবেতর জীবনযাপন, বাংগালী কর্তৃক ভূমি দখল, ধর্ষণ, লুটপাট, বিভিন্ন সময় অগ্নিসংযোগ, সেনাবাহিনী কর্তৃক হামলা গ্রেফতারে তারা এক বিলুপ্ত জাতির পথে এমনসব সমস্যা গুলো প্রমাণ সহকারে জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এখনো সেনা শাসন জারি রয়েছে! যেটা এদেশের সমতলে নেই।” তাদের এ বক্তব্যে জবাবে আমি বললাম এ কথাগুলো কি সাধারণ উপজাতি হতে প্রাপ্ত নাকি সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘবদ্ধভাবে উপজাতিদের একাট্টা করে এ বয়ান আপনাদের গিলিয়েছে??? স্বাধীন দেশে যদি দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক বিচ্ছিন্নতাবাদী জেগে উঠে তখন রাষ্ট্র বা সেনাবাহিনীর করণীয় কি??? তাদের মতামত রাষ্ট্র তাদের দাবিদাওয়া মেনে নিলে তাতে নাকি বিরোধ মিটি যাবে!
তখন ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার কথা সরণ করিয়ে দিলে চুপচাপ হয়ে যায় সবাই। সুযোগে পেয়ে আমি তাদের চেপে ধরে এতোদিনের তাদেরসংগ্রহ করা সমস্ত তথ্য-উপাত্ত জানতে চাই।
কিছুক্ষণ থেমে কালক্ষেপণ করে বিশদভাবে বলেন, “উপজাতিরা সবাই ঐকবদ্ধ তাদের কথা বলার ধরণ, চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা-দিক্ষা সবকিছু বাংগালীর চেয়ে অনেকাংশে এগিয়ে। আমরা যত গুলো উপজাতি গ্রামে গিয়েছি কোথাও দেখিনি এমনকি আমাদের চোখেও পড়েনি তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি অশ্রদ্বার বহিঃপ্রকাশ। কেউ কাউকে হেয় প্রতিপন্ন বা ডিনাই করে কথা বলতে। একজন যেটা বলে সবাই সেটা সুশৃঙ্খলভাবে সমর্থন দিয়ে শোনে, এবং উপস্থাপন করে জোরালোভাবে। কিন্তু ও অধিকিন্তু বাংগালীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সেই একাট্টা বোধ ও শ্রদ্বা দেখেনি। বরঞ্চ আমরা যখন একটা হাউসে কিছু জানার জন্য চেষ্টা করেছি তখন দেখেছি এক বাংগালী অন্য বাংগালীর মুখের উপর কথা বলতে। তাছাড়া একজনে কথা বলার সময় অন্যজনে মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে! বাংগালীদের যতটা জানতে চেষ্টা করেছি ততটা অপদস্ত হতে হয়েছে। বাংগালীদের উশৃংখলতা ও একের প্রতি একের আক্রমণাত্বক মনোভাব থেকে অনেক সময় আমরা তাদের কথা নোট নিতেও বিরক্তবোধ করেছি। আমাদের সঙ্গে কথা বলার বিষয় নিয়ে এক বাংগালী আরেক বাংগালীকে মারতে পর্যন্ত চেষ্টা করেছে! এই থেকে পরিষ্কার যে এখানকার বাংগালী উশৃংখল, হিংসাত্বক, অশিক্ষিত এবং দখলবাজ। নিজেদের মধ্যে ভাতৃবোধ নেই। জানতে চেয়েছি প্রাসঙ্গিক কথা কিন্তুও ঘুরে ফিরে সেই একই কথা বারবার বলে বাংগালীরাই। আওয়ামীলীগ- বিএনপির কিচ্ছা কাহিনী মামলা-হামলা নিয়ে যতসব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বাংগালীদের মধ্যে। আওয়ামীলীগ- বিএনপি নিয়ে আদিবাসীদের মধ্য হতে কোন মন্তব্য আমরা শুনিনি! তারা জাতীয় রাজনৈতিক নিয়ে কথা বলতে একদম উৎসুক নয়। অথচ পার্বত্য বাংগালী মূল বিষয় বস্তু না বলে বারবার আওয়ামীলীগ- বিএনপি কিচ্ছা কাহিনী বলে যাচ্ছে। পার্বত্য বাংগালীদের আওয়ামীলীগ-বিএনপি করার এমন কি দরকার? জাতীয় রাজনীতি করবে না কেন! তবে হ্যাঁ অবশ্যই করবে। কিন্তু দলকানার মত বিবেকবুদ্ধি নিমজ্জিত করে কি রাজনীতি?
নিশ্চয়ই আদিবাসীদের জায়গা জমি দখল করে সেটেলার বাংগালীরা আরাম-আয়েশে আছে, তাই তাদের মধ্যে সংকট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোন সমস্যার আভাস অনুভূতির স্থির লক্ষনীয় হয়নি। যার প্রেক্ষিতে পার্বত্য বাংগালীরা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত।
আরেকটা প্রসঙ্গ বারবার বাংগালীরা বলছিলো, সেটা হলো হিল ভিডিপি নিয়ে। এ নিয়ে এখানকার বাংগালীদের বক্তব্য সরকার হিল ভিডিপিকে রেশন ও যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে বেতন-বাতা প্রদান করেনা কেন?
তাদের এ কথাটি মনে রাখা উচিত সরকার তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তৎকালীন হিল ভিডিপির প্রয়োজনীয়তা ছিলো, তাই সরকার তাদের ব্যবহার করিয়েছে। এখন তাদের অতটা প্রয়োজন নেই। তবুও মাসিক একটা সম্মানি সরকার দিচ্ছে। এক একেকটা উপজেলায় ৩০০/৪০০ করে হিল ভিডিপি সদস্য রয়েছে যার বিপরীতে এখানে এতজন পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ প্রশাসনের লোকও নেই! তাহলে সরকারের পক্ষে কি এত হিল ভিডিপি বেতন-বাতা প্রণোদনা যথাযোগ্য মর্যাদার ভিত্তিতে দেওয়া সম্ভব? বাংগালীরা হিল ভিডিপি হিসেবে যেটা পাচ্ছে এটা তাদের ন্যায্য পরিশ্রমে ভিত্তিতে পাচ্ছে তাই বলে সরকার তাদের মাথায় তুলে রাখবে এমনটা হতে পারেনা। এসব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে সরকারি খাওয়ার আয়েশ না করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জীবিকার প্রতি মনোযোগী হাওয়াই তাদের পক্ষে সঠিক কাজ। কথাটি এজন্যই বললাম, এসব বাংগালীরা হিল ভিডিপি অথচ তারা সন্ত্রাসীদের নাম ঠিকানা, অবস্থান ও সংগঠিত গণহত্যা গুলোর সঠিক বর্ণনা দিতে জানেনা! অপরদিকে নতুন যেসমস্ত যুবকদের হিল ভিডিপিতে নেওয়া হয়েছে তারা সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর নামের ব্যাখাও দিতে জানেনা!
পার্বত্য বাংগালীদের মধ্যে ৩ জেলায় বেশি হলে ১০-১২ জন বাংগালী তারা আদিবাসী সংগঠন কর্তৃক চাঁদাবাজি, হত্যাকান্ডের কিছু কথা জানাতে সক্ষম হয়েছে। উপজাতি ও বাংগালীদের মধ্যকার ভূমি বিরোধ নিয়ে কিছু কথা বাংগালীরা বলেছে তা অতি নগন্য। কিন্তু তারা কেন আইনের আশ্রয়ে যাচ্ছেন না? এমন প্রশ্নও করেছি কিন্তু তার সদুত্তর বাংগালীরা দিতে পারেনি। ৮-১০ লাখ বাংগালীদের মধ্যে শুধুমাত্র শতাধিক-এর মত বাংগালী অভিযোগ করেছে তাদের সরকার দেওয়া ভূমি এখনো তারা দখলে যেতে পারিনি। বৈধ কাগজপত্র সব রয়েছে তাদের, কিন্তু প্রথাগত নিয়মে আদিবাসীরা ভোগ করে বলে জানিয়েছেন। অথচ তার বিপরীতে হাজার হাজার আদিবাসীর অভিযোগ বাংগালীরা নদী, চরঞ্চল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাহাড়ে এসে জায়গা জমি দখল করেছে!
বাংগালী-সেনা কর্তৃক গণহত্যা গুলোর তথ্য প্রমাণ আদিবাসীরা আমাদের পেনড্রাইভ করে দিয়েছেন। কিন্তু আদিবাসী সংগঠন কর্তৃক গণহত্যার প্রমাণ গুলো আমরা চেয়েও পেলাম না বাংগালীদের থেকে! এখানকার বাংগালীদের মুখে সন্ত্রাসী কর্তৃক ১৯৭৯,১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৮৬ ও ১৯৯২ গণহত্যা হত্যার কথা শুনেছি। কতজন কোন জায়গায় নিহত হয়েছে, এবং কোন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে কত তারিখে গণহত্যা সংগঠিত করেছে তার কোন সঠিক তথ্য বাংগালীরা দিতে পারেনি! শুধু মাত্র লংগদু ৩৫ বাংগালী কাঠুরিয়া গণহত্যার সঠিক তথ্য ইতিহাস আমরা বাংগালীদের থেকে পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বড় বড় সংঘটিত গণহত্যা গুলোতে বাংগালী নিধনযজ্ঞ হলেও তার সঠিক দিন তারিখ, ছবি ও তৎকালীন ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে পারেনি! মুখে কথায় পন্ডিত ভাব বাংগালীদের শুধু। কোন কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে তথ্য- প্রমাণ সহ বলার মত সৎ ইচ্ছা শক্তি নেই।
পক্ষাান্তরে বাংগালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লৌহাং গণহত্যা, কলমপতি গণহত্যার বিষাদময় সময়ের লোমহর্ষক সেই ঘটনাগুলোর বর্ণনা পেয়েছি আদিবাসীদের মুখে।
পার্বত্য চুক্তির ধারা নিয়ে মুষ্টিময় কয়েকজন বাংগালী ছাড়া অধিকাংশ বলতে পারেনি! পার্বত্য চুক্তির ধারা ও চুক্তিতে কি আছে তাও পার্বত্য বাংগালীরা জানেনা! বাংগালীরা এতটাই উদাসীন তা আমাদের ভাবনায়ও ছিলনা। ৩ জেলার নানান পেশাজীবি মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি একজন বাংগালীও পাহাড়ের সামগ্রিক বাস্তব তথ্যচিত্র গুলো তুলে ধরতে পারেনি। এতে আমাদের মনে হল, পাহাড়ের বাংগালীর অবস্থান আদিবাসীদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে অনেক ভালো। কারণ বাংগালীদের থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে মুষ্টিময় কয়জন ছাড়া বেশিরভাগেরই বাংগালী সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতন, চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেননি! তারা বলেন, পাহাড়ে অনেক শান্তিতে রয়েছে এখন আর অস্ত্রধারী নেই। তারা অশান্তির কিছু পাহাড়ে আর লক্ষ্য করেনা। আমাদের এ মিশন যাত্রায় আমরা আশা
করেছিলাম বাংগালীদের থেকে সন্ত্রাসীদের অনেক তথ্যচিত্র পাব, কিন্তু না, বরঞ্চ জাতীয় রাজনৈতিক দলের অনেক বাংগালী নেতা স্বীকার করেছেন বাংগালীরা এখানকার সেটেলার পুর্নবাসিত,এবং ভূমি দখলদার। আদিবাসীদের জায়গাতে অনেকেই রয়েছে। বাংগালীরাও কথায় কথায় নিজেদের সেটেলার হিসেবে পরিচয় দেয়! ভূমি দখল ও নতুন করে বাংগালী অনুপ্রবেশ এসমস্ত কারণে অসন্তোষ আদিবাসীরা। আর ভূমি বিরোধ রয়েছে তার জন্য এখানে আদিবাসী বাংগালী দাঙ্গাহাঙ্গামা সহ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয় এমনই আভাস বাংগালী অনেক নেতারাই জানিয়েছেন। পার্বত্য বিষয় নিয়ে আদিবাসীদের পক্ষ হতে যেসমস্ত সমস্যা ও বাংগালী-সেনাবাহিনীর প্রতি অভিযোগ রয়েছে তার বিন্দুমাত্র পার্বত্য বাংগালীদের আদিবাসীদের প্রতি অভিযোগ নেই। ২০-২৫ বছরের একজন আদিবাসী যুবককে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সংকট নিয়ে প্রশ্ন করলে সেই অকপটে সব বলে দিতে পারে কালক্ষেপণ ছাড়া। অথচ ২০-২৫ বছরের একজন বাংগালী যুবককে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সংকট নিয়ে প্রশ্ন করলে সেই উল্টো জানতে চায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সংকট মানে কি?
খুঁজে পাইনি একজন স্পষ্টবাদী বাংগালী নেতা, লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষিত ব্যক্তি! যিনি পাহাড়ের সামগ্রিক বিষয়গুলোবস্তু, এবং নিজের অধিকার ও সন্ত্রাসীদের কার্যকালাপ অবস্থান সম্পর্কে যে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এমন একজন লোক আমরা এই দীর্ঘসময় অনুসন্ধান করেও পাইনি!
আদিবাসীরা কত শিক্ষিত ও জ্ঞানী-বুদ্ধিমান তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন একাট্টা।“
ঢাকা থেকে আগত বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যক্তিদের গবেষণার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যক্ষ করা বিষয়াদির উপর বক্তব্য শুনে আমি লজ্জিত হলাম। কারণ তাদের প্রতিটি কথা চরম সত্য ও বাস্তব, পার্বত্য বাংগালীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন নয়। প্রচুর নেতৃত্ব সংকট পার্বত্য বাংগালীদের। অজ্ঞ, অকৃতজ্ঞ ও মীরজাফরদের উত্তরসূরী বাংগালীর সংখ্যা পাহাড়ে অগণিত।
এমন যদি হয় পার্বত্য বাংগালী নেতৃত্ব, তো পাহাড়ের সামগ্রিক বিষয়গুলো কারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবে? পার্বত্য বাংগালীদের নিয়ে সমতলের মানুষ ও গণমাধ্যম গুলোর চিন্তা-চেতনা নেতিবাচক হওয়ার অবশ্য কারণ রয়েছে। যার কারণ, পার্বত্য বাংগালীরা এখনো নিজের অস্বস্তিবোধ ও আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে বিবেক জাগ্রত করতে পারেনি। এই গবেষণা দলের মোট সদস্য ছিলেন ১৮ জন। হয়তো ভাগ্যের কারণেই এ গবেষণা দলটির সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। অন্যথায় পার্বত্য নিয়ে আরো নিদারুণ মিথ্যাচার রটানো হত। কেউ খবর রাখে না… পাহাড়ে সমতল হতে অসংখ্য গবেষক, মানবাধিকার ও জাতিগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিরা এসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংগালীদের সাথে কথা না বলে একপাক্ষিক উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পাহাড় নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়।