ভাল্লুকের আক্রমনের মৃত্যু গুহা থেকে বেঁচে আসা শিশু মঙ্গলিয় মুরং ও দাদা ইয়াংসাই মুরং আশঙ্কামুক্ত।

0

প্রেস ব্রিফিং : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২৪ পদাতিক ডিভিশন।

আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহায্যে হিংস্র বন্য ভাল্লুকের আক্রমনে মৃত্যু গুহা থেকে বেঁচে আসা শিশু মঙ্গলিয় মুরং (০৫) ও দাদা ইয়াংসাই মুরং (৪৮) বর্তমান সার্বিক অবস্থা

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আনুমানিক দুপুর ১ টা নাগাদ বান্দরবান জেলার চিম্বুকপাড়া এলাকা থেকে ভাল্লুকের থাবায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী দুজন উপজাতী শিশু মঙ্গলিয় মুরং (০৫) ও দাদা ইয়াংসাই (৪৮) কে মানবতার দেবদূত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহায্যে তাৎক্ষনিক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় ।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিগত চার দিনে উদ্ধারকৃত শিশু মঙ্গলিয় মুরং ও দাদা ইয়াংসাই মুরং উভয়ে যথাসময়ে উন্নত ও কার্যকরী চিকিৎসা সেবা পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এ প্রসঙ্গে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন সময় মত রোগীদের নিয়ে আসতে না পারলে হয়তো রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হতো না।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে শিশুটির পিতা জানান, বান্দরবানের চিম্বুকপাড়া এলাকায় গহিন জঙ্গলের পাশ দিয়ে খেলা করছিল, শিশুটি খেলা করার সময় এক পর্যায়ে একটি ভয়ঙ্কর হিংস্র ভাল্লুক শিশুটিকে আক্রমন করে। একটু দূরে শিশুটির দাদা অবস্থান করছিলেন। ভাল্লুকের আক্রমণ থেকে শিশু মঙ্গলিয় কে বাঁচাতে কালবিলম্ব না করে ছুটে যান দাদা ইয়াংসাই। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দুজনকে ফেলে পালিয়ে যায় ভাল্লুকটি। পরবর্তিতে কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকটস্থ একটি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীর সাহায্য চান শিশুটির পরিবার।

রোগীদ্বয়ের অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বান্দরবান রিজিয়ন সদর দপ্তর। ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়ে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া
মেজর জেনারেল মোঃ সাইফুল আবেদীন,বিএসপি ,এসজিপি,এনডিসি,পিএসসি
মহোদয় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দ্রুত,কার্যকরী ও সময়োপযোগী নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে দুপুর ২ টা নাগাদ বিমান বাহিনীর সহায়তায় একটি হেলিকপ্টারে জরুরি অবতরন করে রোগীদের প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে স্থানান্তর করে।

সেনাবাহিনীর এই মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিশুটির পরিবারসহ উপজাতীয় পার্বত্য- বাঙ্গালী ও সুশীল সমাজের সর্বস্তরের জনগণ ।ভাল্লুকের আক্রমণে আহত ২ জন মুরং উপজাতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় পরিচালক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির স্যার বলেন-বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর্তমানবতার সেবায় সর্বদাই নিয়োজিত এবং নিবেদিত।
জিওসি মহোদয়ের দ্রুত কার্যকরী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে আবারো দুজন মুমূর্ষ মৃত্যুপথযাত্রী উপজাতীয় রোগীর প্রাণ ফিরে পেল।ইতিপূর্বেও আমরা এই ধরনের সন্তানসম্ভবা মা,জটিল হামে ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত সহ বহু মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি ।হিংস্র ভাল্লুকের আক্রমণে উক্ত দুজন রোগীর প্রাথমিক অবস্থা ভাল ছিল না।বিশেষ করে,ইয়াং সাই (৪৮) এর অবস্থা। মাথায় ও চোখে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় তাদেরকে নিউরোলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছিল।বর্তমানে তাদের অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে এবং তারা আশঙ্কা মুক্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আত্মমানবতার সেবায় এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

গহিন পাহাড়ের প্রাদদেশ থেকে যেখানে পায়ে হেটে সাধারণ লোকালয়ে আসতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিনিটে ভয়াল ভাল্লুকের থাবায় আহত মঙ্গলিয় মুরং (০৫) ও দাদা ইয়াংসাই (৪৮) কে মৃত্যুগুহা থেকে বাচিঁয়ে আনল।

এই ঘটনা শুধু আজ নয়, –অতিতেও সেনাবাহিনী পাহাড়ি-বাঙালি সর্বোপরি সকল পার্বত্যবাসীর পাশে ছিল। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবির যৌথ প্রচেষ্টায় গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সোনাপতি চাকমা এবং ২৯ এপ্রিল ২০২০ জতনী তঞ্চংগ্যা নামে দুইজন উপজাতি প্রসূতি নারীকে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। পরে তারা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান । বেঁচে যায় নবজাতক ও মায়ের জীবন।

এরকম হাজারো নজির রয়েছে সেনাবাহিনীর মহানুভবতার। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেনাবাহিনী এরকম আর্তমানবতার সেবায় কাজ করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More