পার্বত্যাঞ্চলে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে পাহাড়ী সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে!

0

||অপূর্ব সাচিং, রাঙ্গামাটি||

সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদলগুলো হয়তো নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে নতুবা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে।
ওদিকে, জেএসএস, ইউপিডিএফ সহ বাকী দলগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে এ সমস্ত সংঘাত করে যাচ্ছে । এর মাঝে সাধারণ জনতা বলির পাঠা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য যখন সেখানে সেনা বাহিনী মোতায়ন করা হয় তখন তারা এর বিরোধীতা শুরু করে। কারণ সেনা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দিয়ে তারা আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারেনা । সেকারণেই আজ সেনাবাহিনী তাদের চোখের কাটাঁ। এর পিছনে রয়েছে বিশাল এক ষড়যন্ত্র তাহলো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভেতর নতুন আরেকটি রাষ্ট্র সৃষ্টির পাঁয়তারাকে আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র বলেই সকলেই মনে করে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র থেকে একটা অংশকে আলাদা করে আরেকটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার পরিকল্পনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিপক্ষে এক গভীর হুমকিও বটে। এমন পরিকল্পনা বা উদ্যেগের সাথে যারা জড়িত, নিঃসন্দেহে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী। লাল-সবুজ পতাকার শত্রু। তাদেরকে রাজাকার আইনে বিচার করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই সন্ত্রাসী গড়ফাদারদের কতো বড় দুঃসাহস যে, তারা বাংলাদেশের খেয়ে-বেঁচে এবং এদেশের আলো-বাতাস ভোগ করে এদেশের সীমানার ভেতর বসেই তৈরি করছে তাদের পরিকল্পিত পৃথক রাষ্ট্রের মানচিত্র ও স্বতন্ত্র মুদ্রার আল্পনা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণের বুকের তাজা লাল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মানচিত্র তো কারো খয়রাতে পাওয়া নয়। আমাদের মূদ্রার স্বাতন্ত্র্য আমাদের গর্ব। সুতরাং এগুলো নিয়ে কাউকে মশকারি তামশা করতে দেওয়া যায় না। এক ইঞ্চি মাটির বেলায়ও কারো প্রতি কোনো ছাড় নয়। এর জন্য জীবনবাজি রেখে যখন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জনসাধারণকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে তখনি তারা সেনা বিরোধী বিভিন্ন কমর্কান্ড পরিচালনায় তৎপর হয়ে উঠেছে।
পাহাড়ী এ সন্ত্রাসীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না স্বাধীনতা । তারাই আমাদের কাঁধে ভর করে স্বাধীনতার পর থেকেই নানা অপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে পরাধীন ও অন্যকারো করদরাজ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সময়সময় দেশের ভেতর নানারকমের অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে এদেরই কূটচাল রয়েছে। এবার শত্রুশক্তির সকল ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে পৃথক রাষ্ট্র তৈরির নীল নকশা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যা কিছুতেই বিনা চ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেওয়ার নয়। এর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা করে সামনে এগুতে হবে আমাদের। এদের দুলিষাৎ করতে হবে।
বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করার এই টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য দেশদ্রোহী চক্র জেএসএস-ইউপিডিএফ সহ সন্ত্রাসী দলগুলোকে নানাভাবে ইন্ধন প্রদানের মাধ্যমে আমাদের পাহাড়ে তারা সবসময় একটা থমথমে অবস্থা বিরাজিত করে রাখছে। অতীব দুর্ভাগ্য জনক সত্য হলো, মাঝেমধ্যে আমাদের ক্ষমতায় আসা নানা সরকার তাদের সাময়িক স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে নতজানু পদক্ষেপে এটাকে প্রশমিত করার চেষ্টা করলেও কোনো সরকারই এর স্থায়ী নিরসনের পথে হাটতে পারেনি , যদি ও সরকার নিরাপত্তাবাহিনী দিয়ে তা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে, তখন সন্ত্রাসী দলগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিভিন্নভাবে আক্রমন করে। পাহাড়িদের দুঃসাহসের মাত্রাও অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে। যার প্রাথমিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সরকারে নিকট পাহাড়ি উপজাতি সন্ত্রাসীরা এখন পার্বত্য জেলার স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে। সেনাক্যাম্প গুলো সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। সুযোগ পেলেই তারা পাহাড়ি বাঙালিদের ওপর হামলে পড়ছে।
কক্সবাজার সহ খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান- তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক ‘স্বায়ত্তশাসন’ চেয়ে দাবি উত্থাপন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। যার সংক্ষেপ জেএসএস। সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ঘুরে জানা যায় এই সংগঠনের চারটি গ্রুপ রয়েছে। উভয় গ্রুপের মাঝে জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী যারা তারাও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ পার্বত্য জেলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করছে। যার সংক্ষেপ ইউপিডিএফ। তারা মূলতঃ পার্বত্য জেলাকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা চায় এই অঞ্চলের পূর্ণ স্বাধীনতা। বাঙালি মুক্ত পাহাড়। পাহাড়ের ভেতর বাইরের শত্রুদের ইন্ধনে পাহাড়ি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান উপজাতিরা একজোট হয়ে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক’ যে নতুন চক্রান্ত চালাচ্ছে ;

এই ষড়যন্ত্রকারী পাহাড়ি উপজাতিদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে যে, নির্ধারিত জেলা নিয়ে ‘জুম্মল্যান্ড’ নামে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিলাসে তারা উন্নত দেশগুলো থেকে অত্যাধুনিক নানারকমের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। নানা দেশ থেকে অস্ত্রের চোরাচালান এনে পাহাড়িদের তিনটি দলই নিজেদের নিকট অবৈধ সমরাস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলছে। আর এভাবে তারা ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছে তাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী।
উপজাতি পাহাড়িদের সংগঠন ‘জেএসএস’-এর সামরিক শাখা কক্সবাজার বাদে বাকি তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে বিশ হাজারের ও বেশি প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য। এভাবে জেএসএস সংস্কারপন্থীদের রয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার’ প্রশিক্ষিত যোদ্ধা সদস্য। তেমনই ইউপিডিএফ-এরও আছে নয় থেকে ১২হাজার ’ সদস্যের বিশাল সামরিক বাহিনী। এই সংগঠনগুলোর সামরিক শাখার সদস্যরা পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও দেশ এবং দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব ও সরকার বিরোধী নানা কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই পাহাড়িদের মাধ্যমেই পার্বত্য জেলাগুলোর পঁচাত্তর শতাংশ মানুষ আজ নানা জাতের মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলের এই তিনটি দেশদ্রোহী গ্রুপকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন রাষ্ট্র। এই সময়ে পাহাড়িদের অস্ত্রসহায়তা দানের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে মায়ানমারের নাম বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। স্থানীয়দের মাঝে সচেতন অনেকের দাবি- মায়ানমার সরকার কর্তৃক সেদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমগণের ওপর গণহত্যা ও গণধর্ষণকে উস্কে দেওয়ার পর হতে পাহাড়িদের মাঝে বেশকিছু অত্যাধুনিক মারনাস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। পাহাড়ি কিছু কতিপয় ভিক্ষুর হাতে নাকি এ সুযোগে অস্ত্রের ভাণ্ডার তুলে দেওয়া হচ্ছে। যে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের কর্তৃপক্ষ এখনো হয়তোবা ঘুমের ঘোরে।
ইতোমধ্যে মিডিয়ায় প্রচার পেয়ে গেছে যে, চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড়ি উপজাতিদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী এসব গ্রুপের মজুদ কৃত অস্ত্রের তালিকায় রয়েছে- এম কে-১১, জার্মানির তৈরি এইচ কে-৩৩, রাশিয়ার জি-৩, একে-৪৭, একে-২২, এম-১৬ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, চায়নিজ সাব মেশিনগান, এসবিবিএল বন্দুকসহ অত্যাধুনিক সকল সমরাস্ত্র। এসকল অস্ত্রের সবগুলোই বিদেশে তৈরিকৃত। মাঝেমধ্যে এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরাও পড়েছে।
আমাদের পার্বত্য জেলা গুলোকে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে আলাদা করতে এবং বৈদেশিক শত্রুশক্তির এজেণ্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে কিছু এনজিও। যেসব এনজিও পাহাড়ে সবসময় সক্রিয় রয়েছে। ধর্মান্তরিত করণের কাজেও তারা একদম পিছিয়ে নেই। পাহাড়িদের দারিদ্রতার সুযোগকে উপলক্ষ্য করে এনজিওগুলো পাহাড়িদের ধীরে ধীরে খ্রিস্টানও বানাচ্ছে।
আমাদের নানাসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে- খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভলপমেন্ট বাংলাদেশ (সিসিডিবি), অ্যাডভানটেজ ক্রুশ অব বাংলাদেশ, হিউম্যানিট্রেইন ফাউন্ডেশন, গ্রিন হিল, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস), ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান ক্রুশ, শান্তিরানী ক্যাথলিক চার্চ, জাইনপাড়া আশ্রম, তৈদান, আশার আলো, মহামনি শিশু সদন, কৈনানিয়া, তৈমু প্রভৃতি এনজিও’র বিরুদ্ধে তিন পার্বত্য জেলায় খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিতকরণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এনজিওগুলো নানা প্রলোভনে পড়ে দলে দলে ধর্মান্তরিত হচ্ছে পাহাড়ি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী। এসব এনজিও প্রতি সপ্তাহে চাল, ডাল, তেল বিতরণের পাশাপাশি পাহাড়িদের মাঝে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের শর্ত সাপেক্ষে মাসিক অর্থও সাহায্য করছে।
এভাবে নানা কায়দায় বাংলাদেশ বিদ্ধেষী অপশক্তি গুলো আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোকে দিয়ে স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র গঠন করে মূলতঃ বাংলাদেশের বুকের ওপর ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর রাষ্ট্র ন্যায় একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্রের জন্ম নিশ্চিত করতে চায়। সুতরাং এব্যাপারে আমাদের সরকারকে যথেষ্ট সচেতনতার পাশাপাশি প্রথমেই পার্বত্য অঞ্চলকে অস্ত্রমুক্ত করার শক্তিশালী এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কোনোভাবেও যেনো আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলো আমাদের হাতছাড়া না হতে পারে সেজন্য যা যা করার তাই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করে পাহাড় নিরাপদ করে রাখার দাবি তুলতে হবে সকল সচেতন মহলকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More