||কবির আহম্মেদ, খাগড়াছড়ি||
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ও তাইন্দং ইউপির এলাকায় উপজাতি ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালিয়েছে ২ দিন। এই তান্ডবে কমপক্ষে ২০ জনের মত বাঙ্গালি আহত হয়েছে। ইউপিডিএফের গুলিবর্ষণে আহত হয়েছে মো. মনির নামে এক বাঙ্গালি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিনে হামলার পর দ্বিতীয় দিনে ফের ইউপিডিএফ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে হামলা করে বাঙ্গালিদের ঘর থেকে বাহির করে দিয়েছে৷ দিনে রাতে গত ৫ তারিখ দু’দফায় হামলা করে। এর পূর্বে প্রথম ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৪ এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ সকাল ১০ টার সময়। বাঙ্গালিরা তাদের দখলকৃত জমিতে কচু চাষ করতে যায়। ইউপিডিএফ এসে বাঙ্গালিদের কাজ বন্ধ করে দেয় হামলা করে এবং যাওয়া সময় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে চলে যায়। ইউপিডিএফ পূর্বে থেকে লাইফুপাড়া ও পংবাড়ী নামক স্থান হতে বাঙ্গালিদের বিতাড়িত করতে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। কিন্তু বাঙ্গালিরা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ইউপিডিএফ ক্ষুব্ধ হয়। তাই ইউপিডিএফ নৃশংস হামলা করে। গত ৪ এপ্রিল হামলার পর ফের ৫ এপ্রিল হামলা করে। ইউপিডিএফের এ নৃশংস হামলায় আহত হওয়া বাঙ্গালিদেরকে সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ হতে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় নি। চিকিৎসার খবরাখবরও নেওয়া হয় নি! কেউ পাশেও দাঁড়ায়নি, বরং হামলায় আহত হওয়া বাঙ্গালিদের পক্ষে সেসকল বাঙ্গালিরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে তাদের উস্কানিদাতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল চিহ্নিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে! সংশ্লিষ্ট মহলের এমন বিতর্কিত বক্তব্যে স্থানীয় বাঙ্গালিরা ফুঁসে ওঠে। কারণ, দীর্ঘদিন হতে সন্ত্রাসীরা উপরোক্ত এলাকায় হামলা করে আসছে। সন্ত্রাসীদের অপরাধ না ধরে আহত বাঙ্গালিদের অপরাধ ধরা ও বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার কারণে বাঙ্গালিরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বাঙ্গালি জানান, পার্বত্য বাঙ্গালিদের পোড়া কপাল, যার জন্য বাঙ্গালিরা হামলার শিকার হওয়ার পরেও অপরাধী হিসেবে সমাজে বাস করতে হয়। এই হচ্ছে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামের নীতি। তিনি আরো জানান, এর থেকে চরম দুঃখ দূর্দশা আর কি হতে পারে? এখানকার রাজনৈতিক পদ-পদবী গুলো সব উপজাতীয় নেতাকর্মীদের দখলে এবং প্রশাসনও উপজাতীয় নেতৃত্বে শ্রেণীর কব্জায় বন্দি। আমাদের বাঙ্গালিদের কোথাও অবস্থান নেয়। আমাদের কথা গুলো তুলে ধরার মত এবং বলার মতও কেউ নেই! এভাবে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেন, ইসলামপুরের এক বাসিন্দা। এরপর হামলায় আহত হয়েছে এমন একজনের পিতা একপ্রকার কেঁদে দিয়ে বলেন, আমরা যেসকল উপজাতীয় নেতাদের শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সম্মান করি তারা কিন্তু ইউপিডিএফ-জেএসএসের এজেন্ট। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প গুলো পুনঃস্থাপন করার জন্যও তারা বলে না। অথচ ভোট বাক্সের সময় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে তখন তাদের। সেনাবাহিনী ছাড়া তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউকে আর বিকল্প মনে করে না তারা। নির্বাচন যখন শেষ হয়ে যায় তখন সেনা প্রত্যাহারের দাবি তুলে চুপিসারে!! পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী দমনের জন্য এবং এখানকার মানুষের জানমালের হেফাজতের জন্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই পাহাড়ে। এই কথাটি তারা বুঝতে চায় না! জাতীয় রাজনীতি তারা করে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অথচ এই সহজ বিষয়টি আমরা বাঙ্গালিরা বুঝিনা। যার কারণে আমরা পদে পদে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বদিকে পিছিয়ে আছি। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে দিচ্ছে না। উপজাতীয় নেতারা যেসমস্ত বাঙ্গালি নেতাদের পদ-পদবী প্রদান করে তারা বাঙ্গালির জাতির স্বার্থে কোন উপকারে আসেনা। এভাবে ক্ষোভের বর্ণনা দিলেন হামলায় আহত একজনের পিতা।
অদ্য (বুধবার) ৭ এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ খাগড়াছড়ি পৌরসভার দুইবারের মেয়ের মো. রফিকুল আলম সরেজমিনে তবলছড়ি ও তাইন্দং এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত বাঙ্গালিদের খোঁজখবর নেন। তিনি দূরসময়ে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন আহত বাঙ্গালিদের। হামলায় আহত হওয়া বাঙ্গালিদের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বাঙ্গালিদের সঙ্গেও কথা বলেন ঘটনার বিষয়ে। সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন এবং প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে বলেন।