সন্তু লারমার মৃত্যুর পর জেএসএসের নেতৃত্ব শূন্য হতে যাচ্ছে।

0

নিজেস্ব প্রতিবেদক

পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রুপ নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। নেতৃত্ব কাড়াকাড়ি নিয়ে বিরোধ চরমে সন্তু পন্থী জেএসএস এর শীর্ষ পর্যায়ে। কে হবেন সন্তু লারমার মৃত্যুর পর পরবর্তী জেএসএস সভাপতি তা নিয়ে মতভেদ তৈরি হয়েছে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদারের প্রতি আস্থা নেই অনেক নেতার। তাই তাকে সহ-সভাপতি নিয়ে দপ্তরহীন মন্ত্রীর মত থাকতে হচ্ছে।

১২তম কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রণতি বিকাশ চাকমা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শক্তিপদ ত্রিপুরা নির্বাচিত হলেও তাদের নেতৃত্ব নিয়ে চরম বিরোধ রয়েছে। জেএসএস এর একাংশ এই নেতৃত্ব মানতে নারাজ। সন্তু লারমা ও উষাতন তালুকদার নেতৃত্ব সংকটে পড়েছেন। জেএসএস এর অনেক নেতারা মনে করেন, সন্তু লারমার মৃত্যুর জেএসএস এর হাল ধরার মত বিকল্প কেউ নেই। বেশিভাগ নেতা বয়োবৃদ্ধ। এখন সশস্ত্র কার্যক্রম বা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো নেতা ভাটি চালান দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সন্তু লারমা যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেএসএস তার নিকট আত্মীয় দ্বারা পরিচালনা করতে কিন্তু সংগঠনের বেশিভাগই সন্তু লারমার আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে৷ সন্তু লারমা জানে তার মৃত্যুর পর তার নিকট আত্মীয়দের কেউ ক্ষমতার চেয়ারে রাখবে না তাই মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের পালাবদল করার মাধ্যমে আত্মীয়র হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চান!

সন্তু লারমা ও তার কিছু নেতার হটকারি সিদ্ধান্ত জেএসএস বেসামাল। এই নেতৃত্ব সংকট অচিরেই জেএসএস ভাঙ্গনের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিকল্প শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে জেএসএস ব্যর্থ হয়েছে।

বর্তমানে জেএসএস মাঠ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আর নেতৃত্বহীন সংগঠনে জীবন অতিবাহিত করতে ইচ্ছুক নয়। বন্দী ফেরারি বা জঙ্গল জীবন থেকে মুক্ত হতে মুখিয়ে আছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে জেএসএস এর ৯৫% শীর্ষ নেতা বয়োবৃদ্ধ এবং মাঠ পর্যায়ের ৭০% বয়োবৃদ্ধ। এমন বয়োবৃদ্ধ দিয়ে একটি সশস্ত্র বা রাজনৈতিক সংগঠন ভবিষ্যতে পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে অকপটে জেএসএস নেতারাই স্বীকার করছেন। এর ফলে সশস্ত্র ও রাজনৈতিক শাখার সদস্যরা জেএসএস ত্যাগ করার জন্য সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেএসএস শীর্ষ নেতা জানান, জেএসএস এর সশস্ত্র শাখা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে সফলতা অর্জন করে। সরকার তাদের ন্যায দাবিদাওয়া মেনে নেয়। এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু সন্তু লারমা ও উষাতন তালুকদার, প্রণতি ও শক্তিপদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত তৎকালীন ১৯৯৭ সনে সরকারের নিকট সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু সংখ্যক অস্ত্র জমা দিলেও অনেক সদস্য অস্ত্র জমা দেননি তাদের চাপে। তারা যদি সরকারের কথা অনুযায়ী অস্ত্র আআত্মসমর্পণ করতো তাহলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসতো আর আজকে নেতৃত্ব শূন্য তৈরি হওয়াসহ বিপুল পরিমাণ সদস্য জীবন অন্ধকারে ধাবিত হতো না। সন্তু লারমা গংদের হটকারিতায় আজকে অনেক নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। পাহাড়ে চলছে অমীমাংসিত সংঘাত ও হানাহানি। পার্বত্যবাসী এক সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে। এরজন্য দায়ী সন্তু লারমাসহ কিছু কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা। যারা চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য করতে গিয়ে পুরো জাতিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্বপ্নের জুম্মল্যাণ্ড গঠনের কল্পিত স্বপ্ন দেখিয়ে পাহাড়ের হাজার হাজার নিরপরাধ পাহাড়ি-বাঙ্গালীর বুক খালি করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নের কোনটাই বাস্তবতার রূপ পায়নি। বরং সন্তু লারমার জীবন এখন নিবুনিবু করে। তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথেই জেএসএস ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী জেএসএস ত্যাগ করার জন্য শতশত সদস্য অপেক্ষার পহর গুনছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More