সেনাবাহিনীর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করতে উপজাতি সন্ত্রাসীরা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে!

0

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশাল অংশ জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে । বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম অর্জন বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আর এই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সেনাবাহিনীকে না নিতে জাতিসংঘে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট রিপোর্ট প্রদান করে আসছে! সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশ গুলোর কূটনীতিক মহল, এনজিও, দাতাসংস্থা সহ মিশনারীরা। এজন্যই অর্থ যোগান দিচ্ছে ডেনমার্ক ও নরওয়ের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের “ডনাক” নামের একটি প্রকল্প। ডনাক পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী সম্পর্কে ২০০১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকটি বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদীত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বলে সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাস্ট্রীয় বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন করে বন বিভাগের উপর হামলার পর৷ এরপর সরকার বাধ্য হয়ে সমতল জেলাগুলা হতে বাঙালি পূর্ণবাসন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম। উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে রাস্ট্রের নাগরিকদের উপর গণহত্যা পরিচালনা করেছে। সেনাবাহিনী সেখানে রাস্ট্রীয় বনজ সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে গিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য গিয়েছে। শান্তি স্থাপনের জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করে কাজ করে আসছে।

১৯৯৭ সালের ২- ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তুর সঙ্গে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” সাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম কিছুটা কমে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে সেনাবাহিনীর পূর্বেরকার ক্ষমতাবল নেই। ক্ষমতাবল অনেকটাই অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চুক্তির কারণ ও আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের চলমান সঙ্কট নিরসন, অস্থিরতা বন্ধ করা, সংঘর্ষ অবসান করে পাহাড়ের শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেওয়া, এবং পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা। কিন্তু তার কোনটিরই প্রতিফলন ঘটেনি উপরোক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে। বরং অতিরঞ্জিত সুবিধা ভোগ করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা রাস্ট্রের বিরুদ্ধে নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে বলা যায়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র পাহাড় থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার হয়নি। পাহাড় এখনো অশান্ত, তাই ৪টি বিগ্রেড ও কিছুসংখ্যক সেনাবাহিনী চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদ্যমান রয়েছে। চুক্তির সহযোগিতাকারি হিসেবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত থাকার কারণ সম্পর্কিত বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক অবস্থান, পটভূমি সহ বাস্তবতা তুলে ধরা উচিত পাঠকমহলের জ্ঞাতার্থে। সে প্রেক্ষিতে পাঠকমহলের জ্ঞাতার্থে কিছু বিষয় বিশদভাবে তুলে ধরছি বুঝার সুবিধার্থে।

১৯৭১ সালে সদ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে তথাকথিত শান্তিবাহিনী গঠন হয়! অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন হওয়ার এই প্রশ্নের জবাব কে দিবে? যুদ্ধবিধ্বস্ত, ক্ষতবিক্ষত ও অগোছালো নব্য স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে কেন অস্ত্র হাতে নেওয়া হয়েছিল? একটি দেশকে পূর্ণগঠন হওয়ার সুযোগ না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বায়ত্তশাসন দাবি এবং অস্ত্র হাতে নেওয়ার এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? বঙ্গবন্ধুর ৭২ এর সংবিধানের বিরুদ্ধতা করে অস্ত্র হাতে নেওয়া অধিকারের জন্য ছিল না। এর পেছনে ছিল অন্য নৈপুণ্য।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল: উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে রাস্ট্রীয় স্থাপনা বন বিভাগের উপর হামলা শুরু করে ১৯৭৫ সালে। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ছিল না। বাঙালিও ছিল না। তার পরেও রাস্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা! আর কেন এই এ হামলা হল?

অস্ত্র হাতে নেওয়া এবং হামলা এটা কি একটি স্বাধীন দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল না? সরকার তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য হন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করার পর ১৯৭৭ সালে বান্দরবান সাঙ্গু নদীতে সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা করে ৫ সেনাসদস্যকে হত্যা করে। তখন তো পাহাড়ে বাঙালি ছিল না, কেন পাহাড়ে সেনা ও রাস্ট্রীয় সম্পদের উপর হামলা হল? আজ যারা বলছে, পাহাড়ে সব সমস্যার মূল বাঙালি আর সেনাবাহিনী, তাদের কাছে প্রশ্ন ১৯৭৫ সালে পাহাড়ে কিসের সমস্যা ছিল? তখন তো বর্ণিত মহল পাহাড়ে ছিল না। কেন তখন হামলা হল আর তথাকথিত শান্তিবাহিনী গঠন হল? উদ্দেশ্যে কি ছিল? বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা অধিকার আদায়ের সমস্যা নয়, সেনাবাহিনী কিংবা বাঙালিরও সমস্যা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার পেছনে অন্য অজানা কারণ লুকিয়ে আছে, এবং নৈপুণ্যে অন্য কিছু আছে। যেটা অদূরে বসে স্বাভাবিক ভাবে প্রতীয়মান করা প্রায়ই অসম্ভব।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চরম বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উপজাতি জনগোষ্ঠীর একটি কতিপয় অংশ মেনে নিতে পারেনি। আত্মস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায় তারই জলন্ত উদাহরণ। স্বাধীনতার পূর্বে থেকে তথাকথিত চাকমা রাজ পরিবার চায়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম পশ্চিম পাকিস্তানের অংশে পড়ুক। তারা চেয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি ভারতের অংশে পড়ুক এবং বান্দরবান বার্মার অংশে পড়ুক। সেজন্যই তারা ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ কালে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিল, এবং বান্দরবান অংশে বৌমাং সার্কেল বার্মার পতাকা উত্তোলন করেছিল৷
স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়, তাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাদের রাজ প্রথা রাখবে না এদেশের শাসকরা। এই প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে। এই চিন্তা দ্বারা থেকে শুধু সিংহাসন টিকিয়ে রাখতে রাজাকার ত্রিদিব রায় ও তার বংশধরা স্বাধীনতার যুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল। এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পরে উপজাতিদের একটি উগ্রবাদী অংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। তারই অংশ হিসেবে ১৯৭২ সালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে তথাকথিত শান্তিবাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। তথাকথিত শান্তিবাহিনী গঠনে প্রতিবেশী রাস্ট্রের ইন্ধন এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী মহল সহায়তা করেছিল। উপজাতিদের সেসব ষড়যন্ত্র ও দেশদ্রোহীতামূলক কর্মকান্ড বর্তমান প্রজন্মের কাছে অজানা হলেও ইতিহাসবিদদের কাছে অজানা নয়।

১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র নেওয়া এবং ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ রাস্ট্রীয় স্থাপনা, সম্পদ ও রাস্ট্রীয় বাহিনীর উপর হামলার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে সরকার তৎকালীন পাহাড়ের ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যেই বাঙালি পূর্ণবাসন করে।

বাঙালি পুর্ণবাসন করার পরে রাস্ট্রীয় বাহিনী ও বাঙালিদের উপর হামলা পরিচালনা করে সন্ত্রাসীরা। একে একে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩ টির মত বাঙালি গণহত্যা পরিচালনা করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বন্দুক যুদ্ধে বহু উপজাতি-বাঙালি নিহত-আহত হয়।
শান্তি স্থাপন ও দীর্ঘ সংঘাত এবং রক্তারক্তি যুদ্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন সরকার তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে। সে দ্বারা বজায় রাখে পরবর্তী সরকারও। তৎকালীন শেখহাসিনা সরকার তার ব্যতিক্রম করেনি। তবে তিনি তড়িঘড়ি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত করেন। চুক্তির বিষয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনপ্রকার আলোচনা করেননি। শুধুমাত্র উপজাতি জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি চুক্তি করেছেন। যার প্রেক্ষিতে পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠী মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। অবহেলিত হয় পার্বত্য বাঙালিরা। বৈষম্যেমূলক পার্বত্য নীতিতে বাঙালির জীবন পিষ্ট হয়। যদিও এই চুক্তিতে অস্থিতিশীলতা, রক্তারক্তি সংঘর্ষ কিছুটা বন্ধ হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে শেখহাসিনা সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তুর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত করেন। এই চুক্তিতে সরকার উপজাতি জনগোষ্ঠীর সকল চাহিদা-দাবিদাওয়া মেনে নেয় কোন শর্ত ছাড়া। সরকারের পক্ষ হতে তেমন কোন শর্ত ছিল না। চুক্তির মৌলিক ধারা ছিল অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সরকারের নিকট অস্ত্র আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তার লক্ষ্যে সরকার তাদের পুর্ণবাসন সহ কর্ম পরিধি সৃষ্টি করবেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার সব ধারা বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় অব্যাহত রেখেছেন। পাহাড় হতে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার ইতোমধ্যে ২৪০ টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরে নিয়েছেন।
কিন্তু সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় যে, উপজাতি সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারা লঙ্ঘন করে পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। সে ১৯৯৭ থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করে আসছে। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্যমান থাকার কথা নয়, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করে সুস্থ দ্বারায় ফিরিয়ে আসার তাগিদ কথা রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা অবসান করার কথা ছিল। অথচ ভাঁওতাবাজি করে চুক্তির তৎকালীন সময়ে কিছুসংখ্যক ভাঙা মরচে ধরা অস্ত্র জমা দিয়ে পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার শর্ত মোতাবেক রাস্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে। জেএসএস অভিযোগ করছে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না!
সরকারের বক্তব্য, তারা ইতোমধ্যে চুক্তির ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে, ১২ টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত করেছে এবং অবশিষ্ট ১২টি ধারা বাস্তবায়ন প্রতিক্রিয়াধীন বলে বলছে। অথচ সন্ত্রাসীরা সবকিছুই পূর্বেকার মত বিদ্যমান রেখেছে!

যদিও এই পার্বত্য চুক্তিকে দেশবাসী দেশের জন্য মঙ্গলজনক মনে করে না। পার্বত্য বাঙ্গালিরা এটাকে কালো চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে এখনো চুক্তির বর্ষফুর্তিতে চুক্তি বাতিল ও সংশোধনের আন্দোলন করে আসছে। পার্বত্য বাঙালিদের দাবি এই চুক্তি সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে উচ্ছেদের শিকার হবে এবং বাংলাদেশ হারাবে তার এক-দশমাংশ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য ভূখণ্ড অরক্ষিত হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পার্বত্য ভূখণ্ড। পার্বত্য চুক্তিকে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি দেশ বিক্রির কালো চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়ন করেছিল!

চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হওয়ার পরেও পাহাড়ে সে সন্ত্রাসবাদ কায়েম কোন অংশেই কমেনি। বরং আগে ছিল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, এখন চারটি সন্ত্রাসী সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। আগে চাঁদা দিতে হতো এক সংগঠনকে এখন চাঁদা দিতে হয় চার সংগঠনকে! সংগঠন গুলো হল—
১. জেএসএস মূল সন্তু,
২. জেএসএস এম.এন লারমা,
৩. ইউপিডিএফ প্রসিত,
৪ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বর্মা।

এসব সংগঠন গুলো বিভিন্ন নামে সৃষ্টি হয়েছে ঠিক কিন্তু আর্দশগত দিক দিয়ে তারা সবাই অভিন্ন। বরং তারা নামে আলাদা আলাদা হলেও তাদের সবার সাইনবোর্ড কিন্তু জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করা!

এখন পাহাড়ে যেসমস্ত সেনাবাহিনী রয়েছে, তারা পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আছে। চুক্তিতে বলা আছে পাহাড়ে ৬টি ক্যান্টনমেন্ট আঁকারে সেনানিবাস থাকবে। কিন্তু এখন আছে মাত্র ৪টি বিগ্রেড! আর এ ৪টি ব্রিগ্রেড পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে তা চুক্তিতে উল্লেখ আছেই। চুক্তির সে ধারা মোতাবেক পাহাড়ে সেনাবাহিনী কাজ করছে। শর্ত অনুযায়ী অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প গুলো চলে গেছে। কিছুসংখ্যক সেনা ক্যাম্প রয়েছে স্থানীয় উপজাতি-বাঙালিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। ১৯৯৭ সালের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের ফলে স্থানীয় সাধারণ উপজাতি-বাঙালিরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক, হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার সংকট তৈরি হয়েছে। এখানকার মানুষের জনজীবন হুমকির মুখে। তাই স্থানীয়দের দাবির মুখে সরকার কিছুসংখ্যক সেনা ক্যাম্প রেখেছে৷ সন্ত্রাসীদের অভিযোগ, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন জারি রয়েছে৷ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। ১৯৯৭ সালের চুক্তি শর্ত মোতাবেক সেনাশাসক এবং অপারেশন দাবানল পাহাড়ে বিলুপ্তি ঘটে। বর্তমানে অপারেশন উত্তোলন চলছে। অবৈধ অস্ত্রের সমাপ্তি ঘটলে সেনাবাহিনী চলে যাবে। পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্রধারী রয়েছে। তারা এখনো হানাহানি, রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সাধারণ মানুষ হত্যা করে। চাঁদাবাজি, অপহরণ খুন-গুম করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে৷ পাহাড়ের আনাচে-কানাচে উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিচরণ। চুক্তির পরেও পাহাড়ে রক্তের হোলিখেলা চলে৷ বারুদের গন্ধ এবং সারি সারি লাশ পার্বত্য জনজীবন বিষময় করে তুলছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত ও বার্মার সীমান্ত। এ সীমান্তের দীর্ঘ পথে নেই কাঁটা তারের বেড়া। প্রতিবেশী দেশগুলো হতে এবং প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসীরা অবাধে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র গ্রহণ করে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক রিপোর্ট কিন্তু তাই বলে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভারত মধ্যকার বিজিবি- বিএসএফ প্রধানের ৫১ তম সম্মেলনে বাংলাদেশে বিজিবি ভারতের বিএসএফ-এর কাছে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের উপজাতি সন্ত্রাসীরা ভারতের মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় গ্রহণ করে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতায়। এমনকি বাংলাদেশের উপজাতি সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর ভারতের মাটিতে ঘাঁটি থাকার অভিযোগও করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে ভারতের বিএসএফ-এর পক্ষ হতে আশ্বস্ত করা হয়। ভারত থেকে আগত অস্ত্র এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে সন্ত্রাসীরা। রাঙামাটি নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা সহ ৬ হত্যাকান্ডের ঘটনা, এবং রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকা সরকারি জনবলের উপর ব্রাশ ফায়ার করে ৭ জনকে হত্যার ঘটনা কি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের ব্যবহার করার প্রমাণ বহন করে না? পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কমবেশি সকলেরই জানা থাকার কথা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যে, উপজাতি সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসবাদ এবং রাস্ট্র বিরোধী তৎপরতায় নিয়োজিত তা এসমস্ত ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়।

এদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলা পাহাড়ের উপজাতি সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসবাদ তুলে ধরে না! এর ফলে পাহাড়ের চরম বাস্তবতা ধামাচাপা পড়ে যায়৷ শুধুমাত্র বাঙালিদের বিষয়ে কাল্পনিক মিথ্যাচারকে প্রকৃত রুপ দেয় গণমাধ্যমগুলা। উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বছরে পাহাড় থেকে ৭০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করার খবরটি ফলাও করে অদৃশ্য কারণে প্রচার করা হয় না! অন্যদিকে পাহাড়ে পান থেকে চুন খসলে সেনাবাহিনী ও বাঙালির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে তথাকথিত গণমাধ্যমগুলা। সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও অপরাধ দামাচাপা দেওয়ার ঘটনা বিস্ময়কর।

সেনাবাহিনী মাঝেমধ্যে যৌথবাহিনী সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা পূর্বক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। সেনাবাহিনী যখন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, তখন উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজি সহ সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনা করতে বেগ পেতে হয়। সেজন্যেই মূলত উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তথাকথিত গণমাধ্যম, এনজিও, দাতাসংস্থা ও মিশনারী সহ এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা জাতিসংঘের নিকট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনী নেওয়া বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে নানান ষড়যন্ত্র করছে। যাতে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চলে আসে এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে। মূলত উপজাতি সন্ত্রাসীদের প্রধান বাধা সেনাবাহিনী।
তাছাড়া উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর এবং দক্ষিণ সুদানের মত অবিকল রাস্ট্র গঠন করার দিকে হাঁটছে। সে পথে অন্যতম বাধা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৭২ সালে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর যাত্রার লক্ষ্য কিন্তু এটাই ছিল। বর্তমানে ইউপিডিএফও সে পথে হাঁটছে। উপজাতি সব সন্ত্রাসীরা জুম্মা লিবারেশন আর্মি (জেএলএ) নামে একটি অস্ত্রধারী বাহিনী গঠন করেছে কথিত স্বপ্নের জুম্মাল্যান্ড গঠন করার জন্য। ইতোমধ্যে জুম্মাল্যান্ডের প্রশাসনিক অবকাঠামো তৈরি করেছে। তারা মূদ্রা, মানচিত্র, পতাকা, প্রেসিডেন্ট, সরকার, মন্ত্রী পরিষদ তৈরি করে অনলাইন প্রচার করছে। এটিকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। রাস্ট্রও রাস্ট্রের যারা মঙ্গল কামনা করে তাদের ভাববার বিষয়।

সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে বিতাড়িত করতে তারা কি না করছে-

সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালীকে পাহাড় থেকে সরাতে নানান রকমের ছক কষে আছে তারা-
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও বাঙালিরা উপজাতিদের ভূমি দখল করে, উপজাতি নারী ধর্ষণ করে এবং অপারেশন উত্তোলনের নামে জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন করে! এই ধরনের মিথ্যা-বানোয়াট কাল্পনিক অভিযোগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনেন তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক মাসিক ও বাৎসরিক পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জঘন্যতম রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এসব রিপোর্ট মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এ রিপোর্ট গুলো তৈরি করতে সহযোগিতা করে এদেশীয় তথাকথিত সুশীল, বাম ও গণমাধ্যমগুলা। আর এদের সবাইকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগীতা করে “ডেনমার্ক ও নরওয়ের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ডনাক) নামের একটি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা।” প্রতিবেদন গুলো জাতিসংঘের দপ্তরে পৌঁছাছে ভূমিকা রাখে এদেশে নিয়োজিত থাকা পশ্চিমা ও ইউরোপীয় কুটনৈতিকমহল ও জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম “ডয়েচে ভেলে।” ঢাকা অবস্থানরত নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও নরওয়ের কূটনীতিকগণ।

জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে উগ্রবাদী ও দেশদ্রোহী মনোভাবের ব্যক্তিদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দেয় পশ্চিমা কূটনীতিক মহল গুলো। এরা সন্ত্রাসীদের এজেন্ট হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন চলে বলে মিথ্যা-বানোয়াট রিপোর্ট প্রদান করে আসছে। সেনাবাহিনী দ্বারা উপজাতি ভূমি দখল, নারী ধর্ষণ, পর্যটন শিল্পের নামে তাদের ভাষায় (আদিবাসী) উচ্ছেদ এবং তথাকথিত আদিবাসীদের ঘর থেকে তুলে এনে হত্যা, বর্বরোচিত নির্যাতন করার মত মারাত্মকভাবে অভিযোগের রিপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কুটনৈতিক রিপোর্ট ও উপজাতি সন্ত্রাসীদের এজেন্টের অভিযোগ এবং রিপোর্টের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নেওয়া বন্ধ করার হুমকি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার এবং নিষ্ক্রিয় করার অপচেষ্টা করছে উল্লিখতরা।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করা “পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) পার্বত্য চুক্তি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত করার সময় নিজেদের উপজাতি হিসেবে দাবি করে চুক্তি সম্পাদিত করে।” অথচ আজ তারা সহ উগ্রবাদী উপজাতিরা নিজেদের আদিবাসী দাবি করে জাতিসংঘের মাধ্যমে নির্লজ্জভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সহ নানান সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে ২০০৭ সালে। এই ঘোষণাপত্রে উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা আছে। অথচ উপজাতিরা “উপজাতি সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রটি” না পড়ে শুধু আদিবাসী সর্ম্পকিত ঘোষণাপত্রটি পড়ে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করছে! এই থেকে উপজাতিরা আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের উপজাতি হতে আদিবাসী দাবি করে সুযোগ নেওয়ার নির্লজ্জ চেষ্টা করছে। আর জাতিসংঘও এদেশীয় “উপজাতি জনগোষ্ঠীকে যাচাই-বাছাই না করে তাদের আদিবাসীদের জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। এর ফলে এই উপজাতিরা আদিবাসী সেজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাঙালির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে জাতিসংঘের অধিবেশনে।

পাহাড় ও সেনাবাহিনী নিয়ে তারা সেসমস্ত রিপোর্ট আদান-প্রদান জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে করছে তার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।
পাহাড়ের চরমবাস্তবতা হল- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাহাড়ে নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করে থাকতে হচ্ছে। তার কিছু তথ্য তুলে ধরছি

১. ২০০৮ রাঙামাটি নানিয়ারচর সেনা ক্যাপ্টেন গাজীকে জেএসএস সন্তু থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ প্রসিত গুলি করে হত্যা করে। যার মামলা চলমান। আসামীরা সব জামিনে আছে, প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে। যদি পাহাড়ে সেনাশাসন চলমান থাকতো তাহলে কি সেনা হত্যাকারীরা বেঁচে থাকতো?

২. ২০১৭ সালে বাঘারহাট সেনা জোনের এক সদস্যের হাত ব্রাশ ফায়ার করে অকেজো করে দেয় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

৩. মানবসেবায় গিয়ে পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন তানভীর সহ ৬ জন নিহত হয় রাঙামাটি মানিকছড়ি পাহাড় ধসের সময়!

৪. ২০২০ সালে রাঙামাটি রাজস্থলী সেনাসদস্য মোঃ নাছিমকে গুলি করে হত্যা করে। এবং সেনা ক্যাপ্টেনকে গুলিবিদ্ধ করে জেএসএস। যার মামলা চলমান। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে। যদি পাহাড়ে সেনাশাসন চলমান থাকতো তাহলে কি সেনা হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করা অবস্থান পেতো?

৫. খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি সেনা মেজরকে পায়ে গুলি করে আহত করে ২০২০ সালে ইউপিডিএফ প্রসিত সন্ত্রাসীরা।

৬. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাহাড় ভ্রমণে আসা পর্যটক দলের খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি আসার গাড়িবহরে পথিমধ্যে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য গুলিবর্ষণ করে। এতে হানিফ পরিবহন চেয়ার কোচের গাড়ির বডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনারস্থলে পৌঁছাতে গিয়ে পাহাড় থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৮ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়।

এছাড়া পার্বত্য চুক্তির পরে আগে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী সহ আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬১৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। তথাকথিত গণমাধ্যমের কারসাজি আর এদেশীয় অপশক্তি এবং বৈদেশিক অপশক্তির কারণে এ বিষয় গুলো অগোচরে রয়ে গেছে!

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাঙালির চেয়ে উপজাতি জনগোষ্ঠী বেশি গ্রহণ করে। উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। পাহাড়ে, উপজাতি প্রসূতি নারী, ভাল্লুকে আক্রান্ত উপজাতি রোগী, হামে আক্রান্ত উপজাতি রোগীদের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে সাহায্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে থাকেন। সেনাবাহিনীর এমন মানবসেবামূলক অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। শুধুমাত্রই উপজাতি সন্ত্রাসীরা তা অস্বীকার করে!

পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্র উপজাতি জনগোষ্ঠীর মুক্তির অগ্রদূত্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উপজাতি সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর কারণে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তারজন্য মূলত তারা পাহাড়ে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি মেনে নিতে পারছে না। সেজন্যই দেশ-বিদেশ এবং জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা- বানোয়াট রিপোর্ট প্রদান করছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের এসমস্ত অভিযোগ যে, মিথ্যা-বানোয়াট সন্ত্রাসীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্মকান্ড দেখলে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়। উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলা একতরফাভাবে সেনাবাহিনী এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাঙালি লেখক না থাকার কারণে উপজাতি সন্ত্রাসীদের মিথ্যা গুজব প্রচার ভালোই হচ্ছে। তারা পাহাড়ের চরম বাস্তবতা আড়াল করে পার্বত্য পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র সেনাবাহিনী এবং বাঙালিকে দায় করছে। অথচ পাহাড়ের প্রকৃত বাস্তবতা তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বেশ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। তা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার ও নিষ্ক্রিয় করার চক্রান্ত খুবই দুঃখজনক। হয়তো এ চক্রান্ত করে এখন সফল না হলেও অচিরে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সফল হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশাল অংশ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার কারণে বাংলাদেশের প্রচুর সুনাম ও বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।

বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ১৮০০ নারী শান্তিরক্ষীসহ ১লাখ ৭৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ৫টি মহাদেশের ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে অংশ গ্রহণ করেছে।
তৎমধ্যে ৭ হাজারের অধিক বাংলাদেশী সেনা ও পুলিশ ১০টি মিশনে শান্তিরক্ষা উদ্দেশ্যে মোতায়েন আছেন।

নিরাপত্তা পরিষদে শান্তিরক্ষা মিশনে জাতিসংঘের অধীনে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সমস্ত সেনাবাহিনীগুলো বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপর উপজাতি সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ -জেএসএস সহ এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা।

পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রিত অনলাইন মাধ্যমগুলা জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করার কিছু তথ্য তুলে ধরেছে।

লেখক, মুকবল আহম্মেদ, বান্দরবান, লেখাটি স্বাধীন মুক্তমতের অংশ। লেখাটি সম্পূর্ণ লেখকের একান্ত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More