ভূষণছড়া গণহত্যা মানবতার এক কালো অধ্যায়।

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার কথা সকলে জানলেও ১৯৮৪ সালের ৩১ মে, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া হত্যাকাণ্ডের খবর তেমন কেউ জানে না।

স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনী কর্তৃক অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে প্রত্যন্ত জনপদ বরকলের ভূষণছড়া গ্রামে। ভূষণছড়া গণহত্যা সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ বর্ণনানুসারে কোন বই বা আর্টিকেল আমার চোখে না পড়লেও
আতিকুর রহমানের পার্বত্য তথ্যকোষ এবং সৈয়দ মুরতজা আলী’র দি হিচ ইন দি হিলস বইয়ে ভূষণছড়া গণহত্যা সম্পর্কে কিছুটা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়।

গণহত্যার পরিকল্পনা:

‘‘কলা বন্যা, গোরস্থান, ভূষণছড়া, হরিণা হয়ে ঠেকামুখ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিরাট এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা থেকে আপতিত হয় ভয়াল নিস্তদ্ধতা।
১৯৮৪ সালের ৩০ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৪টা থেকে শুরু হয়ে পরদিন অর্থাৎ৩১ মে সকাল ৮টা ৩০মিনিট পর্যন্ত পর্যন্ত চলমান থাকে বর্বরোচিত এই গণহত্যা।
রমজান মাস হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সেহরি খেয়ে সালাত আদায় করে সবেমাত্র ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো- তখন চতুর্পাশে হঠাৎ করে বিকট শব্দে গুলির আওয়াজে গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে যায়।
মানুষের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
শান্তিবাহিনী নামক উপজাতি সন্ত্রাসীদের নির্বিচারে গুলি বর্ষণ এবং অবুঝ শিশুদের টেনে টুকরোটুকরো করে মস্তক ছিন্ন করার বিভৎসতায় প্রকম্পিত হয়েছিল স্রষ্টার আরশ।
এখানেই সন্ত্রাসীরা থেমে থাকেনি। উপজাতি সন্ত্রসীরা সহ্য করতে পারেনি গৃহপালিত পশু পাখিদেরকেও।
তাই গৃহপালিত পশুপাখিদের হত্যা করতে অসংখ্য বাড়িঘরে দেয়া হয় আগুন।
লেলিহান অগ্নিকুণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া গবাদিপশুদের গগনচুম্বী আর্তনাদে অশ্রুসিক্ত হয়েছিল সকল প্রানীকুল। এ সকল মানবতা বিরোধি অপরাধে মোটেও অনুশোচিত হয়নি মানবের মত দেখতে উপজাতি নরপশুরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডটির নেতৃত্ব দেন সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তিবাহিনীর নেতা মেজর রাজেশ। ইতিহাসের নিকৃষ্ট এই হত্যাকাণ্ডে নারী শিশু সহ প্রায় এক হাজার বনি আদম শাহাদাত বরণ করেন এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়।

ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা:

শান্তিবাহিনীর ধবংসাত্মাক বর্বরোচিত আক্রমনের কথা ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্থানীয় বিডিআর ও আর্মি ঊর্ধ্বমহলে অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বজন হারা মানুষদের কোন আশার বানী না শুনিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে দ্রুত লাশ দাফনে ব্যস্ত হয়ে পরে।
সরকার হয়তো ভেবেছিল ঘটনার জানাজানি হলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ হবে সরকার বেকায়দায় পড়বে।
তাই ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিহতদের জন্য দ্রুত গতিতে গণকবরের ব্যবস্থা করা হয়।

নির্মম বাস্তবতা:

দুঃখজনক হলেও নির্মম সত্য যে, ভূষণছড়া গণহত্যা সহ অসংখ্য বর্বরোচিত ঘটনার শিকার হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালীরা। কিন্তু বাঙ্গালীদের উপর সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘটিত এসব নির্যাতনের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমতো দূরের কথা দেশীয় প্রচার মাধ্যমেও স্থান পায়নি। দেশে তখন সামরিক শাসন ও সংবাদ প্রচারের উপর সেন্সরর ব্যবস্থা আরোপিত থাকায় এবং পাহাড়ের অভ্যন্তরে যাতায়াত ও অবস্থান নিরাপদ না হওয়ায় অধিকাংশ গণহত্যা ও নিপীড়ন খবর হয়ে পত্র পত্রিকায় স্থান পায়নি। আর এই সুযোগে নির্যাতনকারী উপজাতীরা নিজেদের নৃশংসতার স্বরূপকে ঢেকে তিলকে তাল করে নিজেদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছে বিশ্বব্যাপী। এতে দুনিয়াব্যাপী ধারণা জন্মেছে যে, পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীরাই নির্যাতনের স্বীকার। যার ফলে দেশ এবং সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনকারী সেনাবাহিনীর চরিত্রেও কলঙ্ক আরোপিত হয়েছে।

করণীয়:

শান্তিবাহিনী কর্তৃক ভূষণছড়া সহ পার্বত্যাঞ্চলের সকল হত্যাকাণ্ডের ডকুমেন্টারী তৈরি করে জাতীয়, এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা।

নিহত স্বজনদের মধ্যে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদেরকে আর্থিক সহযোগীতা করা।

শান্তিবাহিনীর উত্তরসূরি জেএসএস, ইউপিডিএফ সহ সকল পার্বত্য সন্ত্রাসী সংগঠন অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More