ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায় লংগদু পাকুয়াখালী ট্রাজেডি।

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান– রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালীতে ১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ৩৫ কাঠুরিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (তথাকথিত শান্তিবাহিনী) হত্যা করে৷ সেই থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। নিহতদের পরিবারগুলোর সদস্যরা এই দিনটি আসলে করব যিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও বিচার দাবি করে প্রতিবাদ সভা করেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর পাকুয়াখালী ট্রাজেডির ২৫ বছর পূর্ণ হলেও বিচার হয়নি খুনি সন্ত্রাসীদের।

১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর শান্তিবাহিনী লংগদুর ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা বলে পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে ডেকে নিয়ে যায়। ইউনুস আলী নামের এক কাঠুরিয়া সেদিন সেখান থেকে কোনভাবেই পালিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে এসে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত জানালে গ্রামবাসী সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় পাকুয়াখালী গহীন অরণ্যের একটি দুইশ ফুটের খাদ থেকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ২৮টি লাশ উদ্ধার করেন। বাকী ৭জন কাঠুরিয়ার লাশের কোন হদিস মিলেনি।

মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসা কাঠুরিয়া ইউনুস আলী বলেন, সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা ৩৬জন কাঠুরিয়াকে ৫/৬ জন ভাগ করে বেধে ৭টি গ্রুপে পাকুয়াখালীর গহীন অরণ্যে নিয়ে যায়৷ সন্ত্রাসীদের সবার হাতে ছিল অস্ত্র, ধারালো দা ও ভারতীয় ১ ফুট লম্বা ছুরি। সেদিন মূলত বাঙ্গালী হওয়ার অপরাধে ৩৫ জন কাঠুরিয়াকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ইউনুস আলী আরো বলেন, “প্রতিটি বাঙ্গালী কাঠুরিয়াকে দা ও ভারতীয় ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করেন৷ শরীরের প্রতিটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ লাশ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, লাশগুলো পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো পচে গেছে৷ কোনরকমভাবে পচে যাওয়া লাশগুলো লংগদুতে নিয়ে আসা হয় ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।”

১৯৯৬ সালে এই ট্রাজেডি হলেও আজ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হয়নি। বিচারের আর কোন আশাও বাচিয়ে রাখা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা সন্তু লারমা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার প্রতিশ্রুতি তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী এমপি’রা দিলেও তার ১বছর পর অথাৎ ১৯৯৬ সালের পার্বত্য চুক্তির শর্ত তা ব্যাহত করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More