স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় যা জানা জরুরি স্তন ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না।

0

সচেতন হলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব। এতে চিকিৎসা সহজ হয়, ব্যয়ও কমে আসে। অক্টোবর স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাস।

অধ্যাপক ডা. পারভীন শাহিদা আখতার সাবেক বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা কম। বেশির ভাগ রোগীরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হয়ে থাকে। এতে চিকিৎসা কিছুটা জটিল, দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। অনেকের পক্ষে তখন আর সঠিকভাবে চিকিৎসা সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। অথচ সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে স্তন ক্যানসার নির্মূল করা সম্ভব।

স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় যা জানা জরুরি
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার নির্ণয়
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করতে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সাধারণত ২০ বছরের কম বয়সীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা, যথেষ্ট পরিমাণ শাকসবজি ও ফল খাওয়া, কমপক্ষে ১২ মাস শিশুকে দুধ পান করালে প্রায় ৪০ শতাংশ স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন টানা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন (চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া), মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীদের হরমোন থেরাপি, রাত জাগার অভ্যাস স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

স্তন ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না। কারণ, কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যা এড়ানো সম্ভব নয়। যেমন নারী হয়ে জন্ম নেওয়া, বয়স বাড়া, সন্তান ধারণ না হওয়া, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া ও দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, পরিবারে স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকা ইত্যাদি। এই ঝুঁকিগুলো যাঁদের আছে, তাঁদের নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।

তবে কেউ সচেতন হলে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে নিরাময় হওয়ার হার প্রায় শতভাগ। সে ক্ষেত্রে একজন স্তন ক্যানসারের রোগীও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবেন।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের উপায়
১. বয়স ২০ বছর হলে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে শেখা। আজকাল বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিষয়টি শেখা যায়। না হলে চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিন। তারপর মাসে একবার করে পরীক্ষা করা এবং সারা জীবন তা চালিয়ে যেতে হবে। এর বাইরে কোনো সমস্যা না থাকলেও
২–৩ বছর পরপর চিকিৎসকের মাধ্যমে শারীরিক পরীক্ষা করানো। কারণ, নিজের স্তন নিজে
পরীক্ষা করা আর চিকিৎসকের পরীক্ষা করার মান এক নয়।

২. বয়স ৪০ বছর হলে অবশ্যই স্তন ক্যানসার নিরীক্ষণ বা স্ক্রিনিংয়ে অংশ নিতে হবে।

বছরে একবার চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করবেন।

চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি করা।

প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা করা।

৩.বয়স ৫০-৭০ বছর হলে—

বছরে একবার চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করবেন

২–৩ বছর পরপর ম্যামোগ্রাফি করা

প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা করা

স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং মানে হলো স্তনে কোনো উপসর্গ নেই, চিহ্ন নেই, তবু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খুঁজে দেখা। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনেই এ ধরনের পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হয়, যা উপযুক্ত চিকিৎসায় নিরাময় হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More