হান্নান সরকার, রাঙ্গামাটি
আজ ১৭-ই নভেম্বর, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের একটি কালো দিন। ১৯৯৩ সালের এই কালো দিনে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বাঙ্গালীদের উপর জেএসএস সন্তুর সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা পরিচালনা করে। এই গণহত্যার ৩০ বছর আজ।
এই গণহত্যাকে পার্বত্য বাঙ্গালীরা ভুলে গেছে৷ স্বজন হারা পরিবারগুলোর সদস্যরা আজও নানিয়ারচর গণহত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি তুলে আর্তনাদ করে। কিন্তু কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। এইভাবেই ৩০টি বছর কেটে গেছে।
এই গণহত্যায় ২৬০ জনের অধিক নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়। বাঙ্গালী মা-বোনদের জেএসএস সন্ত্রাসীরা গণধর্ষণ করে হত্যা করে। আহত হয় প্রায় ১৫০ জন।
সন্তুর জেএসএস সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য বাঙ্গালীকে নিধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী শূন্য করবে এবং পাহাড়কে সন্ত্রাসে পরিণত করে রাজত্ব কায়েম করবে। তারা সেই স্বপ্ন নিয়ে বাঙ্গালী গণহত্যায় মেতে উঠেছিল সেসময়৷ এই গণহত্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৫ হাজার বাঙ্গালী নিহত হয়। এরা সবাই নিরস্ত্র বাঙ্গালী ছিল।
গণহত্যার পর নানিয়ারচর থেকে প্রায় ২১৮ পরিবার সমতলে ভয়ে ফিরে যান। সেদিন রাস্ট্র-প্রশাসন তাদেরকে নিরাপদ দিতে ব্যর্থ হয়৷ সন্ত্রাসে পরিণত হয় সমগ্র নানিয়ারচর সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাঙ্গালীরা প্রাণের ভয়ে দিগদিগন্তে ছুঁড়তে থাকে। সেইদিনের লোমহর্ষক ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।
সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবাজারের দিন, বুধবার ১৭ নভেম্বর। সকালের দিকে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার আহমেদ মিয়া ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফসহ পার্বত্য গণপরিষদের মিছিলটি স্থানীয় লাইবেরী প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। মিছিল প্রতিহত করার জন্য হামলা করে বেতছড়ি, ছয়কুড়িবিল, মাইচ্ছড়ি, গবছড়ি, তৈচাকমা, যাদুকাছড়া, বগাছড়ি, বড়াদম, বুড়িঘাট, কাঁঠালতলী, শৈলেশ্বরী, নানাক্রুম, সাবেক্ষ্যং, এগারাল্যাছড়া, বাকছড়ি, কেঙ্গালছড়ি থেকে আগত উগ্র উপজাতিরা শান্তিবাহিনীর নেতৃত্বে হামলা করে।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, সন্তু লারমা নিজেই এই গণহত্যার নেতৃত্ব দেন। সন্তু লারমা, ফনি ভূষণ চাকমা, শোভাপূর্ণ চাকমা ও বীরেন্দ্র চাকমা নেতৃত্বে ৭৭ জন জেএসএস সন্ত্রাসী গণহত্যায় অংশ নেন। সন্তু লারমার বাড়ি ছিল এই নানিয়ারচর উপজেলায়৷ সন্তু নিজেই ১৩ মাসের নুর কায়েদা নামের এক মেয়ে শিশুকে পিষে হত্যা করে এবং তার মাকে ধর্ষণ করে যৌন অঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
বাঙ্গালী লেখক না থাকায় এসব নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত ঘটনাগুলো বরাবরের মত ইতিহাস থেকে মুছে গিয়েছে৷ তৎকালীন গণমাধ্যম জেএসএস সন্ত্রাসীদের ভয়ে সত্য প্রকাশ করতো না। এমনকি তাদের পাহাড়ে প্রবেশে ছিলো কঠোর সেন্সর আরোপ।
সুরুজ মিয়া (৮১) ইসলামপুর, ফয়জ আলী (৭৯) বেতছড়ি ও আনোয়ার মোল্লা (৮৪) তারা নানিয়ারচর গণহত্যার পরের দিন মৃত্যুর ভয়ে এলাকা ছেড়ে ময়মনসিংহ ভালুকা চলে যান। তারা সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। নৃশংস গণহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার তারা জ্ঞান হারিয়েছেন। তারা বাঙ্গালী গণহত্যার বিচার চেয়েছেন এবং নিহতদের পরিবারগুলোর সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন