||এম. এ রুহুল আমিন বান্দরবান||
১৮ কোটি বাঙ্গালীর দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা সংখ্যা অনুপাতে মাত্র ০.৮০%, তারা কিভাবে সরকারি চাকরিতে ৫% কোটা সুবিধা পায়? ভাবনার বিষয় নয় কী?
ওসি, এসপি, ইউএনও, ডিসি, মেজর, কর্নেল থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি দপ্তরের বড়বড় পদ-পদবী গুলো আজ তাদের দখলে! আস্তে আস্তেই দেশের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নিচ্ছে৷
পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এবং অনগ্রসর জাতি হিসেবে সরকার তাদেরকে উপজাতি কোটা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, চাকরিতে তাদের জন্য রয়েছে অকল্পনীয় সুযোগ-সুবিধা, যা রাস্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীরাও ভোগ করছে না! তার পরেও অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জাতির তকমা দিয়ে তারা আর কতকাল উপজাতি কোটা ভোগ করবে?
আরো একটি অবাক তথ্য হলো- চুক্তিতে বলা হয়েছে তাদেরকে উপজাতি৷ এই পরিচয়ে তারা ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত করে। এর সুফল হিসেবে কোটাও ভোগ করে উপজাতি পরিচয়ে। অথচ আজ নিজেদের নতুন করে দাবি করে আসছে আদিবাসী হিসেবে। এটা হাস্যকর নয় কী? বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদের (ক) অনুযায়ী তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কিংবা উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত৷ আজকে তারা তাদের প্রথাগত যে, আইনের দোহাই দেয় সেই আইনে তাদের কি বলা হয়েছে? তাদেরকে বৃটিশরাও ট্রাইবাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মতে তারা ট্রাইবাল (উপজাতি) হিসেবে স্বীকৃত। পশ্চিমা এনজিও, খ্রিস্ট মিশনারী ও দ্বাতাসংস্থাগুলোর খপ্পরে পড়ে আজ তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি তুলছে৷ অথচ এই পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের দেশের উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি গুলোর আদিনিবাস বার্মার চম্পক নগর ও ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা সবাই উপজাতি। তারা ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ানদের মতো আদিবাসী নয়। এদেশে তাদের আগমনের অতীত ইতিহাস বলে তারা এদেশের ভূমিপুত্র নয়। ভূমিপুত্র ছাড়া কিভাবে আদিবাসী হয়? ২০০৭ সালের জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের আইএলও ১০৭-এর অপব্যাখা দিয়ে তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করছে। অথচ আইএলও তে উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও আইন নিয়ে আলাদা আলাদা বর্ণনা রয়েছে। তারা উপজাতি বিষয়ক অধিকার ও আইন না পড়ে শুধু কেবলমাত্র আদিবাসী বিষয়ক অধিকার ও আইন পড়ে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পশ্চিমা খপ্পরে পড়েছে। এদেশীয় মতলববাজ গোষ্ঠীর ইন্ধনে তারা আজ নিজেদের উপজাতি পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। অথচ তারাই আবার উপজাতি কোটায় সুযোগ-সুবিধা ও চাকরি নিতে লজ্জাবোধ করেনা। এরা হচ্ছে জাতে মাতাল তালে ঠিক।
এদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাই কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা ও তাদের অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরছি-
সারা বাংলাদেশ যে, পরিমাণ ধর্মীও বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ ধর্মীও বরাদ্দ উপজাতিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ সহ বিভিন্ন এনজিও, দ্বাতাসংস্থা থেকে পেয়ে থাকে৷ অন্যান্য সহায়তার কথা বাদই দিলাম। কারণ যার তথ্য জানলে চোখ কপালে উঠার উপক্রম হবে। তাই সেদিকে যেতে চাচ্ছি না।
এর পরেও যদি উপজাতিরা বলে তারা অবহেলিত, রাস্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না। তাহলে তা তাদের অকৃতজ্ঞতার পরিচয় ছাড়া কিছু নয়।
বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে তাদের সংখ্যা দিনদিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময় দেখা যাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালীর দেশে সরকারি চাকরিতে তারাই এগিয়ে থাকবে। বর্তমান পরিসংখ্যান তাই বলছে। তাদের এতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কি তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদ ছেড়েছে? পাহাড়ে প্রতিমুহূর্তে মানুষ উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতন-নিপীড়ন, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। তবুও অদৃশ্য কারণে সরকার বরাবরই তাদের ব্যাপারে উদাসীন নীতি গ্রহণ করে আছে। যা রাস্ট্রের জন্য চরম হুমকি স্বরুপ।
১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বরের পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তারা চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার তারিখ হতে ৪৫ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু চুক্তিতে এই মৌলিক শর্তটি থাকলেও তারা তা করেন নি। সরকার তাদের সমস্ত দাবিদাওয়া নিঃশর্তে মেনে নিয়েছে। তারপরেও তারা এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পাহাড়ে বিদ্যমান রয়েছে। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে তারা পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ লালন করছে৷ যদিও এইটি ‘পার্বত্য চুক্তি নয়’ এটি হচ্ছে সন্তু লারমার বিশ্বাসঘাতকতা। এদিকে সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পাহাড় হতে ২৩৯ সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে পাহাড়ে শান্তি- শৃঙ্খলা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই উপজাতিরা বাংলাদেশে থেকে খেয়ে আজ চালকের আসনে অবতীর্ণ হয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। বিদেশী এনজিও, দ্বাতাসংস্থার সহযোগিতায় তারা বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভেঙে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মত অবিকল পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দিকে হাঁটছে। যা অবাস্তব মনে হলেও তাদের বিগত বছরের কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসবাদ, এবং কথিত আদিবাসী শব্দ ব্যবহার তারই জলন্ত উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত করে।