আমিনুল হক, রাঙ্গামাটি
নিজেস্ব প্রতিনিধি
আজ ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলেও নানিয়ারচর বাঙ্গালীদের জন্য দুঃখময় একটি দিন। ১৬ই ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কর্তৃক আনারস বাগান ও সেগুনবাগান কেটে দেওয়ার এবং বাঙ্গালীদের উপর নৃশংস হামলার ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। নির্ধারিত তারিখে চাঁদার টাকা না পেয়ে ২০১৪ সালের এই দিনে বগাছড়ির বাঙ্গালীদের ১২ একর আনারস বাগান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয় এবং ২০ হাজার সেগুন গাছের চারা কেটে ধ্বংস করে দেয় ও বাঙ্গালীদের উপর নৃশংস হামলা করে ইউপিডিএফ।
তৎকালীন ১৫ই ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১০ ভাগে বিভক্ত হয়ে বাঙ্গালীদের ১২ একর আনারাস বাগান ও ২০ হাজার সেগুনগাছের চারা কেটে দেওয়া শুরু করে। একে একেই ১২ একর আনারস বাগান এবং ২০ হাজার সেগুন গাছের চারা কেটে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। উত্তেজিত বাঙ্গালীরা সকাল বেলা প্রতিবাদ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করলে ইউপিডিএফ অতর্কিতভাবে হামলা করে। মূলত ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়েই বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ও সেগুনের চারা কেটে ধ্বংস করে দেয়। আনারস চাষী ও সেগুন গাছের চারা সৃজন করা বাঙ্গালীরা অভিযোগ করে বলেছিলো, “ইউপিডিএফ বাঙ্গালী আনারাস চাষী ও সেগুন চারা সৃজনকারীদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। এই চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই ইউপিডিএফ রাতে এসে সব আনারস বাগান ও সেগুন চারা কেটে দেয়৷”
১০ কোটি টাকা সমমূল্যে আনারস বাগান ও সেগুন চারা ধ্বংস করে দেয়। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙ্গালী। যখন বাঙ্গালীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন তখন ইউপিডিএফ বাঙ্গালীদের উপর অতর্কিত হামলা করে বসে। এসময় ৩৫ জন বাঙ্গালী রক্তাক্ত হয়েছিল৷ বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ও সেগুন চারা কেটে এবং বাঙ্গালীদের উপর হামলা করে পরে আবার ইউপিডিএফ বাঙ্গালীদের মামলার আসামী করেন! বাঙ্গালীদের আনারস ও সেগুন চারা ধ্বংস এবং বাঙ্গালীদের উপর হামলার ঘটনা দামাচাপা দিতে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা ২০/৩০ টি উপজাতি ঘর-বাড়ি হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে এসব ঘটনার জন্য বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে গণমাধ্যমে ব্যাপক মিথ্যাচার রচিত করে। ইউপিডিএফ এসব করে প্রশাসন থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নেন। ইউপিডিএফের এই নোংরা রাজনীতির বলি হয় সাধারণ উপজাতি এবং বাঙ্গালীরা। এসব ঘটনার মামলায় শতশত বাঙ্গালী হয়রানির শিকার হয় এবং আনারস ও সেগুন চারা কেটে দেওয়াই লাখ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয় বাঙ্গালীরা। এখনো সেই ঋণের বোঝা বাঙ্গালীরা বহন করে চলছে।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বাঙালী কৃষকের ১২ একর আনারস বাগান ও ২০ হাজার সেগুন গাছের চারা কেটে ধ্বংস করার প্রতিবাদে এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ বাঙ্গালী কৃষকদেরকে যথাযথ ক্ষতিপুরনের দাবীতে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল কিন্তু তার কোন ফল হয়নি!
এ ঘটনার আজ ৭ বছর পূর্ণ হলেও এখনো বাঙ্গালী কৃষকরা কোনপ্রকার ক্ষতিপূরণ এবং প্রতিকার পায়নি। এইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার, চাঁদাবাজি ও জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।