পরিবারের কাছে আর ফেরা হলো না সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের।

0

কথা ছিল সেনাবাহিনীর চাকরি শেষে পটুয়াখালীতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জীবনের বাকি কাটাবেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। গতকাল বুধবার রাতে বান্দরবানের রুমায় জেএসএস সন্তুর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান।

তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পটুয়াখালীর জেলা শহর সংলগ্ন বহালগাছিয়া গ্রামের বাড়িতে নিজ হাতে গড়া বাসভবন ‘সেনা নিকেতন’ পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে।

বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে কবরে শায়িত হবেন সেনা সদস্য হাবিবুর রহমান।

হাবিবুর রহমানের পৈত্রিক বাড়ি পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে। তবে তিনি পটুয়াখালী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বহালগাছিয়ায় বাড়ি করেছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিতে খুব বেশি দেরি ছিল না। এক বছরের কিছু বেশি সময় চাকরির মেয়াদ ছিল। চাকরি শেষ করে পটুয়াখালী শহরেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করার পরিকল্পনা ছিল সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের। তবে তার সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো।

নিহত হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে হাসিবুর রহমান বলেন, আব্বার সঙ্গে সবসময় কথা বলতে পারতাম না। তিনি যখন ফোন করতেন তখনই কথা বলতে পারতাম। পাহাড়ি এলাকা বলে মোবাইলে নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল। রাতে আব্বার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোনো ভুল করলে ক্ষমা করে দিও, একটা অভিযানে যাচ্ছি। এরপর আজ সকালে শুনি আব্বা আর বেঁচে নেই।

হাসিবুর আরও জানান, তার বাবাকে এ বাড়িতে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

নিহত হাবিবুর রহমানের ভাই আলম জানান চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে করে ভাইয়ের মরদেহ পটুয়াখালীতে নিয়ে আসা হবে।

সেনা সদস্য হাবিবুর রহমানের মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। ছোট ছেলে হাসান সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কক্সবাজারে কর্মরত।

জেএসএস সন্তু সন্ত্রাসীদের একটি দল রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে আগমন করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাইং খিয়াং লেক আর্মি ক্যাম্প থেকে সিনিয়ার ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি নিরাপত্তা টহল দল রাত ১০টায় সেখানে যায়। সেখানে পলায়নপর সন্ত্রাসীদের এলোপাতারি গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। এসময় আরও এক সেনাবাহিনীর সৈনিক আহত হন। মারা যান তিন সন্ত্রাসী।

উল্লেখ যে, জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু লারমার সঙ্গে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর সরকার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তির মৌলিক শর্ত ছিল জেএসএস সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরকারের নিকট জমা প্রদান করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। বিনিময়ে সরকার তাদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়। পরিতাপের বিষয় তারা চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সক্রিয় আছে। তাদের হামলায় চুক্তির পর এই পর্যন্ত হাজারো মানুষের পাশাপাশি ৩ জন সেনা নিহত হয় ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়। যা পার্বত্য চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More