মোঃ সোহেল রিগ্যান– জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ব্যাম্বু রিসোর্সেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রজাতিবৈচিত্র্য ও উৎপাদনগত দিক বিবেচনায় ৩৩ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে সারাবিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে। এদেশের বাঁশ উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রথম৷ এ অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বাঁশঝাড় রয়েছে৷ এখানকার উৎপাদিত বাঁশের ন্যায মূল পাচ্ছে না হতদরিদ্র কৃষকরা। ন্যায মূল্য না পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, এখানে বাঁশ বাজারজাত করার প্রক্রিয়া অনেক কঠিন৷ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ১০/১২ মাইল পাহাড়ি আঁকাবাকা পানিবিহীন খাল অতিক্রম করে বাঁশ বাজারে নিয়ে আসতে হয়। অসহ্য চাঁদা আর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে বিক্রেতারা চাহিদা মত, এবং পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছে না।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকা ৪টি উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনের অব্যাহত চাঁদাবাজির কারণেই এখানকার হতদরিদ্র কৃষকর বাজারজাত করে চাহিদা মত শ্রমের মূল্য পাচ্ছেনা, এবং বাঁশ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০/১২ মাইল খাল পাড়ি দিয়ে এসে ১০০ বাঁশ বিক্রি করছে, ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে! এই টাকা হতে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিটি বাঁশ হতে ২ টাকা হারে ১০০ বাঁশ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় সন্ত্রাসীদের। এই কারণে হতদরিদ্র মানুষ বাঁশ উৎপাদন করতে আগ্রহ হারাচ্ছে, এবং বিক্রি করে শ্রমের ন্যায মূল্য পাচ্ছে না।
বাঁশের ন্যায মূল্য কেন দিচ্ছে না সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের থেকে জানতে চাইলে তারা জানায়, এখান থেকে বাঁশ কিনতে হলে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মোটা অংকে চাঁদা দিতে হয়। বাজার ফান্ডকেও দিতে হয়। প্রতিটি বাঁশের গাড়ি হতে পুলিশকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়৷ ফরেস্টকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এছাড়াও আরো অগণিত চাঁদা পথে পথে দিয়ে শহরে পৌছতে হয়। যে বাঁশ এখানে ৭ টাকা কিনা পড়ে সেই বাঁশ শহরে পৌছাতে ৬০ টাকার উপর খরচ পড়ে। মোট কথা হচ্ছে চাঁদা না দিলে বাঁশ শহরে পৌছানো সম্ভব না। গাড়ি ওভারলোড করে শহরে নিতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাঁশ উৎপাদনের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিলেও হরিলুট করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে আশানুরূপ বাঁশের চারা দেখা যায়নি৷ এইভাবে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সবগুলো বাঁশ উৎপাদন প্রকল্পের অর্থ হরিলুট করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মূলত এই কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে পূর্বের তুলনায়।