মোঃ সোহেল রিগ্যান– রাজধানী ঢাকার বুকে এখনো আদিবাসী শব্দ যুক্ত নামের কলেজ রয়েছে-চারদিকে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।
সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় গত ১৯ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দ আদিবাসী শব্দ’টি ব্যবহার না করতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যদিও এর আগেও সরকার আদিবাসী শব্দের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কিন্তু তা দেশপ্রেমিক ছাড়া কেউ কর্ণপাত করেনি।
১৯ জুলাই এর প্রজ্ঞাপনে সংবিধান সম্মত শব্দ ব্যবহারের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুযায়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতিদের ক্ষুদ্র জাতিসত্বা হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উপজাতি ‘কোটা’ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে উপজাতি ক্ষুদ্র জাতিসত্বা। তারপরও সরকারের কিছু আমলা এখনো উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন করে আসছে। সরকারি কিছু ওয়েবসাইট আদিবাসী শব্দ এখনো বিদ্যমান। সরকারি কিছু নথিপত্রে এখনো আদিবাসী শব্দ বহাল আছে! সরকারের মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতারা এখনো আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করছে৷ সরকার একদিকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করছে অন্যদিকে সরকারের লোকেরা সে প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আসছে!
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো- রাজধানী ঢাকা ১২১৬, মীরপুর ১৩ নাম্বার, প্লট-৪, ব্লক-১, আহসানউল্লাহ রোডে এখনো আদিবাসী নামক শব্দে একটি কলেজ রয়েছে৷ কলেজ’টির নাম ‘বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ’। সরকার থেকে আদিবাসী শব্দ যুক্ত কলেজ কীভাবে পরিচালনার অনুমতি পায়? তা আমার বোধগম্য নয়। এখানে ঠিকই সরিষার ভিতর ভূত রয়েছে। যতদিন সরিয়ার ভিতরে থাকা ভূত তাড়ানো যাবে না ততদিন আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের প্রজ্ঞাপন জারি কার্যকর হবেনা। বরং এমন প্রজ্ঞাপন বিতর্ক সৃষ্টি করবে। যা সবার কাছে উপহাস ও হাসির খোরাকে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ব্যাপক ঝড় উঠেছে৷ নেটিজেনরা বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছে৷ এভাবে রাজধানীর বুকে আদিবাসী শব্দ যুক্ত কলেজ থাকতে পারে তা আবার বন্ধ না করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি আমলাদের উদাসীনতাকে দায় করেছেন নেটিজেনরা।
বনফুল আদিবাসী গ্রীন হার্ট কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই আদিবাসী শব্দে দীক্ষিত হচ্ছে এবং এদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে তারা জানতে পারছে! বিষয়টি যে ভবিষ্যত এর জন্য কতটা মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হবে তা আমাদের সংশ্লিষ্টরা অনুধাবন করতে পারছে না। জাতিসংঘের ঘোষণা পত্র অনুযায়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, এবং জাতীয়তা লাভের অধিকার রয়েছে। তদুপরি বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা স্বাধীন দেশ গঠন করার মত সুযোগ তাদের সৃষ্টি হবে ৷ যেটা নিয়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে এতবছর বিচ্ছিন্নতাবাদীতা জিইয়ে রেখেছে। এটা তাদের কোন অধিকার বিষয়ে বিদ্রোহ নয়। এটা সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের বিদ্রোহ৷ তাদের বিদ্রোহ ঠেকাতে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের সব অধিকার অক্ষরে অক্ষরেই নিশ্চিত হয়। তারপরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এই অস্ত্র প্রদর্শন কেন?
বর্তমানে উপজাতিরা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করার রেফারেন্স দেখাচ্ছে, এবং এখনো সরকারি আমলা, মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের আদিবাসী শব্দ ব্যবহারকে রেফারেন্স হিসেবে উত্থাপন করছে। এসব তারা জাতিসংঘ এর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট পাচ্ছে৷ আদিবাসী স্বীকৃতির জন্য তারা উড়েপড়ে লেগেছে৷ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
সরকারকে আদিবাসী শব্দ নিয়ে আরো সর্তক হতে হবে৷ যাতে ভবিষ্যতে আদিবাসী শব্দ আর কোনমতেই ব্যবহার না করা হয়। শব্দটি বন্ধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। রাজধানী ঢাকা মীরপুর এর বনফুল আদিবাসী গ্রীন হার্ট কলেজ’টি বন্ধ করতে হবে অথবা উক্ত আদিবাসী শব্দ যুক্ত নাম মুছে ফেলতে হবে৷