উপজাতি সন্ত্রাসীরা এখন আর চাঁদার জন্য লোকালয়ে আসেনা বাঙ্গালীরাই তাদের চাঁদা দিয়ে আসে!

0

পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো একটা সময় অস্ত্রক্রয়, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং বেতন-ভাতার জন্য চাঁদা উত্তোলন করতে বাঙ্গালী গ্রামগুলোর লোকালয়ে আসতো এবং চিঠিপত্র আদানপ্রদান করতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এবং বাঙ্গালী দালালদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়াই সাম্প্রতিক সময়ে তারা আগের পুরাতন রীতি অনুযায়ী আর মাসিক, বাৎসরিক ও যে কোনধরনের চাঁদা উত্তোলন করেন না। স্থানীয় বাঙ্গালীদের মধ্যে একটা অংশ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক সুবিধার জন্য উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর চাঁদা যথাস্থানেই পৌছে দিয়ে আসেন প্রায়শ্চই৷ পর্যাবেক্ষণে এমনই সত্যতা মিলেছে। কিছুই জায়গাতে ব্যতিক্রম রয়েছে৷ শুধুমাত্র যে জায়গাগুলোতে চাঁদার জন্য হামলা, অপহরণ, হত্যা ও যানবাহন টার্গেট করা হয়। না হয় প্রায় জায়গাতে এখন আর চাঁদা আদায়ে সন্ত্রাসীদের বেগ পেতে হয়না৷ স্থানীয় বাঙ্গালী দালালরা অতিশয় সম্মানে চাঁদা নিয়মমাফিক সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়!

এই নিয়মে চাঁদা আদানপ্রদানের সত্যতা জানতে দীর্ঘদিন থেকে আমরা পর্যাবেক্ষণে রেখেছিলাম চিহ্নিত কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা, ঠিকাদার, গরু ব্যবসায়ী, অবৈধ গাছ ব্যবসায়ী ও যানবাহন চালককে।
বলে রাখি নিরাপত্তা জনিতকারণে আমরা প্রসঙ্গের স্থানকাল ও বিস্তারিত উল্লেখ করছি না। শুধুমাত্র চাঁদা কারা কীভাবে দিচ্ছে তার ধরনটা উল্লেখ করতেছি-

একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের কাজ পেয়েছেন এক ঠিকাদার। পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী কবলিত এলাকা বা তাদের নিয়ন্ত্রণ এলাকায় কাজ করতে হলে কাজের বরাদ্দের ৫% দিতে হয়। এটা তাদের নির্ধারিত করা কিন্তু অভিযোগ আছে তারা যেমন খুশী তেমনও চাঁদা আদায় করে এবং ১০% হারেও চাঁদা আদায় করে। উক্ত ঠিকাদার ১০% হিসেবে করে ২২ লক্ষ্য টাকা চাঁদা সন্ত্রাসী সংগঠনের এর চীফ কালেক্টর এর নিকট পৌছে দিয়েছে ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। এক রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনে অংশ নিবে জয় নিশ্চিত করতে ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ১৪ লক্ষ্য টাকা দিয়ে এসেছেন! গরু ব্যবসায়ী তাদের পাহাড়ের ভিতরে গিয়ে গরু কিনতে হয় তাই হয়তো তাদেরকে টোকেন পাহাড়ে ভিতরের গিয়ে করতে হয়। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই গরু ব্যবসায়ীরা বাৎসরিক টোকেন করেন ৬ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে এবং এর মধ্যে কিছু গরু ব্যবসায়ী স্থানীয় সেনাক্যাম্প গুলোর সোর্স হলেও তারা কিন্তু আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বার্তা বাহক এবং A গ্রেড এর সোর্স। তাদের মাধ্যমে সেনাক্যাম্পের যাবতীয় তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য পেয়ে থাকেন সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এই গরু ব্যবসায়ীদের জন্য কিন্তু পাহাড়ের আনাচে কানাচে ঘোরাঘুরি উন্মুক্ত৷ গাছ ব্যবসায়ী যারা তাদের মধ্যে একশ্রেণী আছে সেনাটহল এর তথ্য সন্ত্রাসীদের আদান প্রদান করেন। তারা সন্ত্রাসীদের রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় যাতায়াত করার অনুমতি পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে চাঁদা নেওয়ার যে তথ্যের প্রয়োজন হয় সে তথ্য কিন্তু এই অবৈধ গাছ ব্যবসায়ী
থেকে পেয়ে থাকে সন্ত্রাসীরা। তারা মাসিক বাৎসরিক চাঁদার টোকেন সংগ্রহ করেন এবং পারমিট গাছের ফুট প্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে থাকেন৷ তারা বাঙ্গালী এলাকা হতে বিভিন্ন চাঁদা উত্তোলন করে সন্ত্রাসীদের নিকট পৌঁছে দেন। তাদের মত একই নিয়ম অনুসরণ করেন ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন৷ তারাও সন্ত্রাসীদের গিয়ে চাঁদা পৌঁছে দেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীদের থেকে সন্ত্রাসীরা এখন এই রীতিতে চাঁদা আদায় করে৷ বিষয়টি প্রকাশ্যে-গোপনে হলেও সংশ্লিষ্ট মহলগুলো এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনিচ্ছুক৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র এই নিয়মে চাঁদা দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এই চাঁদা প্রদানকারী বাঙ্গালী দালালদের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং তাদের এই রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম বন্ধে রাষ্ট্রীয় যে, পদক্ষেপগুলো থাকার কথা তাও বিরুদ্ধে নেই৷ সংশ্লিষ্ট মহলের এই রহস্যজনক নীরবতার ভূমিকায় বাঙ্গালী দালালরা নির্ভয় ও নির্বিঘ্নে সন্ত্রাসীদের পাহাড়ের গভীরে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসেন। তাই সন্ত্রাসীরা আর বাঙ্গালী লোকালয় ও জেলা বা উপজেলা সদর না এসেও চাঁদা পেয়ে যাচ্ছেন। মূলত একারণে সন্ত্রাসীরা এখন অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে। দুই দশকে যেভাবে চাঁদা আদায়কালে সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে বর্তমানে সে তুলনায় পরিসংখ্যান অনেক নগন্য।

সন্ত্রাসীরা চাঁদা গ্রহণ করার সময় বিশেষ কায়দা কৌশল অবলম্বন করে। যে কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকছে। যে বাঙ্গালী দালাল তাদের গন্তব্যেস্থানে গিয়ে চাঁদা প্রদান করে তাকে ৫/৬ জন দিয়ে ভেরিফিকেশন করা হয় এবং নির্ধারিত সময় ও স্থান বারবার পরিবর্তন করেই নিশ্চিত হওয়ার পরেই চাঁদার টাকা গ্রহণ করে। একটি দেশের রাষ্ট্র প্রদানের সাথে একজন সাধারণ জনতার সাক্ষাতে নিরাপত্তার যত আয়োজন ও ঝামেলা পোহাতে হয় তার চেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় চাঁদা প্রদান করতে। তারপরও স্থানীয় বাঙ্গালী দালালরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য রাষ্ট্রের বৃহৎ ক্ষতি করে চাঁদা প্রদান করেই যাচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More