মোঃ সোহেল রিগ্যান– নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। আয়তনের এক-দশমাংশ ভূস্বর্গ পর্যটন শিল্পের অফার সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের উপর দেশি-বিদেশী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী তথা শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। যার কারণে এই অঞ্চল কে বিচ্ছিন্ন করতে দীর্ঘ সময় ধরে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দেশদ্রোহীতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা ও সংকট নিরসনে সরকার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির অধিকাংশ ধারা উপ-ধারা বাস্তবায়িত। অবশিষ্ট ধারাগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এই চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের সবচেয়ে বড় বাধাই ‘অবৈধ অস্ত্র’। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক প্রধান শর্ত ছিলো পিসিজেএসএস এর সশস্ত্র সদস্যরা সরকারের নিকট সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র আত্মসমর্পণ করেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এজন্য সরকার তাদের কর্মসংস্থান এবং সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবেন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পিসিজেএসএস সরকারের নিকট সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দেয়নি! অভ্যন্তরী কোন্দলে জেএসএস ভেঙে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এর আবির্ভাব হয়। এ সংগঠনটির যাত্রা ও উদ্দেশ্য জেএসএস এর মত অবিকল চাঁদাবাজি, হত্যা, অপরণ ও খুন-গুম করে এ অঞ্চলকে অস্থিরতার দিকে ধাবিত করা এবং বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আলাদা করে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন করা। পার্বত্য অঞ্চলে এখন ৫/৬ টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে। এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর রয়েছে অত্যাধুনিক ভারীঅস্ত্র৷ যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলোর ভান্ডারেও নেই! দুঃখজনক হলেও সত্য এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এবং এ অঞ্চলের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদে সেনাবাহিনী যেভাবে আত্মত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে সেভাবে এ অঞ্চলে অন্যান্য বাহিনী এবং প্রশাসন ভূমিকা রাখেনি। বলাবাহুল্য যে, এ অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। যার কারণে সন্ত্রাসীরা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে শক্তি সঞ্চয় করেছে। পুলিশ ও নির্বাহী প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে উদাসীন। তারা এই অঞ্চলের অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থের চেয়েই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য বেশি দিয়ে থাকে। তারা আছে পকেট ভরার তালে। এ অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো টিকে থাকার অর্থনৈতিক উৎসগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নেই। পুলিশকে দেখা যায় পার্বত্য সন্ত্রাসীগুলোর পক্ষে অবস্থান নিতে। সেনাবাহিনী বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসবাদ দমনের অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজ এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আটক করলেও তাদেরকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে বিশেষ ভূমিকায় দেখা যায়। সেনাবাহিনী অপরাধী ধরে আর পুলিশ তা ছাড়ে!!পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে আটককৃত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনিহা দেখা যায়৷ যা পুলিশের অপেশাদারিত্ব আচরণ বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়। যৌথভাবে পাহাড়ের গহীনে অভিযানে গেলে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে পুলিশকে সেনাবাহিনী থেকে পিছনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে অভিযান বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীকে পুলিশ খুঁজে নিতে হয়! পুলিশ বাহনা দেয় সেনাবাহিনী কেন পুলিশ ছাড়া অভিযান করে! এটা হাস্যকর মনে হলেও চরম বাস্তব। প্রায় সময় দেখা যায় প্রকাশ্যে গোপনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধচারণ করতে। যা খুবি দুঃখজনক এবং রাষ্ট্রীয় কাজে বাধার সামিল। উপজাতি সন্ত্রাসীদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধে পুলিশের ভূমিকা জিরো। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার সঠিক তদন্তে পুলিশের অনিহা লক্ষনীয়। এবং তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার স্বত্বেও তামিল না করার প্রবণতা পুলিশের একপ্রকার রাষ্ট্রের সাথে কানামাছি খেলার সামিল। মূলত এসব কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবাদ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার কারণে এ অঞ্চলে রাষ্ট্রের আবির্ভাব দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এদিকে পুলিশ সমতলের ন্যায় সেনাবাহিনীর প্রতি পাহাড়েও বৈরী আচরণে শীর্ষে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় দেশের অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশকে সেনাবাহিনীর অধীনে দেওয়ার বিকল্প নেই। যদি সঠিক সময়ে রাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের লাগাম হারাবে রাষ্ট্র।