২রা ডিসেম্বর আসলেই পাহাড়ি নেতারা সূর তুলেন চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি ” মুই হিচ্ছু ন পেই “। বাঙালীরা সেটেলার,অনুপ্রবেশকারী,ভূমি দখলকারী,,,,ইত্যাদি।
পাহাড়ি নেতাদের মতে চুক্তি বাস্তবায়ন মানে নিম্নরূপঃ
১. এখানের ৯ লক্ষাধিক বাঙালীর পাহাড় ছেড়ে সুড়সুড় করে চলে যাওয়া।
২. চাকমাদের দ্বারা তৈরি পুলিশ ফোর্স দ্বারা পাহাড়ে শাসন করা।( আর্মির মতো)।
৩. সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে বাস করা। ওরা ওখানে পিটি প্যারেড, ভলিবল, বাস্কেটবল খেলবে। বাহিরে আসবে না।
৪. সকল অর্থনৈতিক এবং ভূমি সংক্রান্ত সব বিষয়ে পাহাড়ীদের একচ্ছত্র অধিকার থাকা।
৫. কোটার সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সরকারী (সমতলে) চাকুরী করা।
পাহাড়িদের অস্ত্রের ভয়ে বাঙালীদের চুপচাপ থাকা।
বাস্তবতা হলোঃ
(১) ১৮ কোটি জনসংখ্যার
বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান চাপ কোন কাগুজে চুক্তি বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঠেকানো যাবে না। নানাভাবে মানুষ যাবেই। নেচারাল মাইগ্রেশন মানব প্রবৃওি।
(২) কোন প্রকার শক্তি বা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বা গন হত্যা ( ১৯৮০-৯০) চালিয়ে বাঙালীকে পাহাড় থেকে তাড়ানো যাবে না। ১৯৮৬ সালের ভূষণ ছড়ার মতো বাঙালী গনহত্যার ঘটনা এখন ঘটালে তার প্রতিক্রিয়া এখন সমতলে বসবাসকারী পাহাড়িদের গায়ে পরতে পারে। তথ্য প্রবাহের এই যুগে এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হবে সাম্প্রদায়িক। যা মোটেই কাম্য নয়। ( আশংকার কথা বলছি)
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়াবলী সম্পর্কে সমতলের মানুষের ধারনা এখন অনেক স্পষ্ট। যা তা প্রচার চালিয়ে সার্বোভৌমত্ব নষ্ট হয় এমন কাজ আর কেউ বরদাস্ত করবে না।
৪. বৈদেশিক কোন চাপ বা প্রভাব দিয়ে বাংলাদেশ কে কাবু করা যাবে না।
৫. এখন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি দেশ শাসন করে,তাই পূর্বতন সামরিক সরকারের মতো বৈধতার সংকট না থাকায় সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিতে জনগণের সমর্থন পাবেন।
৬. দেশের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো বা শক্তি ৭০-৮০ দশকের মতো দূর্বল নয়।বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধের কলাকৌশলের অভিজ্ঞতায় সেনাবাহিনী সম্বৃদ্ধ।
৭. বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন তৎপরতা বা সংঘাত সৃষ্টি করে বিদেশি (ভারত) সহায়তা পাওয়ার আশা দূরাশা মাত্র।
৮. সন্তু লারমার পক্ষে আরেকটি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার শক্তি সামর্থ্য বয়স নাই, কারন পাহাড়িরা এখন বহুভাগে বিভাজিত। বর্তমান প্রজন্মের নেতারা দূর্নীতিবাজ,আরাম প্রিয়। গেরিলা যুদ্ধ করার মতো সক্ষমতা নাই।
৯. সংবাদ মাধ্যমে একচেটিয়া প্রচারের সুবিধা আর পাওয়া যাবে না।
১০. পাহাড়িরা ব্যাপক হত্যাকান্ড (১৯৮০-৯০) ঘটালে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবে। আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক জনমত এদের প্রতিকূলে যাবে।
১১. দেশের আভ্যন্তরীন মানুষের সমর্থন বা সহানুভূতি না পেলে পাহাড়িরা চুক্তি নিয়ে যে অলীক কল্পনা ( জুম্মা ল্যান্ড) দেখেন তা ১৮ কোটি মানুষের দেশে অবাস্তব।
১২. পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সেনাবাহিনী কখনো ক্যান্টনমেন্টে ভলিবল খেলে সময় পার করতে পারবে না।
নানান গোষ্ঠীর তৎপরতা রোধে তাকে অরণ্যেই খেলতে হবে।
৯ লক্ষ বাঙালী যাদের ৭০% তরুন যারা পাহাড়ে জন্ম নিয়েছে তারা হিল থেকে চলে যাবে বা বাধ্য করা যাবে বলে মনে করেন তারা মেয়াদোত্তীর্ণ গাঁজা সেবন করছেন বলেই মনে করি। দ্বিতীয় প্রজন্মের এই সিংহভাগ বাঙালী যারা পাহাড়ে নিয়েছেন তারা চেঙ্গী, সাঙ্গু, মাতামুহুরির খরশ্রোতা নদীর সন্তান। কোন সরকার এদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। পাহাড় থেকে বাঙালী খেদানো শাপলা চত্বর থেকে হেফাজত খেদানোর মতো নয়।
কারন ৩০ লক্ষ বাঙালীর রক্তে ৬৪,৫৬৫ বর্গমাইলের যে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে হয়েছে তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামও ছিলো। স্বাধীন বাংলার প্রথম বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি রউফ এই পার্বত্য চট্টগ্রামেই জীবন দিয়েছেন। বাঙালি পাহাড়ে আছে থাকবে। দাম দিয়ে কিনেছি স্বাধীনতা, কারো দয়ার দান নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী ও পাহাড়ি সমান মর্যাদায় ও সম-অধিকার নিয়ে বসবাস করুক। এখানে কাউকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিনত করা যাবে না।
বিজয়ের মাসে এই হোক অঙ্গীকার।
লেখক- মেজর নাসিম (অব:)
১০-১২- ২০২২
ঢাকা