ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিজো, বম ও কুকি চিন জনগোষ্ঠীর সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে বমদের শরণার্থী বানাচ্ছে কেএনএফ।

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান- কুকি চিন সন্ত্রাসীদের ভয়ে পাড়া ছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনজাতিরা। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম পাড়া হইতে জনজাতিরা জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত দিকে হাঁটছে। একপ্রকার কুকি চিন সন্ত্রাসীরা এসব গ্রামবাসীদের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে আহত নিহত হওয়ার ভয় দেখিয়ে শরণার্থী বানাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷

কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন কুকি ল্যান্ড বা কুকি রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।

২০০৮ সালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কেএনএফ। ২০১৮ সালে তাদের সশস্ত্র শাখার কার্যক্রমের খবর পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর ইন্ধনে কেএনএফ এই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের উপর। তাদের এই সশস্ত্র সংগ্রাম অনাকাঙ্ক্ষিত বলা যায়৷ এমনকি একদম অহেতুক এবং অন্যায় আবদারও বটে। চাঁদাবাজি খুন-গুম, ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ধাবিত করে আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর জন্য দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী মহল সমর্থন অর্থ ও ইন্ধন জোগাচ্ছে। কুকি চিন জনগোষ্ঠীর নাথান বম এর সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ বছর দুয়েক ধরে নিজেদের দাবিগুলো পেশ করে এবং সক্ষমতা জানান দিতে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক পোশাক পরিধান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছে। একটি সূত্র ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে।

সশস্ত্র অবস্থায় কেএনএফ সশস্ত্র টিম

গত ২৮ জানুয়ারী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর ভয়ে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মুয়ালিপাড়া কারবারিসহ প্রায় ৪০ টি পরিবারের ১৪৬ জনের মত নারী-পুরুষ ও শিশু পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ২৭ জানুয়ারী সকাল ১১ টা হইতে কেএনএফ অর্তকিতভাবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। জানা যায়, আর্থা পাড়া, হ্যাপি হিলসহ বিভিন্ন পাড়া হইতে বম জনজাতিদের তাড়িয়ে দেয় কেএনএফ। ভারতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বম, মিজো, কুকি চিন জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। মূলত ভারতের বম, মিজো ও কুকি জনগোষ্ঠীর সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বমদের শরণার্থী হিসেবে ভারতে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের লংতলাই জেলার চংতে মহকুমার চামদুর প্রজেক্টে এলাকায় ২৪৫ জন বমসহ বিভিন্ন ধাপে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বম শরণার্থী সংখ্যা ৩৯০ জন। ওখানকার এক সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিকট প্রেরিত এক স্মারকলিপিতে জানায় ৭০০ জনের অধিক বম শরণার্থী হয়েছে।

মুয়ালিপাড়ার কারবারি জানান তারা বেশ কয়েকদিন থেকে কেএনএফ কর্তৃক অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। স্থানীয় মারমা সম্প্রদায় ও এক বৌদ্ধ ভিক্ষু তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তার মেয়ের জামাইকে কেএনএফ ধরে নিয়ে মারধর করে। পরে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। পাড়ার কারবারিসহ পাড়ার বাসিন্দারা কোন গন্তব্যে না পেয়ে অতঃপর রুমা সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে আশ্রয় গ্রহণ করে।

কেএনএফ এর বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বর্তমান সময়ে সমালোচনার জন্ম হয়েছে। তাদের ভয়ে এর আগেও অনেক উপজাতি পরিবার বাস্তুহারা যেমন হয়েছে তেমনি দেশান্তরি হয়েছে শরণার্থী হিসেবে। এবার সবচেয়ে যে বিষয়টি চাউর হয়েছে সেটি হচ্ছে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার মুয়ালিপাড়াসহ মোট ৪টি গ্রামের ১৪৫ পরিবার বাসিন্দাদের জিম্মি করে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং পরবর্তীতে মুয়ালিপাড়ার কার্বারীসহ গ্রামবাসীরা ৪কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে পাড়ি জমিয়েছে৷ এছাড়াও রুমা উপজেলার প্রাংসা পাড়া, ইলি চান্দা পাড়া, ক্যকটাই পাড়া, ক্রোংক্ষ্য পাড়াসহ মোট ১২ টি পাড়ার মানুষ আতঙ্কে আছে। পরিবারগুলোর অনেক বাসিন্দারা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনদের বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

বম ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে ভারতে শরণার্থী বানানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতে থাকা স্বজাতি জাতিগোষ্ঠীর সমর্থন পাওয়া এবং কুকি চিন সদস্যরা শরণার্থীদের সঙ্গে মিশে আশ্রয় গ্রহণ করার সুযোগ লাভ করা। বম ও মারমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রেক্ষাপট নিয়ে নানান প্রশ্ন ও বিতর্ক জন্ম হয়েছে।

উল্লেখ যে, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কর্তৃক জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ তাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গত ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে বিশেষ অভিযানে নামে যৌথবাহিনী৷ এই অভিযানকে কেন্দ্র করে কুকি চিন কৌশল অবলম্বন করে বম ও মারমাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে ঠেলে দিতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More