পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এই ১০ লাখ বাঙ্গালীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে বলা যায় ৯৯% পার্বত্য বাঙ্গালী অকৃতজ্ঞ এবং নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে উদাসীন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত যেসকল বাঙ্গালীরা শান্তিবাহিনী নামক সন্তু লারমার জেএসএস সন্ত্রাসী কর্তৃক হাজার হাজার বাঙ্গালী হত্যা, খুন-গুম ও নির্যাতনের নির্মম করুণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে তাদেরই অধিকাংশ এখন বয়োবৃদ্ধ এবং পরপারে চলে গেছেন। বর্তমান প্রজন্ম এবং পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময় যেসকল বাঙ্গালীরা পাহাড়ে এসেছে তাদের মধ্যে পার্বত্য প্রেম তথা দেশপ্রেম নেই। চুক্তির পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে বসতিস্থাপন করা বাঙ্গালীদের মধ্যে ১৯৭৯ সালে বসতিস্থাপন করা বাঙ্গালীদের সহমর্মিতা নেই। তারা উপজাতি সন্ত্রাসী এবং উপজাতিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে নিজেদের এগিয়ে নিতে চায়! অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৯ সালে যেসকল বাঙ্গালীরা বসতিস্থাপন করেছে তারা তাদের পরিবারের সদস্য হারানোসহ অনেক নির্মম নির্যাতন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে৷ ৭৯ সালের বাঙ্গালীদের আত্মত্যাগ এবং অবদানকে অস্বীকার করতে চায় নতুন বসতিস্থাপনকারী বাঙ্গালীরা! এই বাঙ্গালীদের বেশিরভাগই উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছে। এই সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে গিয়ে তারা জাতি তথা রাষ্ট্রের বৃহৎ ক্ষতিসাধন করেছে। পার্বত্য বাঙ্গালীরা আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নসহ উপজাতীয় নেতাদের গোলামী করতে গিয়ে পার্বত্য বাঙ্গালীদের ভবিষ্যত অন্ধকারে ধাবিত করেছে এবং রাষ্ট্রের অখণ্ডতা দ্বিখণ্ডিত করার চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে৷
একাধিক সমীকরণে দেখা গেছে পার্বত্য বাঙ্গালীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা ও সংকটকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনা থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সন্ত্রাসীদের চাটুকারিতায় ব্যস্ত। এই বিবেকহীন ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের বিবেক কবে জাগ্রত হবে? এখনই সময় থাকতে যদি এই বাঙ্গালীরা নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয় অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে পরবাসী হবে। মোদ্দাকথা রোহিঙ্গাদের মত ভাগ্যবরণ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে একই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা প্রথা অনুযায়ী চাকরি ও সুযোগ সুবিধা পেলে চালকের আসনে অবতীর্ণ হয় আর বাঙ্গালী ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হয়! সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও বরাদ্দ সব উপজাতি মুখী হয়। যেভাবে উপজাতীয় ধর্মী প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় সেভাবেই মসজিদ মাদ্রাসার ক্ষেত্রে করা হয়না। এখানেই বাঙ্গালীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় প্রতিটি পদেপদে। এই চরম অন্যায় ও অবিচার এবং জুলুম পার্বত্য বাঙ্গালী জনপদের সঙ্গে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। বাঙ্গালীদের মধ্যে কিছু মীরজাফর উপজাতীয়দের গোলামী করে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার মাধ্যমে বাঙ্গালীদের দমিয়ে রেখেছে৷ কেউ বাঙ্গালীর পক্ষে এবং সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বললে তাকে বিভিন্নভাবে দমন করা হয়। বর্তমানে বাঙ্গালীদের কোনঠাসা করতে এমন চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের পক্ষে যারাই কথা বলেছে তাদের প্রায় সকলেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এরা কেউ স্বজাতি দালাল কর্তৃক বা বিভিন্ন মাধ্যম কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে৷ এই তিক্ত অভিজ্ঞতা ও চরম সত্য চেপে যেতে চায়। যার কারণ, এসব স্বীকার করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনগণের মধ্যে অকৃতজ্ঞতার মানসিকতা এবং বাঙ্গালী ও সেনা বিরোধী মনোভাব কিন্তু সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের এই সক্ষমতায় পার্বত্য বাঙ্গালীরা একাধিক গ্রুপে ভেঙে অস্তিত্ব হারা হয়েছে।
ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য পার্বত্য বাঙ্গালীরা স্বজাতির বৃহৎ ক্ষতিসাধন করতে পিছপা হননা। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাঙ্গালীরাই এখন উপজাতি সন্ত্রাসীদের চাঁদা কালেকশন করে দেয় এবং সন্ত্রাসীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে দিচ্ছে৷ এখানে সুবিধাবাদী বাঙ্গালীরা থেমে নেই তারা রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যও সন্ত্রাসীদের নিকট সরবরাহ করে।
এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা এ অঞ্চল থেকে লাগাম হারাবে এবং রাষ্ট্র হারাবেই তার এক-দশমাংশ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম।