পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত পার্বত্য চট্টগ্রাম।

0
158
ছবি: কাজী মজিবর রহমান
ছবি: কাজী মজিবর রহমান

আমাদের ভূখণ্ডের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা। প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই তিন জেলার দুর্গম পাহাড়ের উপত্যকা, ঝিড়ি ঝর্ণার পাশেই বিভিন্ন উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসতি। এসকল উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসতির আড়ালেই স্থান গেরেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এদের মধ্যেই বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নব্য সৃষ্ট কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা সংক্ষেপে কেএনএফ অন্যতম। কেএনএফ’র কারনেই বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান জেলা অশান্তি ও অস্থিতিশীলতার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ-কে বাংলাদেশ সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বান্দরবানে কুকি-চিন (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত। তারা সেনাবাহিনী হত্যা, মানুষ হত্যা, অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি বাঙ্গালী জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে চলছে।

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য অসাংবিধানিক ও রাষ্ট্রদ্রোহী। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে পরিচিত সন্ত্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী রাঙ্গামাটির পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বান্দরবানের উপকণ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের ম্রো অঞ্চল হয়ে রুমা, রোয়াংছড়ি থানছি, লামা ও আলীকদম এই ৯টি উপজেলা নিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত পৃথক রাজ্য সৃষ্টি করা তাদের উদ্দেশ্য। কেএনএফ-এর দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের পৃথক পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।

কে এই নাথান বম?

কেএনএফ’র সভাপতি নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। জেএসএস-এর ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ঢাকা মহানগর শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গি ক্ষয়ারের পাশে এমএন লারমার ভাস্কর্যটির অন্যতম কারিগর তিনি। কুকি চিন জাতীয় ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি এনজিও’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি। এছাড়া কুকি চিন ভুক্ত জাতি গোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ বই সহ ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে তার। বম সম্প্রদায় থেকে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পাহাড়ে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের কারণে বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন এই নাথান বম।

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের উত্থানের পেছনে রয়েছে সেখানকার খ্রিষ্টান বম সম্প্রদায়। আর সেই বম সম্প্রদায়ের নেতা নাথান বম হলেন এই সংগঠনের প্রধান। নাথান বাই এনজিও’র নামে বিভিন্নভাবে দাতাদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসছে। এছাড়া, জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং শেল্টার দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। নিজেদের সংগঠনের শক্তিমত্তা জানান দিতেই সংগঠনটি শুরু থেকেই প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মানুষ খুন, সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত হামালার মতো জঘন্য ঘৃন্য কাজ করে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেভাবে সামনে এলো কেএনএফ’র তৎপরতাঃ

সূত্র বলছে, কুকি চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) এনজিও’র আড়ালে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা ও দেশী বিদেশী দাতাদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে নাথান। এছাড়া পাশের দেশ ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমার থেকে তাদের কাছে অস্ত্র আসতো। সেই অস্ত্র চড়া দামে পাহাড়ে অবস্থান করা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার সদস্যদের কাছে বিক্রি করতো। এছাড়া এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং থাকা খাওয়া বাবদ ২০২১ সালের শুরু থেকে মাসিক হারে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে কেএনএফ’র সদস্যরা। আর্থিক সহায়তা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি চিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র আন্দোলনের পরিকল্পনা করে তারা। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারজিয়া’র কাছে বিক্রি করা বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে কেএনএফ-এর জন্ম হলেও ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি করে। শুরুতে এর নাম ছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ‘কেএনভি’। বর্তমানে এই সশস্ত্র সংগঠনের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।

প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে ভারতের মনিপুর ও মায়ানমারের ‘চীন রাজ্যের’ সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রথম ব্যাচে শতাধিক সদস্যকে মনিপুরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। এরপর ১০০ জনকে ভারতের মনিপুর, বার্মার কারেন ও কাচিন রাজ্যে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ফিরে আসে। শুরুতে তারা নীরব থাকে। কিছু দিন পর তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের কাছে রয়েছে ভয়ংকর সব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইংয়ে তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিজোরামে অবস্থান করছে। কেএনএফ’র সশস্ত্র সদস্যদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস। এর মধ্যে এক মাস মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পর্বতের কাছাকাছি এলাকায় তাদের গোপন আস্তানা থাকলেও বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে সাদা পোশাকে ছদ্মবেশে রয়েছে কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায়। লোকালয়ে থাকলেও মাঝেঝ মাঝে তারা খুব অল্প সময়ের জন্য দ্রুত নিজেদের আস্তানায় ফিরে যায়। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মিলে কেএনএফ গঠিত। তারা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা মনে করে। একইসঙ্গে তারা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত সেটেলার মনে করে। আর এ কারণেই জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি তাদের বৈরী মনোভাব রয়েছে।

কেএনএফ’র দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পার্বত্য চট্টগ্রামের কথিত ‘কুকি চিন রাজ্য” বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ও অনুপ্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের প্রতি দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়েছে কেএনএফ। অন্যথায়, তারা দাবি আদায়ের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে নামবে বলে হুমকিও দিয়েছে। কেএনএফ বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের নানা ছবি ও ভিডিও আপলোড করে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) ও ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)- এর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী থাকলেও কেএনএফের মতো এভাবে সশস্ত্র গ্রুপের ঘোষণা দিতে দেখা যায় না। প্রশিক্ষণ এবং পাহাড়ে অবস্থানের সময় কেএনএফ’র বিভিন্ন মারনাত্রের সরঞ্জামসহ তাদের ভিডিও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে তারা জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চুক্তি করে। তবে বর্তমানে পার্বত্য জেলার জেএসএস মূল, ইউপিডিএফ মূল, জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও মগ পার্টি নামে পাঁচটি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে অশান্তি ও উত্তেজনার তৈরি হয়। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ট্রাই জংশনের কাছাকাছি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মিজোরাম রাজ্যের লংতলাই জেলার পারডা থেকে কেনএফ’র ৬ সদস্য দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয়। এরপরই আলোচনায় আসে কেএনএফ’র তৎপরতা। আটকের পর আসামীদের কাছে থাকা একটি চিঠিতে কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মির সভাপতি এবং চিফ অব স্টাফের সিল মোহরসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আরও চার জনকে আটক করা হয়।

যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:

রাঙামাটি ও বান্দারবান থেকে গ্রেফতার হওয়া কেএনএফ’র বেশ কয়েকজন সদস্য র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি বৈরী মনোভাব রয়েছে কেএনএফ’র। পার্বত্য এলাকার ৯টি উপজেলায় স্বায়ত্তশাসন এবং পৃথক রাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই সংগঠনটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে কেএনএফ’র সদস্যরা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে। তাদেরকে ধরতে পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘কেএনএফ’র প্রধান নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারীয়ার অন্যতম সদস্য শামীন মাহফুজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এক পর্যায়ে শামীম মাহফুজ এবং নাথান বমের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারদীয়ার আমির আনিসুর মাহমুদকে নাথান বমের কাছে নিয়ে যান শামীম মাহফুজ। আমির আনিসুর মাহমুদ তখন নাথান বমকে জানান যে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা আসবে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বাবদ তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে প্রতি মাসে। আর এভাবেই জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে অর্থ পেতে থাকে কেএনএফ।

পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি:

পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে রয়েছে ত্রিদেশীয় সীমান্ত। এরমধ্যেই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বীজ বপন করতে অবৈধ অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। বিগত বছরে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে এই কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর তথাকথিত অধিকারের দোহাই দিয়ে গর্জে উঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কর্তৃক নৃশংস হামলা হয়েছে। এসব হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ বাহিনী, যাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে এবং দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে সেই সেনাবাহিনীর ২জন ওয়ারেন্ট অফিসার ও ৩জন সৈনিককে হত্যা করেছে…!!

কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অরাজকতার কারণে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এই সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের সাধারণ মানুষের শান্তি ও সুখ কেড়ে নিয়েছে। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও জিম্মি করার কারণে পাহাড়ে বর্তমানে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো যাচ্ছে না। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কারণে পাহাড়ি গ্রামে মানুষ বসবাস করতে পারছে না। তারা পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অপহরণ করছে, চাঁদা দাবি করছে। যারা তাদের কথা শোনে না বা যারা চাঁদা দেয় না তারা নির্যাতিত হয়। ফলে পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষ শহরের দিকে ঝুঁকছে। গ্রামগুলোর অবস্থা এমন যে, একটি গ্রামে ৬০টি পরিবার থাকার কথা, সেখানে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ বা সর্বোচ্চ ২০টি পরিবার। বাকি পরিবারগুলো প্রাণ বাঁচাতে শহরের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে। বতর্মানে সেনাবাহিনী এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। পাহাড়ে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। কেএনএফ সহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমনে অবিলম্বে বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলা সহ তিন পার্বত্য জেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনসহ সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উদারণ হিসেবে বলতে হয়, শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর ক্ষুদ্রাকৃতির একটি দেশ। ২৬বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিলো। লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) ছিলো একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। যারা উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় হিন্দু তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমির জন্য লড়াই করেছিলো। এলটিটিই ১৯৭৫ সালের মে মাসের দিকে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যিনি ২০০৯ সালের মে মাসে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার্স পৃথিবীর একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলা সংগঠন যাদের ছিলো নিজস্ব যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, যুদ্ধ জাহাজ, হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা, ভারী ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক রণকৌশল এবং সমর্থক বিদ্রোহী জনগণ। ২৬ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১ লক্ষ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায় এবং বাসস্থান হারিয়ে নিয়ে হয়েছিলো অগণিত মানুষ। তামিল টাইগাররা লক্ষাধিক নিরীহ জনগণ হত্যার পাশাপাশি পদবীধারী যেসকল ব্যক্তিদের হত্যা করেছিলো। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি- ১জন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী- ১জন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী- ১জন, মন্ত্রী- ৭জন, সংসদ সদস্য- ৩৭জন, রাজনৈতিক দলের নেতা- ১০জন, স্থানীয় সরকারের সদস্য- ৬জন, প্রাদেশিক সভার সদস্য- ২২জন, রাজনৈতিক দলের সংগঠক- ১৭জন, মেয়র- ৪জন। এমন শক্তিশালী সশস্ত্র অবস্থান থাকার থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিলো তামিল টাইগার্সদের দমণে ব্যাপক তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান চলতে থাকে। ২০০৯ সালের মে মাসে তামিল টাইগার্সদের পুরোপুরি ঘিরে ফেলে। সবকিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ২০০৯ সালের ১৮ মে প্রভাকরণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্ত বন্যার ইতিহাস।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয়, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে আর কতো রক্ত ঝরলে, আর কতো জীবন গেলে, আর কতো মায়ের বুক খালি হলে সরকারের টনক লড়বে…!! পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের আর সুযোগ দেওয়া ভুল হবে। এখনই সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমন করার। আমরা যারা ৫৪% বাঙ্গালী

পৃষ্ঠা-০৩

ফিল হিন্দাল শারদীয়ার আমির আনিসুর মাহমুদকে নাথান বমের কাছে নিয়ে যান শামীম মাহফুজ। আমির আনিসুর মাহমুদ তখন নাথান বমকে জানান যে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা আসবে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বাবদ তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে প্রতি মাসে। আর এভাবেই জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে অর্থ পেতে থাকে কেএনএফ।

পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি:

পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে রয়েছে ত্রিদেশীয় সীমান্ত। এরমধ্যেই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বীজ বপন করতে অবৈধ অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। বিগত বছরে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে এই কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর তথাকথিত অধিকারের দোহাই দিয়ে গর্জে উঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কর্তৃক নৃশংস হামলা হয়েছে। এসব হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ বাহিনী, যাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে এবং দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে সেই সেনাবাহিনীর ২জন ওয়ারেন্ট অফিসার ও ৩জন সৈনিককে হত্যা করেছে…!!

কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অরাজকতার কারণে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এই সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের সাধারণ মানুষের শান্তি ও সুখ কেড়ে নিয়েছে। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও জিম্মি করার কারণে পাহাড়ে বর্তমানে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো যাচ্ছে না। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কারণে পাহাড়ি গ্রামে মানুষ বসবাস করতে পারছে না। তারা পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অপহরণ করছে, চাঁদা দাবি করছে। যারা তাদের কথা শোনে না বা যারা চাঁদা দেয় না তারা নির্যাতিত হয়। ফলে পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষ শহরের দিকে ঝুঁকছে। গ্রামগুলোর অবস্থা এমন যে, একটি গ্রামে ৬০টি পরিবার থাকার কথা, সেখানে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ বা সর্বোচ্চ ২০টি পরিবার। বাকি পরিবারগুলো প্রাণ বাঁচাতে শহরের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে। বতর্মানে সেনাবাহিনী এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। পাহাড়ে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। কেএনএফ সহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমনে অবিলম্বে বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলা সহ তিন পার্বত্য জেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনসহ সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উদারণ হিসেবে বলতে হয়, শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর ক্ষুদ্রাকৃতির একটি দেশ। ২৬বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিলো। লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) ছিলো একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। যারা উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় হিন্দু তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমির জন্য লড়াই করেছিলো। এলটিটিই ১৯৭৫ সালের মে মাসের দিকে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যিনি ২০০৯ সালের মে মাসে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার্স পৃথিবীর একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলা সংগঠন যাদের ছিলো নিজস্ব যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, যুদ্ধ জাহাজ, হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা, ভারী ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক রণকৌশল এবং সমর্থক বিদ্রোহী জনগণ। ২৬ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১ লক্ষ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায় এবং বাসস্থান হারিয়ে নিয়ে হয়েছিলো অগণিত মানুষ। তামিল টাইগাররা লক্ষাধিক নিরীহ জনগণ হত্যার পাশাপাশি পদবীধারী যেসকল ব্যক্তিদের হত্যা করেছিলো। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি- ১জন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী- ১জন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী- ১জন, মন্ত্রী- ৭জন, সংসদ সদস্য- ৩৭জন, রাজনৈতিক দলের নেতা- ১০জন, স্থানীয় সরকারের সদস্য- ৬জন, প্রাদেশিক সভার সদস্য- ২২জন, রাজনৈতিক দলের সংগঠক- ১৭জন, মেয়র- ৪জন। এমন শক্তিশালী সশস্ত্র অবস্থান থাকার থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিলো তামিল টাইগার্সদের দমণে ব্যাপক তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান চলতে থাকে। ২০০৯ সালের মে মাসে তামিল টাইগার্সদের পুরোপুরি ঘিরে ফেলে। সবকিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ২০০৯ সালের ১৮ মে প্রভাকরণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্ত বন্যার ইতিহাস।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয়, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে আর কতো রক্ত ঝরলে, আর কতো জীবন গেলে, আর কতো মায়ের বুক খালি হলে সরকারের টনক লড়বে…!! পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের আর সুযোগ দেওয়া ভুল হবে। এখনই সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমন করার। আমরা যারা ৫৪% বাঙ্গালী সকলের সাথে মিলেমিশে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে শত বছর যাবৎ পাহাড়ে বসবাস করে আসছি আমরা সকলেই সন্ত্রাস দমণে একমত। সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্বাধীন দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা অন্যের হাতে তুলে দিতে পারিনা। প্রয়োজনে মাতৃভূমি রক্ষার্থে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। আমরা প্রস্তুত ইনশাআল্লাহ।

প্রিয় দেশবাসী, উপরোক্ত বার্তা থেকে আপনারা অবশ্যই আঁচ করতে পেরেছেন আমরা কেউ ভালো নেই। একটি শান্তপ্রিয় জনপদকে কতোটা অশান্ত করেছে এর মাধ্যমে অনুমেয়। এই সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ যদি আমাদের সেনাবাহিনীর উপর আর কোনো আক্রমণ করে তার সমুচিত জবাব আমরা দিতে প্রস্তুত আছি।। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো, পাহাড়ি-বাঙ্গালী সবাই মিলে মিশে গণ-আন্দোলন তৈরি করবো ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা।

কাজী মোঃ মজিবর রহমান
চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম নগিরিক পরিষদ (পিসিএনপি) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।

আগের পোস্টরাঙ্গামাটি নানিয়ারচরে ভূতুড়ে বিলের অভিযোগ।
পরের পোস্টরাঙামাটি মেডিকেল কলেজে মনিরের নামে হল করার দাবি পিসিসিপি’র।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন