সম্প্রীতির বান্দরবান এখন সন্ত্রাসীদের অশান্ত।

0
82

 

রক্তাক্ত জনপদ

সম্প্রীতির বান্দরবানে রক্তের যে হোলি খেলা শুরু হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সকলকে একযুগে কাজ করতে হবে।
বিরাজমান নৈরাজ্য কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর উচিত দেশের বিরুদ্ধে নয় দেশ রক্ষায় শামিল হওয়া। তারা অন্যান্য জাতি ও সেনাবাহিনীর বিরোধিতা না করে সন্ত্রাসবাদ পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সম্প্রীতির বান্দরবান গড়তে এগিয়ে আসা উচিত। বারংবার আত্মসমর্পণ করার বার্তা প্রদান করার পরও সাধারণ মানুষ হত্যা, সেনাবাহিনী হত্যা, চাঁদাবাজি এ খুন-গুম করে একটি শান্ত জনপদকে হামলায় আহত করা সীমা লঙ্ঘন। আমরা এখনো বিশ্বাস রাখি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর বির্সজনে এখনো সাধারণ মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী আছেই বিধায়ী এখনো অখণ্ড পৃথক হয়নি। তাই চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আমাদের মাটি আর আহত করবেন না। পার্বত্যবাসীর ন্যায অধিকার আদায়ে ১৮ বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছি। দীর্ঘ সময় বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বর ছিলাম৷ এই দায়িত্বরত কালে যতটুকু পেরেছি আপনাদের কাতারে থাকার জন্য চেষ্ঠা করেছি নিজের সবটুকু দিয়ে৷ গরীব ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে শত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নেমেছি অপ্রতিরোধ্য এক সংগ্রামে। আমি প্রত্যক্ষ করেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও পাঁচ দশক ধরে চলমান সংঘাত ও সহিংসতা।

প্রিয় পার্বত্যবাসী আপনারা কমবেশি অবগত আছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা ও সংকট বিষয়ে। নতুন করে বেশি কিছু বাড়িয়ে বলতে চাইনা। দেশপ্রেমিক জনতার দৃষ্টিগোচরে শুধু এই বার্তা টুকু আপনাদের নিকট পৌছাতে চাই পার্বত্যবাসী আর ভালো নেই। অশান্তির কালো মেঘে ডেকে আছে সম্প্রীতির বান্দরবান তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলে শকুনের নজর পড়েছে। ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকা ও বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের কিছু বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাস থাকায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর থাকায় এ অঞ্চলের উপর দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী নজর পড়েছে। পাঁচদশক ধরে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি চলমান। সরকার রাজনৈতিক সমাধানের অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীর কর্ণধার দাবিদার সন্ত লারমার জেএসএস এর সাথে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামক ৭২টি ধারা সংবলিত একটি চুক্তি সম্পাদিত করে। এই চুক্তিতে উপজাতিদের সমস্ত দাবিদাওয়া সরকার মেনে নেয়। চুক্তির পরও সন্তুর লারমার চাঁদাবাজি ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বহাল রয়েছে। উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা কে কেন্দ্র করে দল-উপদল তৈরি হয়েছে। সবাই আলাদা আলাদা হলেও চাঁদাবাজি ও বাঙ্গালী এবং সেনাবাহিনীর বিষয়ে এক অভিন্ন। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কুকি চিন আর্মি সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পরবর্তীতে সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেয় এমন তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত ২০২২ সালের অক্টোবর হইতে সন্ত্রাস দমনে অভিযান অব্যাহত রাখে। তারপর থেকেই সম্প্রীতির বান্দরবান অশান্তির দাবানলে পুড়ছে। হামলার প্রধান টার্গেটে সাধারণ মানুষ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী। একের পর এক সাধারণ মানুষ ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে হত্যা করতে থাকে।

এখন সময় এসেছে সর্ব মহল ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করা এই কেএনএফ কারা কী তাদের পরিচিতি?
ভারতের মিজো রাজ্যের অধিবাসী এবং মায়ানমারের আরকান ও কাচিন রাজ্যের অধিবাসীদের বসবাস এই সম্প্রীতির বান্দরবানে। এরা প্রায় দুইশো বছর ধরে বাস করে। এরা মিজোরামে ও আরকান কাচিনে কুকি চিন বা জো জাতি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বম, খুমি, মুরুং, পাংখোয়া, লুসাইরা কিন্তু এই কুকি চিন অন্তর্ভুক্ত জনগোষ্ঠী।
একসময় এরা ব্রিটিশ শাসন আমলে চাকমা, মারমা কর্তৃক বান্দরবান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। চাকমাদের সঙ্গে কুকিদের একটা ঐতিহাসিক বিরোধ রয়েছে। এসব ইতিহাসবিদরা অকপটে স্বীকার করেন। কখনো কুকি চিন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাঙ্গালী বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ছিল না। কিছু গোষ্ঠী ইন্ধন দিয়ে কুকি চিন জনগোষ্ঠীর একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গেরিলা দলকে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। এই লেলিয়ে দেওয়ার পেছনে লুকিয়ে আছে দেশভাগের গভীর এক ষড়যন্ত্র। এই কুকিরা আবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং কিছুসংখ্যক দেব দেবীর পুজারি। সবচেয়ে পরিতাপের যে বিষয় সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র চলমান। এনজিও, আইএনজি, মিশনারী ও দাতাসংস্থাগুলোর মূলক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক করে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন করার৷ মূলত তারই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করার জন্য ইন্ধন যোগাচ্ছেন। কুকি চিন জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা উগ্রবাদী এবং ভারতে ও মায়ানমারে অবস্থান আছে তাদের একটি অংশকে অর্থ, কূটনীতিক ও বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে রয়েছে ত্রিদেশীয় সীমান্ত। এরমধ্যেই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো এসুযোগ কে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বীজ বপন করতে অবৈধ অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। বিগত বছরে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে এই কুকি চিন জনগোষ্ঠীর তথাকথিত অধিকারের দোহাই দিয়ে গর্জে উঠা কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কর্তৃক নৃশংস হামলা হয়েছে। এসব হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ বাহিনী, যাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে এবং দেশের জন্য জীবন বাজি রাখতে বিসর্জন দিতে পারে সেই সেনাবাহিনীর ৩ জন সৈনিককে হত্যা করেছে!

প্রিয় শান্তিপ্রিয় পার্বত্যবাসী উপরোক্ত বার্তা থেকে আপনারা অবশ্যই আঁচ করতে পেরেছেন আমরা কেউ ভালো নেই। একটি শান্তপ্রিয় জনপদকে কতটা অশান্ত করেছে এর মাধ্যমে অনুমেয়। এই সন্ত্রাসবাদী কেএনএফ যদি আমাদের সেনাবাহিনীর উপর আর কোনো আক্রমণ করে তার সমুচিত জবাব আমরা পার্বত্যবাসী দেব। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো৷ পাহাড়ি-বাঙ্গালী মিলে মিশে গণ-আন্দোলন তৈরি করবো। এই অশুভ শক্তি মোকাবেলায় আমাদের সেনাবাহিনী যথেষ্ট। যদি একবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় পাহাড়-পর্বত, গিরি,ঝিরি-ঝর্ণা বা সীমান্ত এলাকা যেখানে থাকুক সেখান থেকে খুঁজে বের করা হবে এবং বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে। আমরা কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বলতে চায় আর কোন পর্যটক, সাধারণ মানুষ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর যদি হামলা হয় আপনাদের পরিণতি খারাপ থেকে খারাপ হবে। আমাদেরকে আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করবেন না।

 

আগের পোস্টকেএনএফ খ্রিস্টান কমিউনিটিকে ব্যবহার করে আলাদা কুকিল্যান্ড গঠনের পায়তারা করছে। 
পরের পোস্টসাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় কেএনএফ বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন