পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের বিরাজমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকার তৎকালীন ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর এ অঞ্চলের উপজাতীয়দের পক্ষে তথাকথিত নেতা দাবিদার পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্ত লারমার সাথে একটি চুক্তি সম্পাদিত করে।
এই চুক্তিতে ৭২টি ধারা রয়েছে। সরকারের পক্ষ হইতে বিশেষ কোনো শর্ত ছিল না। সরকার জেএসএস সন্তুর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এনে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও এ উপজাতীয়দের অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে তাদের সকল দাবিদাওয়া মেনে নেয়। চুক্তির মধ্যে সরকারের পক্ষে শুধুমাত্র ২টি শর্ত ছিল। প্রথম শর্ত হচ্ছে-সবধরনের অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে-সন্ত্রাসী পথ ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে৷ সন্তু লারমা সরকারের এই দুটি শর্তের কোনোটিই পূরণ করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার ও উপধারাসহ সর্বমোট ৯৯ টির মধ্যে সরকার ৬৯ টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত করেছে,১৫ টি ধারা দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন করেছে এবং বাকী ১৫ টি ধারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুফল পাহাড়ী জনসাধারণ ভোগ করছে৷ এই চুক্তিতে বাঙ্গালীদের অধিকারের কথা বলা হয়নি৷ একপেশে এই চুক্তি করা হয়েছে৷ পাহাড়িদের অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দিয়ে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে৷ যার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। চুক্তির অধিকাংশ ধারা-উপধারা সংবিধান পরিপন্থী। এই কারণে চুক্তি সংশোধন আন্দোলন তীব্র হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি জনসাধারণের তথাকথিত নেতা দাবিদার সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। চুক্তির শর্ত অনুরূপ সন্তু লারমা সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি এবং রাষ্ট্রের উপর আনুগত্য স্বীকার করেনি। সন্তু লারমা বরাবরই সরকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। চুক্তির অন্তরালে সন্তু লারমার শক্তিসাধন করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থেকে দেশভাগের ষড়যন্ত্র করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ এমনহারে বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ পার্বত্যবাসী আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও গুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ ও সারি সারিই লাশ পাহাড়ের আকাশ বাতাস ভারী। পার্বত্য চুক্তির ২৬টি বছর পরও পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আসেনি৷ অবৈধ অস্ত্রের কাছে মানুষ অসহায়। নিরাপত্তাহীনতায় পার্বত্যবাসী।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যেটা লক্ষনীয় সেটা হচ্ছে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেএসএস ভেঙে ৪/৫টি দল-উপদল সৃষ্টি হয়েছে। এই সন্ত্রাসী দলগুলো পার্বত্যবাসী থেকেই চাঁদা তুলে ভারী অস্ত্র ক্রয় করছে। এই অস্ত্র শক্তি ব্যবহার করে খুন-গুম, ধর্ষণ ও রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে।
উপরোক্ত সমস্যাদি সমাধানে সরকারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা বাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধিসহ পার্বত্য চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সংশোধন করা জরুরী।