বিগত কয়েকবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে সাংগঠনিক রক্ষার জন্য নারীদের ব্যবহার করে আসছে। বিগত বছরগুলোতে নির্বাহী প্রশাসন, সেনা, পুলিশ ও বিজিবি’র উপর যতগুলো হামলা হয়েছে সবগুলোতে নারীদের সামনের সারিতে দেখা গেছে। সন্ত্রাসীরা নারীদের ব্যবহার করে সাংগঠনিক রক্ষার চেষ্টা করছে এবং অর্থ সংগ্রহ করছে। ইউপিডিএফ প্রসিত বিকাশ খীসা গ্রুপ ও জেএসএস সন্তু গ্রুপ চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম করে যখন কাঠগড়ার সম্মুখীন তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হতে রক্ষা পেতে কৌশলে সংগঠনে এবং তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে নারীদের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক চালিকাশক্তির প্রধান উৎস অর্থ। এই অর্থ সংগ্রহ করতে তারা মানুষ থেকে চাঁদা আদায় করে, গাঁজা চাষ করে, চোলাই মদ তৈরি করে, সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারকারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে এবং অবৈধ কাঠ, বাঁশ সহ আরো অনেক কিছু উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদের এসব অপরাধমূলক কাজে পুরুষ উপজাতিরা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও রক্ষা করার জন্য উগ্র নারীদের ব্যবহার করেন, আঞ্চলিক সন্ত্রাসীরা। প্রশাসন,
সেনা,পুলিশ ও বিজিবি’র উপর হামলা যতগুলো হয়েছে সবগুলোতে নারীদের ব্যবহার করে পুরুষ অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে।
আমরা যদি বিগত কয়েকবছরের উল্লেখযোগ্য হামলা গুলোর তথ্য ঘেটে দেখি তাহলে আমাদের কারো বুঝতে অসুবিধা হবে না, যে পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মোকাবিলা করতে তারা নারীদের কিভাবে লেলিয়ে দিচ্ছে!
আমরা ফিরে যাই ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে।
নানিয়ারচর বগাছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। এই হামলায় বাঙ্গালীরা ইউপিডিএফ কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঙ্গালীদের শতশত একর আনারস বাগান কেটে দেওয়া হয় ইউপিডিএফ কর্তৃক। পরবর্তীতে এই ঘটনা সাম্প্রদায়িক ঘটনার রূপ নেয়। ঢাকা থেকে একটি মানবাধিকার কমিশন পরিদর্শনে আসে। প্রশাসনের পক্ষ হইতে উপস্থিত ছিলেন নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ‘ইউএনও’ নুরুজ্জামান। যাকে উপজাতি নারী কাজলী ত্রিপুরা হামলা করে এবং ঘেরাও করা সহ অশালীন ভাষা গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে হুমকির ভয়ে ইউএনও নানিয়ারচর ত্যাগ করেন। এই ইউএনও’র উপর হামলা করতে কাজলী ত্রিপুরাকে আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ প্রসীত বিকাশ খীসা গ্রুপ লেলিয়ে দেয়।
গত ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী ২ লাখ টাকা চাঁদা সহ রাঙ্গামাটি রাঙ্গাপানি থেকে এক জেএসএস সন্তু গ্রুপের চাঁদা কালেক্টরকে আটক করে। পরবর্তীতে জেএসএস সন্তু গ্রুপ উগ্র উপজাতি লাভলী চাকমার নেতৃত্বে একটি নারী দলকে লেলিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে।
মানবতার সেবক সেনাবাহিনী সেদিন নারীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে হামলার পরেও পাল্টা হামলা করেন নি। যার কারণে সেসময় সেনাবাহিনী প্রশংসায় পঞ্চ মুখরিত হয়। উপজাতি উগ্র নারীদের হিংসতা এবং সন্ত্রাসী মনোভাব প্রকাশ পায়। এবং জেএসএস এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সাংগঠনিক রক্ষায় নারীদের ব্যবহার উন্মোচিত হয়। তাদের অর্থ সংগ্রহে নিরাপত্তা বাহিনী সহ যে কোন বাহিনী বাধা প্রধান করলে তারা নারীদের ব্যবহার করে। পরবর্তীতে এসব ঘটনাকে ইস্যু করে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কূটনীতিক মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য উত্থাপন করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২০১৯ সালে খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর এলাকা কোনপ্রকার পূর্বানুমতি ছাড়া ইউপিডিএফ প্রসিত সন্ত্রাসী সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতৃত্বে রাষ্ট্র, সেনা ও বাঙ্গালী বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের মূল সড়কে বের হতে দেয়নি।
পরবর্তীতে দেখা গেছে, ইউপিডিএফ এর নির্দেশে কিশোরী মেয়ে এবং উগ্র নারীরা পুলিশের উপর হামলা করে এবং পুলিশকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে। ঠিক একই বছর খাগড়াছড়ি সদরে ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মন্টি চাকমার নেতৃত্বে উগ্র নারীরা সেনা, পুলিশ ও বিজিবি’র উপর আক্রমণ সহ অসভ্য ভাষা-ব্যবহার করে। যা কাম্য ছিল না।
খাগড়াছড়ি সদরে পুলিশের উপর ২০২০ সালে হামলা করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। সমস্ত খাগড়াছড়ি ইউপিডিএফ এর নারী সংগঠনের তান্ডবে রণক্ষেত্রের পরিণত হয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি পুজগাং এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বিজিবি ১২ লাখ টাকাসহ কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেল সহ এক উপজাতি যুবককে আটক করে। পরবর্তীতে আটককৃত উপজাতি উগ্র যুবককে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করতে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ এর ইন্ধনে কয়েক শতাধিক উগ্র উপজাতি নারী বিজিবি’র গাড়ি গতিরোধ করে হামলা চালিয়ে টাকা ও আসামীকে ছিনিয়ে নেয়।
উগ্র নারীরা যেভাবে বিজিবি সদস্যের উপর হামলা করেছিল, তা ছিল নিন্দনীয় এবং অন্যায় ও উস্কানিমূলক। বিজিবি নারীদের সম্মানে কোনপ্রকার পাল্টা আক্রমণ করেনি। পরবর্তীতে এই হামলার ভিডিও করে সন্ত্রাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বৈরী আচরণ করে।
আমাদের দেশের গর্বীত সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ মোটেও দূর্বল নয়, তাঁরা অত্যান্ত চৌকস এবং বিচক্ষণ।
তাঁরা বরাবরই ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে সবকিছু মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। এইটাকে যদি সন্ত্রাসীরা দূর্বলতা মনে করে তাহলে এটা মস্ত ভূল। এসব দেশদ্রোহী ও উগ্র সন্ত্রাসীদের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কঠিন কিছু নয়। আমাদের দেশের সরকার, প্রশাসন, বাহিনী সর্বদা পাহাড়ে শান্তি চায়। তাই বারংবার তাগিদ দিয়ে আসছে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি করার জন্য।