কেএনএফ এর উত্থাপিত দাবিসমূহ সংবিধানের আলোকে বিচার্য অত্যাবশ্যক।

0

প্রথম ধাপে বৈঠকের পর কয়েকমাস বিরতিতে কেএনএফের সাথে শান্তি কমিটির দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক সমাপ্ত হয়েছে। কেএনএফ এর উত্থাপিত দাবিগুলো গ্রহণযোগ্য ও আইনসম্মত কীনা সংবিধানের আলোকে বিচার্য। আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখতে পায় অনেক সময় চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পূর্বে দাবিদাওয়া গুলো বিচার-বিশ্লেষণ, খণ্ডন এবং তার ভবিষ্যত পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে আলোকপাত না করার কারণে পরবর্তীতে চুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক ফাটল সৃষ্টিসহ আইনগত নানা জটিলতা তৈরি হয়।

তাই বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সঙ্গে শান্তি কমিটির চুক্তির দাবিগুলো নিয়ে উভয় পক্ষের বিচার-বিশ্লেষণ যেমন প্রয়োজন তেমনি অগ্রহণযোগ্য দাবিদাওয়া যুক্ত থেকে উভয় পক্ষকে সর্তক থাকতে হবে।

তার আগে কেএনএফ এর পটভূমি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি-
কেএনএফ ২০০৮ সালে সামাজিক বা সেচ্ছাসেবী সংগঠন কেএনডি হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে কেএনএফ নাম ধারণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ৯টি উপজেলাকে নিজেদের ভূমি দাবি করে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে কুকিল্যাণ্ডে পরিণত করতে সশস্ত্র গেরিলা জীবন বেছে নেয়৷ গোপনে কাচিন বিদ্রোহী থেকে প্রশিক্ষণ ও ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করার পর বান্দরবান জেলার রুমা-থানচি ও রোয়াংছড়ির গহীন অরণ্যে কার্যক্রম শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তৎপরতা তাদের দেশদ্রোহী ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ড উন্মোচিত হয়।

কেএনএফ এর অরাজকতার একপর্যায়ে রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সাধারণ মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাষ্ট্র সশস্ত্র উপায়ের পরবর্তীতে তাদের সমস্যা নিরসন ও যৌক্তিক অধিকার বিষয়ে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের জন্য পথ খুলে দেয়। তারই আলোকে শান্তি কমিটি কেএনএফ এর শীর্ষ পর্যাযের নেতাদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়। সে অনুযায়ী তাদের মধ্যে দুই ধাপে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে বৈঠকে ৪টি প্রস্তাব ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫-ই মার্চ ৭টি প্রস্তাব উত্থাপিত করে। এর মধ্যে ৭টি প্রস্তাব গৃহিত হয় এবং বাকী প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা চলমান। বৈঠকে কেএনএফ এর দাবিগুলোর সুস্পষ্ট বিষয় ও অর্জন বিস্তারিত জানা না গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ কেএনএফ কাছে দাবি করছে, তাদের দাবিগুলো যেনো সংবিধান ও আইনসম্মত হয়। দাবিগুলো বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী নয় এমন সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে উভয় পক্ষ চুক্তিতে উপনীত হবে বলে বিশ্বাস।

কেএনএফ এর প্রতিটি দাবি যেনো সুস্পষ্ট হয়; মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বিচ্ছিন্নবাদের সশস্ত্র জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসারপর তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি যেনো চুক্তির বেসিক হয়। এই বিষয় বা দাবিগুলো আলোচনার যেমন দাবি রাখে তেমনি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এর বাহিরে কেএনএফ দাবিদাওয়া উত্থাপিত করলে তা সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার্য অত্যাবশ্যক।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩ টি জাতিসত্তার বসবাস৷ তাদের অধিকার, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সর্বোপুরি অবস্থানের প্রতি সম্মান রেখে আরেকটি চুক্তিতে উপনীত হতে হবে। তাই অগ্রহণযোগ্য দাবিদাওয়া যেনো কারো অধিকার বা মানসম্মানে আঘাত না আসে সেটিও বিবেচ্য বিষয়। কেএনএফ এর কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠী বড় জোরে ত্রিশের কাছাকাছি। কেএনএফ এ বেশিরভাগ সদস্য বম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে। তাদের সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি নয়। তাই তাদের দাবিদাওয়া গুলো কতটুকু হওয়া উচিত এবং প্রাপ্য কতটুকু তা চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিচার- বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

একটি চুক্তি যেনো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের জন্য কোন কালে বাধা- প্রতিবান্ধকতা তৈরি না করে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। কেএনএফ তথা কুকিভুক্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গুলো তাদের ন্যায দাবি উত্থাপিত করার মধ্য দিয়ে চুক্তির মাধ্যমে আদায় করে নিলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। বরং তাদের এই দাবিকে সবাই সম্মান জানানোসহ তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় যথাযথ পদক্ষেপ এবং তাদের অংশগ্রহণ কে সাধুবাদ জানাচ্ছে। সেসাথে চলমান শান্তি আলোচনা অব্যাহত রেখে দুই পক্ষ চুড়ান্ত পর্বে পৌঁছে উক্ত অঞ্চলের শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষা করবে বলে আশাবাদী।

আগের পোস্টসার্বভৌমত্ব ও সংবিধান বজায় রেখেই কেএনএফ দাবিদাওয়া উত্থাপন করা উচিত।
পরের পোস্টচবিতে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের ‘হেল্প ডেস্ক’।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন