জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের উপজাতি শিক্ষার্থী কাওইন কেইন এর বিরুদ্ধে ইসলামের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্টের কমেন্টে তিনি মুহাম্মদ (স)কে নিয়ে কটুক্তি করেন।
মুহূর্তের মধ্যেই এ মন্তব্যের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা যায়, বুদ্ধিস্ট প্রোভার্ড ‘(Buddhist Proverd)’ নামক ফেসবুক পেজের একটি ভিডিও নিজের প্রোফাইলে শেয়ার দেন মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এডিশন দেওয়ান। শেয়ারকৃত ওই ভিডিও পোস্টের কমেন্টে কাওয়িং কেইন মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যে হা হা রিয়েক্ট ও স্টিকার কমেন্ট করেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এডিশন দেওয়ান।
এছাড়াও তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আরও বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে ধর্মীয় কটুক্তি ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘Buddhist Proverd’ নামক সেই পেইজে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, বুদ্ধ ধর্মের ধর্মগুরু গৌতম বুদ্ধের জীবনী সম্পর্কে একজন ইসলামী বক্তার আলোচনা শেয়ার করা হয়। ঐ ইসলামী বক্তা বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক উৎপত্তি ও গৌতম বুদ্ধের অবদান ব্যাখ্যা করেন। ভিডিওটির কোন অংশেই গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে কোন বিরূপ বক্তব্য লক্ষ্য করা যায় নি। সেই পোস্টে ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন জবি শিক্ষার্থী কাওয়িং কেইন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরুর পর কাওয়িং কেইন সেই বিতর্কিত মন্তব্য মুছে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর এডিশন দেওয়ানও তার পোস্ট মুছে ফেলেন।
এ বিষযে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলীল বলেন, এই দুই শিক্ষার্থী শুধু এবার নয়, তারা নিয়মিত ইসলামকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে৷ আবার তারা সমস্যায় পড়লে বা আলোচনায় আসলে নামমাত্র ক্ষমা চাচ্ছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা তাদের এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সালেম হোসেন সিয়াম বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের কলিজার টুকরা, হৃদয়ের স্পন্দন। তাঁকে নিয়ে কেউ কোন কটুবাক্য উচ্চারন করায় মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এত বড় অন্যায় ও দুঃসাহসিক কাজ করায় প্রশাসনের জড়িতদের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোশফিকুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, মহানবী (সা) আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। নবীকে নিয়ে কেউ কুরুচিপূর্ণ কথা বললে সেটার জওয়াব যথাযথভাবে দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। যেভাবে তুমি নবীকে নিয়ে জনসম্মুখে কটুক্তি করেছো, সেভাবে তুমি ক্ষমা চাও। অন্যথায় আমরা এটার কঠিন জবাব দিতে প্রস্তুত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাওয়িং কেইন বলেন, হুজুর আমাদের গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে কথা বলছে। মার্কেটিং বিভাগের এক ফ্রেন্ড ভিডিওটি শেয়ার দিয়েছে। আমি ঐ পোস্টের কমেন্টে বক্সে হুজুরকে উদ্দেশ্য করে গালি দিয়েছি; ধর্মকে লক্ষ্য করে না। ধর্মকে নিয়ে গালি দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। ‘মোহাম্মদ’ ইসলাম ধর্মের নবী বা কিছু ; এ ব্যাপারে আমি জানতাম না। আমি সেই হুজুরের নামও জানতাম না।
হুজুরের নাম না জানা স্বত্ত্বেও ‘মোহাম্মদ’ শব্দ উল্লেখ করে এমন কটুক্তি কারণ জানতে চাইলে কেইন বলেন, আমি দেখেছি মুসলমানদের নামের প্রথমে মোহাম্মদ থাকে। তাই হুজুরের নামের প্রথমে ‘মোহাম্মদ’ থাকতে পারে বলে ‘মোহাম্মদ’ লিখেছি।
অপর অভিযুক্ত এডিশন দেওয়ান বলেন, আমি হুজুরের নাম জানতে চেয়ে পোস্টটি শেয়ার দিয়েছি। কেইনের কমেন্টে খারাপ লাগছে। খারাপ লাগা থেকে আমি হা হা রিয়েক্ট ও স্টিকার কমেন্ট করেছি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে বিষয়টি কথা বলছি। এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগপত্র পেলে ব্যবস্থা নিবো। এটি খুব নিম্নমানের মন্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে এই ধরনের মন্তব্য আশা করি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের একটি অংশ ইসলাম ধর্ম এবং তার নবী রাসুল নিয়ে প্রায়শ্চই কটুক্তি করে। উপজাতিরা পাহাড়ে কটুক্তি করে এতোদিন সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সমতল গিয়েও করছে। প্রশাসনের নতজানু নীতি এবং উপজাতিদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদাসীন হওয়ার কারণে উগ্রবাদীরা দিনদিন বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং কটুক্তি করে যাচ্ছে। যা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। এখনই সময় এই উপজাতিদের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার।