নেতৃত্বের অনাস্থায় কেএনএফে ভাঙ্গন, নাথান বম ও সলোমন দ্বন্ধে প্রাণ হারাচ্ছে মাঠ কর্মীরা!

0

||জিহান মোবারক, পার্বত্য চট্টগ্রাম||

চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত পাহাড়ের আলেচিত সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনটি ইতোমধ্যে দেশবাসীর কাছে রাষ্ট্র বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে৷ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্র, বাঙ্গালী ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে৷ যার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ পাহাড়ীদের কাছে সংগঠনটি ঘৃণার পাত্র। কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য চাঁদাবাজি ও অপহরণ বাণিজ্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা পৃথক করে একটি স্বশাসিত কুকিল্যাণ্ড কিংবা আলাদা রাষ্ট্র গঠন। তাদের এমন কর্মকাণ্ড এবং অসাংবিধানিক দাবিদাওয়া এ অঞ্চলের অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার, ভাষা-সংস্কৃতি এবং চুক্তি ও যাবতীয় কার্যক্রম লঙ্ঘিত। এরফলে তারা পাহাড়ি কিংবা উপজাতি সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠী পর্যন্ত তাদের নানা অপকর্মের কারণে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দিনদিন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে মানুষ থেকেই। একটি সংগঠন টিকে থাকার যে ভিত্তি প্রয়োজন তার সব হারিয়েছে কেএনএফ।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, অধিকারের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করার জন্য অস্ত্রবাজি অপহরণ ও খুন-গুমের সঙ্গে জড়িয়ে যায় কেএনএফ৷ সাধারণ পাহাড়ীদের থেকে উত্তোলিত বিপুলপরিমাণ চাঁদার অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম ও মিডিয়া উইং কর্ণেল সলোমন এর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এই দ্বন্দ্বে নেতৃত্বের প্রতি তীব্র অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাঠ কর্মীদের মধ্যে৷ বর্তমানে সংগঠনটি দুইভাবে বিভক্ত। ধারণা করা হয় অচিরেই আরো একাধিক গ্রুপে বিভক্ত সৃষ্টি হতে পারে।

মিডিয়া উইং কর্ণেল সলোমন কর্মীদের অভিযোগ- নাথান বম চাঁদার ৭০% ভাগ চান। সে মিজোরামে অবস্থান করে এই চাঁদার বিপুলপরিমাণ অর্থ নিজে আত্মসাৎ করতে মরিয়া। পক্ষান্তরে সলোমন ৩০% পাচ্ছে। তা নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি। নাথাম বম বিদেশে অবস্থান করায় নেতৃত্বের মূল দ্বায়িত্ব নিতে চান সলোমন। তা নিয়ে বিরোধ চরম আকারে ধারণ করেছে।

এদিকে চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা জের ধরে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছে মাঠ কর্মীদের মধ্যে। এর জের ধরে কয়েকদিন ব্যবধানে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। এই অনাস্থা বা দ্বন্দ্ব এতোদিন ধরে গোপন থাকলেও বর্তমানে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। যার পরিণতিতে একাংশ অপরাংশের সমর্থক কর্মীদের বেছে বেছে হত্যা করছে। নাথান বমের কর্মীরা সলোমন কর্মীদের উপর কিলিং মিশনে নেমেছে।

কেএনএফ এর মধ্যে এই ভাঙ্গনের সুর এবং কর্মী নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত সংগঠনটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেএনএফ যে চাঁদাবাজি করার জন্য জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছে এখন তা সাধারণ পাহাড়ীদের কাছে স্পষ্ট। কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠী ইতোমধ্যে কেএনএফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নেতৃত্বের অনাস্থায় দলীয় কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সূত্রের তথ্য মতে কেএনএফ ছাড়তে মুখিয়ে আছে মাঠ কর্মীরা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More