বরকলে মানুষকে জিম্মি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে জেএসএস।

0

জয় দাশ, চট্টগ্রাম: আগামী ৮ই মে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলা নির্বাচনে জেএসএস সন্তুর প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক এই দলটি।
জনসংহতি সমিতি সন্তু দল সমর্থিত বিধান চাকমা দোয়াত কলম নিয়ে নির্বাচন করছেন, তাকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে সব রকমের অপকৌশল ব্যবহার করছে তারা। এর মধ্যে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে জোর করে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে। এজন্য বরকল উপজেলার প্রতিটি গ্রামের প্রতি ঘরের একজনকে ডেকে নিয়ে পাড়া প্রধানের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছে জেএসএসের সশস্ত্র অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। তারা বলে দিয়েছে প্রতিটি ঘরের সদস্যদের ভোট বিধান চাকমার দোয়াত কলম মার্কাতে দিতে হবে, যদি ভোটের পরে জানতে পারে কোন গ্রাম থেকে ভোট কম পড়েছে তাদের প্রার্থীর পক্ষে, তাহলে সেই গ্রামের লোকদের এলাকায় থাকতে দিবে না এবং জরিমানা করা হবে। এভাবে হুমকি প্রদান করে এক প্রকার জোর করে ভোট আদায় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেএসএস সন্তুর দল।

অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সন্তোষ চাকমার ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া এবং কর্মীদের কাছ থেকে পোস্টার ও ব্যানার কেড়ে নিচ্ছে জেএসএস সন্তুর সন্ত্রাসীরা, এদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্তোষ চাকমার কর্মীদের কাছ থেকে পোস্টার ও ব্যানার কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় বরকল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মো. আবুল কালাম। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৬ এপ্রিল বরকল উপজেলার বড়হরিণা ইউনিয়নের কুকিছড়া বাজারে পোস্টার ও ব্যানার লাগানোর পর বিধান চাকমার পক্ষের সন্ত্রাসীরা সেগুলো ছিঁড়ে দেয়। এ ছাড়া খুব্বাং এলাকায় আমাদের কর্মীদের কাছ থেকে সন্তোষ কুমার চাকমার আনারস প্রতীকের ব্যানার ও পোস্টার কেড়ে নিয়েছে কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিধান চাকমার লোক।
একদিকে নিজেদের প্রার্থী বিধান চাকমাকে জয়ী করতে এলাকায় মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সন্তোষ চাকমার আনারস প্রতীকের প্রচারণা চালতে বাঁধা দিচ্ছে এই জেএসএস সন্তু।

তারা তাদের প্রার্থীর বিধান চাকমার জয় ১০০ শত ভাগ নিশ্চিত করতে রাঙামাটির যেসব উপজেলায় ভোট হচ্ছে না সেখান থেকে তাদের সশস্ত্র ক্যাডারদের বরকলে নিয়ে আসছে, যে সব ভোটাররা লেখাপড়া, চাকরি বা বিভিন্ন কারণে এলাকার বাহিরে অবস্থান করছে, তাদের ভোট গুলো জেএসএসের ক্যাডাররা দিয়ে দিবে এমন পরিকল্পনা করে রেখেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সিমান্তের ওপার থেকে লোকজন নিয়ে এসে ভোট দেওয়ানোর অপকৌশল করে রেখেছে তারা। তাই বরকলের সচেতন মহল দাবি জানিয়েছে এনআইডি কার্ড সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করে যাতে ভোট নেওয়া হয়।
বরকলের তরুণ ভোটাররা বলেন, এক কথায় ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করার সকল অপচেষ্টা করবে জেএসএস, তাই প্রশাসনকে সর্তক থাকতে হবে, কোন ভাবেই যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে জেএসএস সন্তু দলের সন্ত্রাসীরা।

বরকলে নিজেদের প্রার্থী বিধান চাকমাকে জয়ী করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসাতে কেন এত মরিয়া জেএসএস সন্তু দল?
এর কারণ জেএসএস সন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বছরে ৯০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে এর বেশীরভাগ আসে এই বরকল রুট দিয়ে। বরকলে কাঠের ব্যবসা, মাছের ব্যবসা, তামাকের ব্যবসা এসকল ব্যবসায়ী ও বোট চালকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায় করে তারা। এই চাঁদার টাকা দিয়ে ভারী অবৈধ অস্ত্র কিনছে এবং এই চাঁদার টাকার একটি অংশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, তারা দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক-দশমাংশ অঞ্চল, এই অঞ্চলকে আলাদা করে জুম্মলেন্ড নামক আলাদা রাষ্ট্র বানাতে তৎপর এই জেএসএস সন্তু দল। পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র বানানোর জন্য তাদের আন্তর্জাতিক লবিং করতে ও সশস্ত্র অবস্থান সক্রিয় রাখতে চাঁদার টাকার সিংহ ভাগ এই খাতে খরচ করছে।
এই সশস্ত্র অবস্থান সক্রিয় রাখতে জেএসএস সন্তুর সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং এর জন্য বরকল রুটটি ব্যবহার করে সিমান্তের ওপারে গিয়ে ট্রেনিং করে আবার এপারে চলে আসে বরকল রুটটি ব্যবহার করে।
এছাড়াও রাঙামাটির দশ উপজেলায় যে কোন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে নিরাপদে পালিয়ে যেতেও বরকল উপজেলার রুটটি ব্যবহার করে জেএসএস সন্তু দলটি। তাই তারা এত বেশী মরিয়া হয়ে উঠেছে চেয়ারম্যান পদটি দখল করতে। কারণ চেয়ারম্যান পদে তাদের নিজেদের দলের লোক থাকলে সকল ধরণের অপকর্ম করতে সুবিধা হবে। এসব অপকর্ম অন্যায় এলাকায় চালালে পাহাড় সব সময় থাকবে অশান্ত।

তাই এখন তরুণ ভোটারদের চাওয়া কোন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল থেকে কেউ চেয়ারম্যান না হোক। জেএসএস সন্তু কখনোই পাহাড়ে উন্নয়ন চায় না, বরকল উপজেলায় রাস্তা ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, কলেজের কাজ করতে গেলে এই জেএসএসের সন্ত্রাসীরা বিরোধিতা করতো, বাঁধা দিতো। কারণ এতে করে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালু রাখতে সুবিধা, যদি এলাকার তরুণরা শিক্ষিত হয়, উন্নয়নের ছোয়া পায় তাহলে তাদের দলের সাথে থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে থাকবে না। তাই ভোটারদের আশংকা যদি জেএসএসের প্রার্থী চেয়ারম্যান হয় তাহলে কোন উন্নয়নই হবে না পুরো বরকল এলাকাটিকে অন্ধকারে রাখবে।

স্থানীয়রা মতে, জেএসএস সন্তুর সশস্ত্র ক্যাডার, পিসিপি ও পাড়া কমিটি সকলে মিলে একসাথে কাজ করছে তাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে এক্ষেত্রে তারা জনগণের কাছে ভোট চায় না, তারা ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক ভোট আদায় করতে চায়।

জেএসএস সন্তুর ক্যাডাররা জনগণের ঘাম ঝরানো সম্পদ জোর করে ভোগ করে জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে, জনগণের ইনকামের টাকার সিংহভাগ জোর পূর্বক চাঁদা হিসেবে নিয়ে নিচ্ছে, এটাকে তারা মনে করছে এটাই তাদের বৈধ অধিকার।
কোনটা তাদের অধিকার কোনটা তাদের অধিকার নয় এই হিতাহিত জ্ঞানও তাদের মধ্যে নেই। এতেই বুঝা যায় এই জেএসএস সন্তু দলের লোকজন কোন মানুষের কাতারে পড়ে না।

তাদের ভিতর যেহেতু কোন মনুষ্যত্ব নেই তাই পাহাড়ের সকল সচেতন পাহাড়ী-বাঙালিদের এক হয়ে এই জেএসএস সন্তু নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠে তাদের অন্যায় কর্মকান্ড রুখে দিতে হবে, কেন স্বাধীন দেশে একটা অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠনের হাতে জিম্মি থাকতে হবে! কেন নিজের ঘাম ঝড়ানো ইনকামের টাকা থেকে চাঁদা দিতে হবে, কেন তাদের ভয়ে আতংক নিয়ে চলাফেরা করতে হবে? তাই এখনি সময় এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএসএস সন্তু দলের ডালপালা বাড়তে না পারে সেজন্য সচেতন থাকা, ঐক্যবদ্ধ থাকা।

আগের পোস্টনিজ জাতির কিছু লোকের ব্রেন ওয়াসে ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাই করে নিজেদের যুবকদের সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কেএনএফ।
পরের পোস্টপ্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে প্রেস বিবৃতি দিলো বরকলের সন্তোষ চাকমা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন